চিন্নাস্বামীর মেইন গেট দিয়ে মাথা নিচু করে ঢুকলেই চোখে পড়বে অদ্ভুত কাটআউটটা। আসলে কিম্ভূতকিমাকার একটা কার্টুন। চোখ বড় বড়, গালে খোঁচা-খোঁচা দাড়ি নিয়ে ব্যাট উঁচিয়ে ক্যাপ্টেন কোহলি। পাশে দাঁড়ানো ভদ্রলোক আবার এমনিতেই দৈত্যদর্শন, শিল্পীর সৃষ্টির খেয়ালে যা আরও বিকট রূপ নিয়েছে। সঙ্গে আবার দাঁতমুখ খিঁচিয়ে একটা নাচের অঙ্গভঙ্গি।
ওটা গ্যাংনাম নাচ!
উনি, ক্রিস গেইল!
কাটআউটের গেইলকে আজ দেখা গেলেও রক্তমাংসের ‘ক্যারিবিয়ান কিং’-কে চর্মচক্ষে দেখা গেল না। টিমের প্র্যাক্টিস ছিল, চাইলে আসতেও পারতেন। তবে গেইল তো, শুধুই নিজের ইচ্ছের দাসানুদাস। সন্ধের চিন্নাস্বামীতে ডে’ভিলিয়ার্স-ভেত্তোরিদের পাওয়া গেল। কিন্তু যাঁকে দেখার অসীম প্রত্যাশা নিয়ে বিকেল থেকে হাতে বুম নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে সর্বভারতীয় মিডিয়া দিনের শেষে সবার মুখ বাংলার পাঁচ। ‘বাইট’-এর মশলা নেই। দয়াপরবশ আরসিবি মিডিয়া ম্যানেজার মুচকি হেসে বলে গেলেন, “গেইল কী করেছে, একটু আধটু বলে দিতে পারি। খেয়েছে। ঘুমিয়েছে। ওর মোবাইলটা ভোগাচ্ছে। ওটা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। দুপুরের পর ঘরের বাইরে ডু নট ডিস্টার্ব বোর্ড ঝুলতে দেখেছি। ব্যস।”
ভাল। কিন্তু এতে কী হবে? ক্ষুধার্ত মিডিয়া হাতের কাছে পেল নাইট অধিনায়কে আর তাঁকে টার্গেট করে চলল ঝাঁকে ঝাঁকে গেইল নিয়ে গুলিগোলা। রসিয়ে-রসিয়ে। শ্লেষাত্মক সুরে ।
কী ঠিক করলেন? কী ভাবে আটকাবেন গেইলকে? |
গম্ভীরকে যা নিয়ে বেশ বিরক্তই দেখাল। বোধহয় চ্যাম্পিয়নের অহংবোধে সপাটে কষাঘাত বলে। একেই রাজস্থানের কাছে একটা ম্যাচের হার নিয়ে মিডিয়ায় যথেচ্ছ ডামাডোলের সৃষ্টি হয়েছে। তার উপর বেঙ্গালুরুতে পা দেওয়া ইস্তক অহর্নিশি কানের কাছে কাটা রেকর্ডের মতো ‘গেইল’ শব্দটাই বাজছে। তিতিবিরক্ত কেকেআর ক্যাপ্টেন বলেও ফেললেন, “আপনারা কেন গেইল বনাম কেকেআর বলে যাচ্ছেন, বুঝতে পারছি না। আমরা কোনও দিন কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তি নিয়ে ভাবিনি। ভাবিও না। সেটা গেইল হতে পারে, অন্য কেউও হতে পারে। কেকেআর কাল আরসিবি-র বিরুদ্ধে নামবে। গেইলের বিরুদ্ধে নয়।”
নাইট অধিনায়কের দাবড়ানি খেয়ে দক্ষিণী মিডিয়া একটু চুপ। দু’একটা ছুটকো প্রশ্ন শেষে আবার টিপ্পনী, সানরাইজার্সকে কী ভাবে ওড়াল আরসিবি দেখেছেন? স্ট্র্যাটেজি ঠিক করলেন? গম্ভীর সপাটে প্রশ্নটা চিন্নাস্বামীর গ্যালারিতে ফেলে দিলেন, “বললাম তো, আমরা বিপক্ষ বা তাদের ড্রেসিংরুম নিয়ে ভাবি না। নিজেদের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে ভাবি।” |
