|
|
|
|
অবনমন প্রায় বাঁচিয়েই ফেলছে মোহনবাগান |
তানিয়া রায় • কলকাতা |
মোহনবাগান ৩ (টোলগে, ওডাফা-২)
মুম্বই এফসি ২ (ড্যারেন, জন) |
‘লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট’ বলতে যা বোঝায় ওডাফা ওকোলি বুধবার সেই কাজটাই করেছেন! পেনাল্টি মিস করার পরও তাই মুম্বই এফসি’র বিরুদ্ধে জয়ের নায়ক মোহনবাগানের ক্যাপ্টেনই!
বাগানের গোলমেশিন নিজে তো গোল করেছেনই, দলের প্রয়োজনে রক্ষণ সামলেছেন, ম্যাচের অন্তিম লগ্নে দায়িত্ব নিয়ে কর্নার মারতে গিয়েছেন। ইনজুরি টাইমে কর্নার থেকে ওডাফার দুরন্ত শটই মুম্বই এফসি’র ফয়জলের গায়ে লেগে গোলে ঢুকে যায়। যাঁর নিট ফল তিন পয়েন্ট নিয়ে সদর্পে মাঠ ছাড়ল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড।
এই মুহূর্তে লিগ টেবিলের যা পরিস্থিতি তাতে, এয়ার ইন্ডিয়ার তুলনায় দু’ম্যাচ কম খেলে বিমান কর্মীদের সমান পয়েন্ট (১৯) নিয়ে গোল পার্থক্যে এগিয়ে গেল মোহনবাগানই। আই লিগ তালিকায় ১২ নম্বরে উঠে এলেন ওডাফারা। আর এ দিনটা সবুজ-মেরুনের ইতিহাসে ‘ক্যাপ্টেনস ডে’ হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে গেল।
আশির দশকে স্টপার সুব্রত ভট্টাচার্য দলের প্রয়োজনে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলে গোল করে দলকে জেতাচ্ছেন, এটা ময়দানের অতি পরিচিত দৃশ্য ছিল। কিন্তু একজন স্ট্রাইকার দলের সমস্যায় স্টপার হিসেবে বা সাইড ব্যাকে খেলছেন এ রকম দৃষ্টান্তের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু বুধবার সে রকম দৃশ্যেরই সাক্ষী থাকল কল্যাণী স্টেডিয়াম ওডাফার সৌজন্যে। নির্মল বা ইচেরা যখন চোটের কারণে মাঠের বাইরে চলে যাচ্ছিলেন তখন মোহন অধিনায়ককে দেখা গেল নীচে নেমে এসে সাইড ব্যাক আর স্টপার পজিশনে খেলতে। ম্যাচের শেষে করিম তাই মজা করে বলেই ফেললেন, “ও বোধহয় গোলকিপার হিসেবে খেললেও সফল হবে। ও জিনিয়াস।” ওডাফা অবশ্য অধিনায়োকচিত ঢঙেই বললেন, “দলের প্রয়োজনে আমি সব জায়গায় খেলতেই রাজি।” |
|
ওডাফাময় বাগান। বুধবারও সেই চেনা ছবি। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
ম্যাচের পর যখন গোটা গ্যালারি জুড়ে সবুজ-মেরুন রংমশাল জ্বলছে, ওডাফা-টোলগের জয়-গান গাইছেন মোহন সমর্থকরা, তখন ড্রেসিংরুমের বাইরে বসে রাগে গজগজ করছিলেন ইউসুফ ইয়াকুবু। তাঁর অভিযোগ, “মোহনবাগান তো খালি মারামারি করল। এটাকে ফুটবল খেলা বলে না। আমাদের ফুটবলারদের ইচ্ছাকৃত মারছিল ওরা। ওদের চেয়ে আমরা অনেক ভাল খেলেছি। আর ওডাফার পারফরম্যান্সের কথা বলছেন, ও এখনও আমার চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।” এর পাশাপাশি ইয়াকুবুর আরও অভিযোগ, “আমার বিরুদ্ধে দর্শকরা বর্ণ-বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছে।” ইয়াকুবুর এ সব অভিযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না স্বয়ং ওডাফাই। পালটা তাঁর দাবি, “আমরা ওদের প্লেয়ারদের মারলাম, আর আমাদের ফুটবলারের মাথা ফাটল!”
এটা ঘটনা যে প্রথমার্ধের মিনিট দশেকের পর মুম্বই এফসি’র চাপে একটু যেন দিশেহারা হয়ে পড়েছিল মোহনবাগান। এই পরিস্থিতিতে সবুজ-মেরুনকে অক্সিজেন দেন টোলগে ওজবে। স্নেহাশিসের সেন্টার থেকে বাঁ পায়ে অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকারের দুরন্ত শট। এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই মুম্বই এফসি’র আশুতোষ বক্সের ভেতর টোলগেকে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় করিমের দল। শিল্ডের ডার্বির পর পেনাল্টি থেকে গোল করতে আবারও ব্যর্থ হন মোহন-অধিনায়ক। এরপরই আহত বাঘের মতোই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন ওডাফা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল করে পেনাল্টি মিস করার আক্ষেপটা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিন জন ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে টোলগের মাপা পাস থেকে হেডে গোল করতে আর কোনও ভুল করেননি বাগানের নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার।
মরসুমের শেষে পৌঁছে বাগানের কোটি টাকার বিদেশি জুটি করিমের বাগানে অবশেষে ফুল ফোটাচ্ছে। ওডাফা-টোলগের বোঝাপড়াই এখন করিমের সাফল্যের আসল চাবিকাঠি। এই জুটির ওপর ভর করেই শেষ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই জিতেছে মোহনবাগান। একটি ম্যাচ ড্র করেছে। টোলগে বলছেন, “আমার চোটের কারণেই মূলত মরসুমের শুরুর দিকে ওডাফা আর আমি একসঙ্গে খেলতেই পারিনি, কিন্তু এখন আমরা দু’জনেই ছন্দে রয়েছি। বোঝাপড়া বেড়েছে। তাই আমরা সফলও হচ্ছি।”
টোলগে-ওডাফা জুটি সফল ঠিকই, কিন্তু এ দিনও দু’গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরও যে ভাবে মোহনবাগান দু’গোল হজম করেছে তাতে রক্ষণ নিয়ে মরক্কান কোচের চিন্তা থেকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। এর ওপর আবার ইচের চোট চিন্তা বাড়িয়েছে করিমের। এ দিন ম্যাচের সময় হারুনের সঙ্গে সংঘর্ষে ইচের মাথা ফেটে যায়। কোনও মতে মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে স্পোর্টস ম্যান স্পিরিটেই বাকি ম্যাচ খেলেন ইচে। কিন্তু পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চারটি সেলাই পড়ে তাঁর মাথায়। শনিবার এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে অনিশ্চিত হয়ে পড়েলেন বাগানের নাইজিরিয়ান ডিফেন্ডার।
|
মোহনবাগান: শিল্টন পাল, নির্মল ছেত্রী, ইচে, বিশ্বজিত, নবি, মণীশ মৈথানি (ফেলা), ডেনসন, স্নেহাশিস (ভার্গব), সাবিথ, ওডাফা, টোলগে (কুইনটন)। |
|
|
|
|
|