দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বেহালার অপরিসীম দত্ত। একই রকম চিন্তায় গরফার শেফালি রায়ও। কারণ ‘আধার কার্ড’-এর তথ্য নিতে তাঁদের বাড়িতে সমীক্ষকেরা আসেননি। কবে, কোথায় গেলে সরকারি নথিতে এই তথ্য তোলা যাবে, তা জানতে ঘুরছেন পুরসভার বিভিন্ন বিভাগে। কিন্তু স্পষ্ট কোনও উত্তর মিলছে না।
অপরিসীমবাবু থাকেন পুরসভার ১২৬ নম্বর ওয়ার্ডে। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। কাজ করেন বেঙ্গালুরুর এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায়। পুরসভার আঞ্চলিক দফতরে আধার কার্ডের ব্যাপারে খোঁজ নিতে গেলে তাঁকে বলা হয় এস এন ব্যানার্জি রোডে পুরসভার সদর দফতরে যেতে। সেখানে গিয়েও নির্দিষ্ট উত্তর পাননি তিনি। যে বিভাগ বিষয়টির দেখভাল করে, তারা জানায় একটা শিবির বসবে। তবে, কবে সেটা হবে তা জানা যায়নি।
অবিবাহিতা শেফালিদেবী থাকেন বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে। চারদিকে শুনছেন আধার কার্ড করতে হবে। কিন্তু পুর-সমীক্ষকেরা বাড়িতে আসেননি। কাকে ধরলে এই কার্ড হবে তার উত্তর পেতেই হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।
অপরিসীম-শেফালির মতো দশা এ শহরের কয়েক লক্ষ মানুষের। আইন অনুযায়ী ‘আধার কার্ড’ করা বাধ্যতামূলক। এটা না করলে জরিমানার বিধানও আছে। এই কার্ড তৈরির আগে জনগণনায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে জাতীয় জনপঞ্জী অর্থাৎ ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার, সংক্ষেপে এনপিআর। কলকাতায় এর প্রাথমিক কাজ করার দায়িত্ব পুরসভার। এ শহরে ২০১১-র ২০ জুলাই এই প্রাথমিক কাজ শুরু হয় এক নম্বর বরোয়। ডেপুটি কমিশনার আলোকোজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “পুর এলাকায় ১৪১টি ওয়ার্ডে ২৫ লক্ষ লোকের এনপিআর করতে হবে। তার মধ্যে ৬৫ শতাংশ লোকের বায়োমেট্রিক পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে।”
তা সত্ত্বেও কেন লোককে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে? পুরসভার দাবি, এনপিআর-এর তথ্য যাচাই করে পাঠানো হয় ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন (ইউআইডি) অথরিটি-কে। নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি মেনে তারা আধার নম্বর বরাদ্দ এবং কার্ড বিলির ব্যবস্থা করে। কলকাতা পুরসভায় এই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বপ্রাপ্ত অমিতাভ বড়ুয়া বলেন, “তথ্য সংগ্রহের জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে শিবির করা হয়েছে। অনেকে তাতে অংশ নিতে পারেননি। যাঁরা পারেননি, মাস দুয়েকের মধ্যে তাঁদের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ের সমীক্ষা শুরু হবে।”
পুরকর্তাদের মতে, “অনেকের আঙুলের ছাপ এবং চোখের মণির আদলের মান ইউআইডি অথরিটি পছন্দ করেনি। তাঁদের এবং গত জনগণনায় যাঁদের তথ্য সংগ্রহ হয়নি তাঁরা আগামী শিবিরের সমীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। শারীরিক সমস্যার জন্য অনেকে দুই হাতের ১০ আঙুলের এবং রেটিনার ছবি ঠিক মতো দিতে পারেননি।
কিছু ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক পরীক্ষার মান যথাযথ না হওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে এ কথা স্বীকার করেছেন ইউআইডি অথরিটি-র কর্তারা। তাঁরা জানান, এ সব কিছু ক্ষেত্রে অপারেটরদের অনভিজ্ঞতা বা ভুল সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোকসভায় সংসদ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী রাজীব শুক্ল জানিয়েছেন, “সমস্ত ‘বায়োমেট্রিক এক্সেপশন এনরোলমেন্ট’ খতিয়ে দেখে ৩,৮৪,২৩৭টি আধার নম্বর বাতিল করা হয়েছে।” কলকাতার ক্ষেত্রে সংখ্যাটা কত, তার আন্দাজ অবশ্য মেলেনি। ২০১৪ সালের মার্চ মাসের মধ্যে দেশের ৬০ কোটি নাগরিকের নাম নথিভুক্ত করার লক্ষ্য আছে ইউআইডিআই-এর। |