লোকে ভুলেই গিয়েছে, আইপিএল ফাইভে এই মাঠে গম্ভীরের ব্যাটেই শাপমুক্তি ঘটেছিল কেকেআরের। গেইলের টিমের বিরুদ্ধে ম্যাচ মানেই নাইটদের দফারফা অন্তত সেই ‘ধ্রুব সত্য’-টা চুরমার করে দিয়েছিলেন গম্ভীর। কিন্তু প্রেক্ষাপটটাই এমন যে, বাকি কিছুকে মস্তিষ্কে ঠাঁই দেওয়ার উপায় নেই। কেকেআর বনাম গেইলের সম্মুখসমর বরাবরই ‘হাই টিআরপি’। ইডেন, বেঙ্গালুরু, ‘প্রতিশোধে’র আগুনে তো কম পোড়েনি কেকেআর! তার উপর চিন্নাস্বামীকে ধরুন। মিডিয়া লাউঞ্জ, কেএসসিএ অ্যাকাডেমি, মায় স্টেডিয়ামে ঢোকার সিঁড়ি পর্যন্ত টিম জার্সির আগুনরঙা লালে রাঙিয়ে দিয়েছে আরসিবি। যত্রতত্র গেইলের কাটআউট। বড়, ছোট, মাঝারি। যেন মিনিটে মিনিটে প্রতিপক্ষ ফ্র্যাঞ্চাইজিকে মনে করিয়ে দেওয়া তুমি গেইল-দুর্গে স্বাগত। এবং এগারো নয়, তোমার শত্রু মাত্র এক। গম্ভীর কেন, টিম বেঙ্গালুরুর বাকিদেরও অতীত পারফরম্যান্স এখানে বড়জোড় ফুটনোট। কখনওই মুখ্য নয়।
নাইট শিবিরে খবর বলতে, গেইল ও তাঁর বেঙ্গালুরু নিয়ে চূড়ান্ত টিম মিটিং পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে ম্যাচের দিন সকালে। শোনা যাচ্ছে, লক্ষ্মীপতি বালাজি এই ম্যাচে টিমে ফিরতে পারেন। সামি আহমেদের জায়গায়। রায়ান ম্যাকলারেনকে আবার বুধবার নেটে অনেকক্ষণ বল করিয়ে রাখা হল। জট শুধু চার বিদেশি নিয়ে। কালিস, নারিন নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকার কথা নয়। নেইও। ম্যাকলারেন বনাম লি-তেও কিছুটা এগিয়ে শেষের জন। রাজস্থান ম্যাচের ‘একা কুম্ভ’ ওয়েন মর্গ্যান, নাকি তিনি?
তিনি মানে, ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। হাতের উল্কিটা এখনও একই জায়গায়। চাল-চলনে ‘কেয়ার করি না’ মেজাজ পাল্টায়নি এতটুকু। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট সারিয়ে গত রাতে বেঙ্গালুরু ঢোকার পর এ দিন সোজা প্র্যাকটিসে। ফিটনেস টেস্ট দিতে হল, কিন্তু তার পর তিন-তিন বার নেটে যা ব্যাটিং-বিক্রম চালু করলেন, দেখে আশ্বস্ত গম্ভীরের সদম্ভ ঘোষণা, “অ্যাভেলেবল ফর সিলেকশন।” বলবেনই। ক্রিস গেইলের ‘অ্যান্টিডোট’ বলতে যদি টিমে কেউ থেকে থাকে, তো পাঠান নন। ‘ব্র্যান্ড ব্রেন্ডন’। আইপিএল কাকে বলে, তাঁকে দেখে চিনেছে ক্রিকেট বিশ্ব। আইপিএল ওয়ানে এই চিন্নাস্বামীতেই তাঁর ১৫৮। প্রথম ম্যাচে। যা আজও সর্বোচ্চ। পাঁচ বছর পরেও সেই স্মৃতিতে শ্যাওলা পড়েনি।
|