|
|
|
|
|
যতই তৈরি থাকি গেইল আর
ঘূর্ণি ঝড় মর্জিমাফিকই বইবে
জাক কালিস |
|
|
টুর্নামেন্টের এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক ক্রিকেটার আর সব ক’টা ফ্র্যাঞ্চাইজিরই সরকারি ভাবে প্রায় এক সুরনিজের খেলায় মন দাও। নিজের ফর্মের উপর ফোকাস করো। আর অন্যরা কে কী করছে তা নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাতে যেও না।
সমস্যা হচ্ছে, সব সময় এটা করে দেখানো যায় না!
এমন অনেক সময়েই হয় যে, যখন অন্য দু’টো দলের খেলা চলছে বাকিরা টিভিটা খুলে রাখে ‘স্রেফ খেলায় একটু চোখ রাখা যাক’ ভেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় সবাই মিলে ম্যাচটার মধ্যে একেবারে ঢুকে গিয়ে প্রায় প্রতিটা বল খুঁটিয়ে দেখেছে। আসলে আইপিএলে বহু প্লেয়ার আছে যারা খেলাটা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চালায়। এদের কাছে প্রস্তুতি শব্দটার মানেই আলাদা। এদের গভীর বিশ্বাস, প্রতিপক্ষ দল সম্পর্কে সমস্ত খুঁটিনাটি জানার উপর ম্যাচের ফলাফল নির্ভর করে। মানতেই হবে এটা ভীষণ তারিফ করার মতো একটা মানসিকতা।
আমি অবশ্য উপরের ওই দলে একেবারেই পড়ি না। বরং খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর ট্রেনিং বা ম্যাচ প্রস্তুতির সময়টা বাদ দিলে আমার সুইচ অফ করতে এতটুকু সমস্যা হয় না। তা ছাড়া আমার টিমমেটদের এত জন যেখানে প্রতিপক্ষ দলগুলোর উপর শ্যেন দৃষ্টি দিয়ে বসে আছে, সেখানে আমার চিন্তা কীসের? তার উপর আমাদের কোচিং স্টাফ আর ভিডিও অ্যানালিস্টও তো অন্যদের সব পদক্ষেপের উপর কড়া নজর রাখছে। তাই আমি নিশ্চিন্তে থাকি এটা জেনে যে, সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো ওরা ঠিক আমাকে সরবরাহ করে দেবে!
এমনিতে আইপিএলের সূচি এমনই যে, দু’টো ম্যাচের মাঝে বিশ্রামের দিনগুলো কোথা দিয়ে বেরিয়ে গেল বুঝতেই পারা যায় না! কখনও কখনও তো মনে হয় চোখের নিমেষে শেষ হয়ে গেল! তবুও নিজের জন্য কয়েকটা ঘণ্টা ঠিকই পাওয়া যায়। কিছু কিছু দিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের ব্যস্ততা থাকে। তবে সাধারণত সকালগুলোয় কিছুটা সময় ফ্রি থাকে। আর কয়েকজন প্লেয়ার এই ফ্রি সময়টা বিশ্রামে নষ্ট না করে এর প্রতিটা মিনিট প্রতিটা সেকেন্ড নিজের জন্য নিংড়ে নেয়। রায়ান টেন দুশখাতের কথাই ধরুন। আপাতত নিজেকে বই-পোকায় বদলে ফেলতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখছে না। নিজের সঙ্গে একটা বইয়ের পাহাড় নিয়ে ঘুরছে। আর প্রতিজ্ঞা করেছে, ওই পাহাড়ের প্রতিটা বই এই আইপিএল মরসুমের মধ্যে পড়ে শেষ করবেই!
ব্যক্তিগত ভাবে আমার বিশ্রাম করায় সমস্যা নেই। কেউ কেউ মনে করেন বিশ্রাম ব্যাপারটা বিলাসিতা। আমি কিন্তু বহু দিন আগেই জেনে গিয়েছিলাম যে ক্রিকেটে বিশ্রামটা খাদ্য আর ট্রেনিংয়ের মতোই সমান জরুরি। তিনটে পর্যাপ্ত পরিমাণে না পেলে ফর্ম-ফিটনেস প্রভাবিত হবেই।
যাই হোক, টুর্নামেন্ট সবে জমতে শুরু করেছে। দু’একটা দলের পারফরম্যান্সে আমি সত্যিই খুব অবাক। বিশেষ করে দিল্লির মতো টিম নিজেদের প্রথম তিনটে ম্যাচই হেরে বসবে, এটা কেউই বোধহয় ভাবতে পারেনি। এ বছর টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগেই চোট-আঘাতের কারণে বেশ কয়েকটা দল প্লেয়ার খুইয়েছে। কিন্তু ডেয়ারডেভিলস-দের মতো এত বড় ধাক্কা বোধহয় আর কেউ খায়নি। একেবারে শেষ মুহূর্তে কেভিন পিটারসেন আর জেসি রাইডারকে না পাওয়া বিরাট ক্ষতি। ডেয়ারডেভিলস দলটার জন্য সত্যিই খারাপ লাগছে।
দিন দুই আগে মুম্বই প্রমাণ করেছে ওরা এ বার অন্যতম শক্তিশালী দলগুলোর একটা। ওদের পাশে আমার পুরনো দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সকেও কিন্তু যথেষ্ট জবরদস্ত দেখিয়েছে। আজ সেই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সরাই মাঠে আমাদের চ্যালেঞ্জ করতে নামছে। ওদের ব্যাটিংয়ের দুই স্তম্ভের নাম ক্রিস গেইল আর এবি ডি ভিলিয়ার্স। এরা এমন ব্যাটসম্যান যাদের আটকানোর জন্য আপনি সমস্ত রকমের আঁটঘাট বেঁধে রণকৌশল তৈরি করতে পারেন। আবার কখনও কখনও সেটা করতে গিয়ে ওভার-প্ল্যান বা অতি-প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলতে পারেন! আমার তো সোজা কথাগেইল বা এবি-কে থামানোর চেষ্টা করা মানে ঘূর্ণি ঝড়ের মোকাবিলায় নিজেকে তৈরি করার মতো। আপনাকে এটা জেনেই লড়াইয়ে নামতে হবে যে আপনি যতই তৈরি থাকুন না কেন, এক এক দিন ঝড় আপনার বাড়ির চালটা নিয়ে উড়ে যাবে। আবার অন্য দিনগুলোয় বিশেষ কোনও ক্ষতি না করে পাশ দিয়ে বয়ে যাবে! |
|
|
|
|
|