ভাঙা রাস্তার দু’ধারে ডাঁই করা পাথর, বালি, মাটি। রাস্তা সারানো হবে, তারই আয়োজন। যদিও বছরের পর বছর কাটলেও এই আশ্বাসের কোনও খামতি নেই। কিন্তু রাস্তা যে কবে সারানোর হবে তার জবাব মেলে না। ভাঙাচোরা রাস্তার জন্য ভাড়া গাড়ির চালকেরাও সহজে এ পথ মাড়াতে চান না। চাইলেও তিনগুণ বেশি ভাড়া হাঁকেন।
দৈন্যদশার জন্য বহু চর্চিত এই রাস্তার নাম কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে। ব্যারাকপুর ও কল্যাণী, দুই শিল্পাঞ্চলের মধ্যে সংযোগকারী ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক ব্যবহার করে কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গগামী বেশিরভাগ ট্রাক ও ট্রেলার। ভারী যান চলাচলের কথা ভেবেই এই এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হলেও উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কঙ্কালসার চেহারা হয়েছে খুব অল্পদিনের মধ্যেই। কেএমডিএ’র তত্ত্বাবধানে থাকা এই সড়কে তিন জায়গায় টোল আদায় হয় ২৪ ঘন্টা। কিন্তু খারাপ রাস্তার কারণে টোল দেওয়া নিয়ে তীব্র যানচালকেরা তীব্র আপত্তি জানালেও তা নিয়ে কারও মাথাব্যাথা নেই। ফলে ওই ভাবেই চলছে। |
বিষয়টি সাধারণের গা সওয়া হলেও গত তিন বছরে এই সড়কে টোল আদায় নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর কম হয়নি। টোল আদায়ের বৈধতা নিয়ে পথ অবরোধ করে, প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে বাম জমানায় সোচ্চার হয়েছিল কংগ্রেস ও তৃণমূল। ভেঙেও দেওয়া হয়েছিল টোল আদায়ের বুথগুলো। কিন্তু রাজ্যে রাজনৈতিক পালা বদলের সঙ্গে সঙ্গেই ফের বসে যায় ওই সব বুথ। টোল আদায়ের টাকা থেকেই রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা। টোল আদায়কারী সংস্থার এক আধিকারিকের বক্তব্য, “যে টাকা টোল থেকে আদায় হয় তাতে এক বছরের মধ্যেই ঝাঁ চকচকে এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করা যায়। কিন্তু প্রতি বছরই প্যাচ ওয়ার্কের জন্য সরকারি নির্দেশ আসে। পুরো রাস্তার ৫-৬ কিলোমিটার করে অংশ এক একজন ঠিকাদারকে বরাত দেওয়া হয়। এর ফলে কাজের গুণগত মান যেমন ঠিক থাকে না, তেমনই একসঙ্গে পুরো কাজ শেষ হয় না হওয়ায় যানচালক থেকে যাত্রী সকলেরই সমস্যা হয়। আর এ সবের জন্য বছরের প্রায় সব সময়েই রাস্তার ধারে রাস্তা সংস্কারের জন্য বালি, পাথর পড়ে থাকে।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের এই রাস্তাটির একটা বড় অংশই ব্যারাকপুর লোকসভা এলাকার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। ব্যারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী রেলমন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর থেকে নিজের এলাকায় খুব একটা আসেন না বলে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ। সেই কারণেই এলাকার উন্নয়নের কাজে গতি না থাকার তত্ত্ব মেনে নিয়েছেন এলাকার তৃণমূল নেতাদের একাংশ। যদিও সম্প্রতি এই এক্সপ্রেসওয়ে সম্প্রসারণে উদ্যোগী হয়েছে কেএমডিএ। এই সড়ককে বিশেষ গুরুত্ব দিতেই রাস্তাটি ছয় লেনের করার কথাও জানিয়েছেন কেএমডিএ আধিকারিকেরা। কেএমডিএ-র ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। সংস্কারের কাজও শুরু হয়েছে।’’ |