পড়ুয়াদের নিয়ে ফের দুর্ঘটনায় দুই স্কুলগাড়ি
কের পর এক দুর্ঘটনার পরেও যে স্কুলগাড়ির চালকদের হুঁশ ফেরেনি, ফের তার প্রমাণ মিলল বুধবার। এ দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কলকাতা ও হাওড়ায় দু’টি স্কুলগাড়ি-দুর্ঘটনা ঘটে। এমনকী, হাওড়ার দুর্ঘটনার পরে আতঙ্কিত খুদে পড়ুয়াদের ফেলে রেখে পালিয়ে যান স্কুলগাড়ি চালক। এলাকার লোকজনই শিশুদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
এ দিন প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে রেড রোডে। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ জানায়, সকাল সওয়া আটটা নাগাদ রেড রোড ধরে একটি টাটা সুমো স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে ফোর্ট উইলিয়ামের দিকে যাচ্ছিল। সামনে খুব জোরে ছুটছিল একটি ট্যাক্সি। মাইকেল মধুসূদন দত্তের মূর্তির সামনে ট্যাক্সিটি আচমকা গতি কমিয়ে দেওয়ায় পিছনে থাকা স্কুলগাড়ির চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। স্কুলগাড়িটি ট্যাক্সিতে ধাক্কা মেরে ডান দিকে উল্টে যায়। ফোর্ট উইলিয়ামের সামনে থাকা ট্রাফিক বুথের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যান।
রেড রোডে দুর্ঘটনায় উল্টে গিয়েছিল এই স্কুলগাড়ি। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র
বুথের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে ছিল কলকাতা পুলিশের ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স। সেই গাড়িও ঘটনাস্থলে চলে যায়। পুলিশকর্মীরা টাটা সুমোটিকে সোজা করে ১১ জন ছাত্রীকে উদ্ধার করেন। স্কুলগাড়ির চালক, বেলুড়ের বাসিন্দা মহম্মদ ইসমাইলকেও (২৩) গাড়ি থেকে বার করে আনা হয়। ততক্ষণে ট্যাক্সিচালক পালিয়ে গিয়েছেন।
সাতসকালে পুলিশের ফোন যায় ছ’বছরের ছাত্রী ভাবনা অগ্রবালের বাবার কাছে। ‘রেড রোডে আপনার মেয়ের স্কুলের গাড়ি উল্টে গিয়েছে। তবে চিন্তার কিছু নেই, মেয়ে সুস্থ রয়েছে। তাড়াতাড়ি আসুন!’ বুধবার সকালে ময়দান থানার সাব ইনস্পেক্টরের এ কথা শুনে বেলুড়ের জয়ন্ত অগ্রবাল তখনও বুঝতে পারছিলেন না, কী করবেন।
একই অবস্থা বাকি দশ জন খুদে ছাত্রীর অভিভাবকদেরও। খুদে পড়ুয়াদের কাছ থেকে অভিভাবকদের ফোন নম্বর জেনে সকলকে একই কথা বলেছেন পুলিশ অফিসার। সকাল সওয়া আটটায় রেড রোডের পাশে ঘাসের উপরে দাঁড়িয়ে প্রতিটি শিশুই তখন ভয়ে, আতঙ্কে থরথর করে কাঁপছে। ভাবনা মাথায় সামান্য চোট পেয়েছে। তবে বেশি চোট পেয়েছেন স্কুলগাড়ির চালক। তাঁর ডান পায়ে চোট রয়েছে। তিনি এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ জানায়, ওই ছাত্রীরা পার্ক সার্কাসের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে পড়ে। ময়দান থানার পুলিশকে তারা নিজেদের অভিভাবকদের টেলিফোন নম্বর জানায়। অভিভাবকদের জানানো হয়, সকলেই সুস্থ রয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে মনে করে তাদের এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পুলিশ জানায়, অভিভাবকেরা হাসপাতাল থেকে ছাত্রীদের নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
ময়দান থানার পুলিশের দাবি, ভাবনা অগ্রবালের বাবাকে বলা হয়েছিল, এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে তাঁর মেয়ের সিটি স্ক্যান করিয়ে নিতে। কিন্তু জয়ন্তবাবু তাতে রাজি হননি। হাসপাতাল থেকে তিনি মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যান এবং হাওড়ার একটি নার্সিংহোমে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
স্কুলগাড়ির চালকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে পুলিশ? ময়দান থানার পুলিশ জানায়, স্কুলগাড়ির চালক ট্যাক্সির পিছনে ধাক্কা মেরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি উল্টে দেওয়ায় আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে দোষ তাঁরই। কিন্তু ট্রাফিক বুথের কর্মীরা জানান, এ ক্ষেত্রে আচমকা গাড়ি থামিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন ট্যাক্সিচালক। তাই ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধেই বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগ দায়ের হবে। ওই চালকের খোঁজ চলছে। ট্রাফিক বুথের এক কর্মী ট্যাক্সির নম্বরও ময়দান থানায় জানিয়ে দিয়েছেন।
এ দিন দ্বিতীয় দুর্ঘটনাটি ঘটে হাওড়ার গোলাবাড়ি থানার জেলিয়াপাড়া লেনে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন স্কুল ছুটির পরে বিকেল তিনটে নাগাদ অগ্রসেন বয়েজ স্কুলের আট জন খুদে পড়ুয়াকে নিয়ে একটি টাটা সুমো বাড়ি ফিরছিল। অভিযোগ, স্কুলগাড়িটি চলছিল তীব্র গতিতে। হঠাৎই সামনে একটি গাড়ি এসে পড়ায় স্কুলগাড়ির চালক জোরে ব্রেক কষেন। আর তাতেই পিছনে বসা পাঁচ জন পড়ুয়া হুমড়ি খেয়ে পড়ে পিছনের দরজায়। মুহূর্তের মধ্যে দরজাও খুলে যাওয়ায় পাঁচ খুদে পড়ুয়া আছাড় খেয়ে পড়ে রাস্তায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এই ঘটনার পরে খুদে পড়ুয়ারা যখন আতঙ্কে কান্নাকাটি-চিৎকার করছে, তখন গাড়ি ফেলে রেখে পালিয়ে যান চালক। এই পরিস্থিতিতে এলাকার বাসিন্দারাই এগিয়ে আসেন। তাঁরাই রাস্তা থেকে পড়ুয়াদের তুলে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। গাড়ি থেকে রাস্তায় পড়ে যাওয়ায় সকলেরই অল্পবিস্তর চোট লাগে। বেশি জখম হয় জয় মালপানি এবং গৌরবনারায়ণ সিংহ নামে দুই পড়ুয়া। স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এলাকার বাসিন্দারাই গাড়িতে থাকা সব পড়ুয়ার অভিভাবকদের খবর দিয়ে ঘটনাস্থলে ডেকে তাঁদের হাতে পড়ুয়াদের তুলে দেন। পুলিশ জানায়, গাড়িটিকে আটক করা হয়েছে। চালকের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.