আইপিএলে আমি কয়েক জন দারুণ স্পেশ্যাল ক্রিকেটারের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করছি। তাদের মধ্যে এক জন জাক কালিস। ক্রিকেট মাঠে ও যেমন প্রচুর সাফল্য পেয়েছে, তেমনই প্রচণ্ড নম্র ও। আজকালকার জেট যুগে একই সঙ্গে সফল অথচ নম্রএ রকম বিরল কম্বিনেশন আমার মতে তেমন দেখা যায় না। কালিস সম্পর্কে সর্বশেষ খবর পেলাম যে, ও উইজডেন-এর পাঁচ বর্ষসেরা ক্রিকেটার মধ্যে রয়েছে। ওয়েল ডান জাক!
জাকের জুতো পায়ে গলানোর বিরল মুহূর্ত আমার জীবনে এসেছে। না কি আমার ‘কালিস’ হতে পারার জন্য খুশি হওয়া উচিত! কারণ, এর মধ্যে একদিন আমাদের ট্র্যাভেলিংয়ের সময় আমার স্যুটকেসের গায়ে সাঁটা ‘এয়ারলাইন ব্যাগেজ ট্যাগ’-এর ওপর আমার নামের বদলে লেখা ছিল ‘কালিস/জাক’। আমি ভাবছিলাম ওই বিমানের কোনও কর্মী আমার সঙ্গে মজা করছেন কি না! অথবা আমার সামনে আরও বড় লক্ষ্যমাত্রা খাড়া করতে চাইছেন কি না ওরা (যেটা ছোঁয়া অসম্ভব?)! কিংবা স্রেফ এটা একটা গ্রুপ চেক-ইন। যেখানে সব ব্যাগগুলো একটাই নামে পরিচিত।
এগুলোর যেটাই হোক, নিজেকে আমি ৬০ সেকেন্ডের কিংবদন্তি অনুভব করেছিলাম!
জাকের শান্ত হাবভাব দেখে আমার এক-এক সময় মনে হয়, এই পৃথিবীটা ওর ঘাড়ের ওপর ভেঙে পড়লেও কালিসের পালস্ আর হার্টবিট চ্যালেঞ্জের সামনে পড়বে না। আমাদের ড্রেসিংরুমের চারদিকে তাকিয়ে ব্যক্তিত্বের সমারোহ আর ভারসাম্য দেখাটা দারুণ স্বস্তিদায়ক। সেখানে কালিস যেমন আছে, তেমনই আছে প্রাণবন্ত ব্রেট লি। সহকারী কোচ বিজয় দাহিয়া। লেগ স্পিনার সরবজিৎ লাড্ডা। তরুণ প্রদীপ সাঙ্গোয়ান। সঙ্গে আবার অভিজ্ঞ বালাজি, হাডিন, লক্ষ্মীরতন শুক্ল। |
এ রকম সব ব্যক্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও জয়পুরের ম্যাচটা হেরো দল হিসেবে আমাদের শেষ করাটা আমার কাছে আরও বেশি করে হতাশাজনক। আমি নিজেকে সব সময় বলে থাকি যে, আমার দলে প্রচুর ক্রিকেটার আছে যারা দায়িত্ব নিয়ে টিমকে জেতাতে পারে। যা হোক, রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচে আমিও দোষী জঘন্য শট খেলার জন্য। তার জন্য কেকেআর সমর্থকদের কাছে আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। সরি! এমনকী আমাদের আঠারো মাসের বিবাহিত জীবনে নাতাশার কাছে আমি প্রথম বকুনিও খেলাম ওই স্ট্রোকটা খেলার জন্য! আমাকে নাতাশার প্রথম কথাই ছিল, “কী করে তুমি ওই ভাবে আউট হতে পারলে?” আমার বউয়ের মতো, যে কি না মনে করে সিলি পয়েন্টটা কোনও ফিল্ডিং পজিশনই নয়। বরং ক্রিকেটীয় গালাগাল আর ‘জোক’ করার জায়গা, সে-ও যখন সমালোচনা করল তখন আমাকে মানতেই হচ্ছে আমি একটা হারা-কিরি করে ফেলেছি। সরি নাতাশা।
যদিও এর ভেতরেই আমাদের ‘এনার্জি বার’ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম টিমে এসে পড়েছে। মঙ্গলবার রাতে ও আমাদের বেঙ্গালুরুর হোটেলে চেক-ইন করেছে। এবং আমরা মিলিত হলাম বুধবার ব্রেকফাস্ট টেবিলে। আমি মনে করি, ব্রেন্ডন এক জন দারুণ প্রতিভাবান এবং দমদার ক্রিকেটার ছাড়াও সুদর্শন প্লেয়ারদের মধ্যে এক জন। ওই দারুণ পুরুষালি চিবুক! গালে টোল পড়া ওই তেরছা হাসি! অসংখ্য ট্যাটু! আর সবচেয়ে বড় কথা এক জন দুর্দান্ত টিম-ম্যান। ব্রেন্ডন বুধবার সটান নেটে ঢুকে পড়েছে। আর বৃহস্পতিবার আরসিবি-র বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রথম এগারোয় ঢোকার লড়াইয়ে রয়েছে।
বেঙ্গালুরুতে দিনের অর্ধেকটা আমার কাবার হয়ে যাচ্ছে ক্রিস গেইল-কে আমরা কী ভাবে আউট করব এই প্রশ্নটার উত্তর দিতে দিতে। সোজা ব্যাপার আশা করি ভাল বল করব আর সুযোগকে কাজে লাগাব। আমাদের এক জন খুব বেশি আলোকিত সতীর্থের পরামর্শ হল, গেইলকে ওর হোটেলের ঘরে বন্ধ করে রাখো। তাকে আমরা তার কল্পনার জগতেই রেখে দিচ্ছি। আমি বরং খোঁজে আছি বেঙ্গালুরু থেকে ফেরার সময় আমার স্যুটকেসে কার নামের ‘এয়ারলাইন ব্যাগেজ ট্যাগ’ লাগানো যায়! |