পুর আইন বদলে বৈঠক আজ
বেআইনি রীতিতেই বহুতল, লোকসান পুরসভার
মাত্র দু’কাঠা জমি। সামনে ২০ ফুটেরও কম রাস্তা। পুরসভার আইন অনুযায়ী ওই জমিতে হতে পারে মাত্র দোতলা বাড়ি। কিন্তু হয়েছে পাঁচতলা। পুরসভাকে জরিমানা দিয়ে পরে পরিবর্তিত নকশা অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন বাড়ির মালিক। স্থান বেহালা (পূর্ব) বিধানসভা এলাকা। যে কেন্দ্রের বিধায়ক কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, কাউন্সিলর পুরসভার মেয়র পারিষদ তারক সিংহ।
হরিশ মুখার্জি রোডে তৈরি হচ্ছে একটি বাড়ি। পুরসভা অনুমতি দিয়েছিল জি প্লাস ফোর-এর। হয়েছে বাড়তি আরও একটি তলা। পুরসভাকে জরিমানা দিয়ে সে বাড়িও আইনি হয়ে গিয়েছে।
পুরসভার পদস্থ অফিসার জানান, কলকাতায় বছরে অন্তত হাজার তিনেক বেআইনি বাড়ি এ ভাবেই জরিমানা দিয়ে আইনি হয়ে যাচ্ছে।
পুরসভায় তৃণমূলের প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের বর্তমান পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং সিপিএমের প্রাক্তন মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য দু’জনই স্বীকার করেছেন, জরিমানা নিয়ে বেআইনি বাড়িকে আইনি বানানোর জন্য কোনও আইন নেই। কিন্তু দীর্ঘকাল ধরেই অলিখিত এই ব্যবস্থা চলে আসছে। বর্তমান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও এই ব্যাপারে ভিন্নমত নন। তাঁর কথায়, “আইন না থাকলেও পুরসভায় এটাই রীতি। দীর্ঘকাল ধরেই তা চলছে।”
কিন্তু কী ভাবে চলে আসছে এই ‘রীতি’? পুরসভার ওই পদস্থ অফিসারের কথায়, “হয়তো কাজ শুরু হল তিনতলার অনুমতি নিয়ে। পরে বাড়ি তৈরির সময় চার বা পাঁচতলাও করে নেওয়া হল। পুলিশ বা পুরসভা যাতে আপত্তি না তোলে, সে জন্য তাদের সন্তুষ্টির ব্যবস্থাও হল যথাযথ ভাবে। আর বাড়ি তৈরি হয়ে গেলে জরিমানা দিলেই তো কাজ শেষ!” ওই অফিসার আরও জানান, তিলজলা, তপসিয়া, গার্ডেনরিচ, আলিপুর, শ্যামবাজার, কসবা ও বেহালা-ঠাকুরপুকুর এলাকায় এই ভাবে বাড়ি তৈরির রমরমা বেশি।
শহরে বেআইনি বহুতলের রমরমা নিয়ে কিছু কাল আগে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে তৎকালীন ডিজি (বিল্ডিং-১)-কে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দক্ষিণ কলকাতার এক মেয়র পারিষদের বক্তব্য, “বাম আমলেও জরিমানা দিয়ে বেআইনি বাড়িকে আইনি করা হোত। এখনও হচ্ছে। এতে এক দিকে যেমন বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা বাড়ছে, অন্য দিকে পুরসভা তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।” কী ভাবে? ওই মেয়র পারিষদের বক্তব্য, অনুমোদিত নকশার বাইরে গিয়ে নির্মাণ করলে বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায়। অনেক ক্ষেত্রেই হয়তো তিনতলার ভিতের উপরেই চারতলা, পাঁচতলা তৈরি করে ফেলা হচ্ছে। ফলে সে বাড়ির স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় থেকে যায়। আবার তিনতলার অনুমোদন নিয়ে অবৈধ ভাবে কেউ পাঁচতলা করে ফেললে জরিমানা বাবদ পুরসভার কোষাগারে যা ঢুকছে, তা পাঁচতলা বাড়ির অনুমোদনের জন্য নির্দিষ্ট ফি-এর তুলনায় অনেক কম। এর ফলেই পুরসভা আর্থিক দিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে ওই মেয়র পারিষদের মত।
বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে পুরসভার করণীয় কী? পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক ডিজি বলেন, “বেআইনি বাড়ি নির্মাণের খবর পেলেই তা ভেঙে ফেলার কথা। তবে তার আগে কলকাতা পুর আইনের ৪০০ (১) ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রোমোটার বা মালিককে নোটিস ধরিয়ে জানাতে বলার কথা, কেন ওই বাড়ি ভেঙে ফেলা হবে না।”
কলকাতা পুর আইনের ৪০১ (এ), ৫৮৯ এবং ৬১০ (২) ধারায় বলা হয়েছে, শহরের কোথাও বেআইনি নির্মাণ দেখলে পুলিশ সংশ্লিষ্ট প্রোমোটার বা মালিককে গ্রেফতার করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে কি তা সম্ভব হয়? দক্ষিণ কলকাতার এক পদস্থ পুলিশ অফিসারের কথায়, “পুলিশ কিছু করতে গেলে জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে চাপ আসে। পুরসভা তখন পুলিশের পাশে দাঁড়ায় না।”
এখন এই ‘বেআইনি রীতি’র বিরুদ্ধে আপত্তি তুলেছেন তৃণমূল শাসিত কলকাতা পুরবোর্ডেরই অন্যতম মেয়র পারিষদ পার্থপ্রতিম হাজারি। সম্প্রতি পুর কমিশনারকে দেওয়া চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, পুর আইনে জরিমানা দিয়ে বেআইনি নির্মাণকে আইনি করার সংস্থান নেই। সে জন্য তিনি জরিমানা নিয়ে বেআইনি বাড়িকে বৈধতা দেওয়া অবিলম্বে বন্ধ করার দাবিও জানিয়েছেন। বেআইনি নির্মাণকে আইনি করার ব্যাপারে যাঁদের হাত থাকছে, তাঁদের শাস্তিও চান ওই কাউন্সিলর। পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য মনে করেন, অবৈধ নির্মাণ আটকাতে কলকাতা পুর-আইনের কিছু পরিবর্তন দরকার। এই বিষয়ে আলোচনার জন্য আজ, বৃহস্পতিবার বৈঠক ডেকেছেন তিনি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.