|
|
|
|
শ্বাসকষ্ট, পায়ে যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও নয়াদিল্লি |
মঙ্গলবার দিল্লিতে এসএফআই-এর বিক্ষোভের মুখে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বুধবার কলকাতায় ফিরে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন বিকেলে একটি চার্টার্ড বিমানে কলকাতা ফেরেন মুখ্যমন্ত্রী। বিমানবন্দর থেকেই সোজা চলে যান হাসপাতালে। তাঁর রক্তচাপ কমে গিয়েছে। শ্বাসকষ্ট রয়েছে। ঘাড়ে, কোমরে এবং পায়ে যন্ত্রণাও হচ্ছে। অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানালেও তাঁকে আপাতত সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
এ যাত্রায় ১১ তারিখ পর্যন্ত দিল্লিতে থাকার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু মঙ্গলবার রাজ্যের যোজনা বরাদ্দ নিয়ে বৈঠক করতে যোজনা কমিশনের দফতরে যাওয়ার সময় এসএফআই কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। মমতার মাথায় রডের বাড়ি মারার চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ। হেনস্থা করা হয় রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে। তাঁর পাঞ্জাবি ছিঁড়ে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার সঙ্গে বৈঠক করলেও সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাতিল করে দেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক। এইমসের চিকিৎসকেরা তাঁকে পরীক্ষা করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিলেও মমতা রাজি হননি। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, দিল্লি সফর কাটছাঁট করে বুধবার কলকাতা ফিরে যাবেন। |
|
হাসপাতালে ঢোকার মুখে। বুধবার।—নিজস্ব চিত্র |
সেই মতো এ দিন দুপুর দু’টোয় একটি চার্টার্ড বিমানে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। বিমানবন্দর যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের পীড়াপীড়িতে গাড়ি থেকে নামলেও দৃশ্যতই দুর্বল দেখাচ্ছিল তাঁকে। যে ভাবে ধীরে ধীরে কথা বললেন, সেটাও একেবারে অচেনা মমতা। তিনি বলেন, “গত কাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যার পর থেকে আমার শরীর খারাপ হয়েছে। অক্সিজেনেরও প্রয়োজন হয়। এইমসের চিকিৎসকেরা গত কালই আমায় হাসপাতালে ভর্তির জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন।”
বিকেল চারটে নাগাদ কলকাতা এসে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। বেনজির ভাবে ভিআইপি-দের জন্য বরাদ্দ পাঁচ নম্বর গেট দিয়ে বেরোন তিনি। মমতা এমনিতে অন্য যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত সাধারণ গেট দিয়ে যাওয়া-আসা করলেও এ দিন তাঁর অসুস্থতার কারণেই ওই ব্যবস্থা করা হয় বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। বিমানবন্দর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় সোজা চলে যায় মধ্য কলকাতার হাসপাতালটিতে। সেখানে ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসক সুব্রত মৈত্রের অধীনে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়।
হাসপাতালে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় জানান, মুখ্যমন্ত্রীর কোমরে এবং পায়ে আঘাত লেগেছে। তাঁর এক্স-রে করা হয়েছে। এক অস্থি-বিশেষজ্ঞর পরামর্শও নেওয়া হচ্ছে। মুকুলবাবুর অভিযোগ, এসএফআই-এর বিক্ষোভকারীরা পিছন থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে এমন ভাবে ধাক্কা দিয়েছেন যে তাঁর চোট লেগেছে। সেখান থেকেই বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, “প্রাথমিক পরীক্ষার পরে চিকিৎসকেরাই মুখ্যমন্ত্রীকে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়েছেন। সেই মতো ওঁকে ভর্তি করা হয়েছে।”
হাসপাতাল সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। রক্তচাপ এবং নাড়ির গতি স্বাভাবিকের তুলনায় কম। এ দিন বিকেলেই মেডিক্যাল টিম তাঁকে পরীক্ষা করেছে। কিছু পরীক্ষানিরীক্ষার পরে চিকিৎসার পরের ধাপ স্থির হবে। পরে প্রকাশিত মেডিক্যাল বুলেটিনে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রীর কাঁধ, ঘাড়, বাঁ দিকের কনুই এবং কোমরে ব্যথা রয়েছে। তাঁর সম্পূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন।
মুখ্যমন্ত্রীকে যাতে বিরক্ত করা না-হয়, সে জন্য চার তলার যে ঘরটিতে তাঁকে রাখা হয়েছে, তার সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ওই ঘরের পাশের একটি ঘরও ছেড়ে দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে রাতে দলীয় নেতারা থাকবেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেই সেখানে চলে আসেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস প্রমুখ। সন্ধ্যায় হাসপাতালে ফোন করে মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমান। মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন তিনি।
এসএফআই কর্মীদের হাতে নিগৃহীত হওয়ার পরে মঙ্গলবারই দিল্লিতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অমিত মিত্র। মুকুলবাবু এবং আর এক তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী এ দিন তাঁকে দেখতে যান। পরে মুকুলবাবু জানান, অমিতবাবুর আগে থেকেই শ্বাসকষ্ট ছিল। মঙ্গলবারের ঘটনার পরে তা বেড়েছে। ধাক্কাধাক্কির ফলে তাঁর বুকে-পিঠে ব্যথাও হয়েছে। তবে এখন তিনি অনেকটাই ভাল আছেন। বৃহস্পতিবার তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। |
|
|
|
|
|