হতাশায়া ভেঙে পড়েছেন বিপিন রায়। ময়নাগুড়ি চূড়াভাণ্ডার এলাকার ওই চাষি দাম না পেয়ে গত বছর আট মন উচ্ছে রাস্তায় ফেলে বাড়িতে ফিরে যান। ওই কারণে এ বার উচ্ছে চাষে যাননি। টম্যাটো চাষ করেন। কিন্তু খদ্দের ও দাম না মেলার একই সমস্যায় পড়ে ২৭ মার্চ স্থানীয় উপ নিয়ন্ত্রিত বাজার চত্বরে পনেরো মন টম্যাটো ফেলে দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ওই প্রবীণ চাষি বুঝতে পারেননি কেন প্রতি বছর এমন ঘটনা ঘটছে। কেন প্রশাসন, কৃষি ও বিপণন কর্তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
শুধু তো ময়নাগুড়ির বিপিন রায় একা নয়। ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ফালাকাটা, কামাখ্যাগুড়ি, তালমা ও ধূপগুড়ি হাটে কয়েকশো চাষি সবজি ফেলে দিয়ে একই প্রশ্ন তুলেছেন। উত্তর মেলেনি। মিলবে কেমন করে? উত্তর দেবে এমন কাউকে চাষিরা হাতের কাছে খুঁজে পায়নি যে! রাজনৈতিক দলের কৃষক নেতারা ধন্দে। এ দিকে বহুমুখী হিমঘর তৈরির কথা বলা হলেও শুধু যে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে সমাধান সম্ভব নয় তা মানছেন কৃষি বিপণন দফতরের কর্তারা। খোদ শাসক দল তৃণমূলের তরফে নানা দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য একটি কমিটি গড়ে তোলার দাবি উঠেছে। তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায় জানান, এর সমাধানে নানা দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি গড়ে তোলা দরকার।
কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় এই সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, “রাজ্য স্তরে নানা দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব নেই। প্রতিদিন কৃষিমন্ত্রীর ও খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ চলছে। জেলা স্তরেও যেন বিভিন্ন দফতরের মধ্যে যোগাযোগ রেখে কাজ চলে তা দেখা হচ্ছে।” দফতরের উত্তরবঙ্গের ডেপুটি ডিরেক্টর দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্য স্তরে সমন্বয় কমিটি রয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে তা জেলাস্তরেও গড়ে তোলা হবে।”
ভিনরাজ্যের পাইকার নির্ভর স্থানীয় বাজারগুলিতে দাম ও পাইকারদের নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। ওই খামতি দূর করতে কোন পাইকারি বাজারে কোন সবজি কত দামে বিক্রি হচ্ছে তা চাষিদের আগাম জানানোর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে বিপণন দফতর। এ জন্য ‘ওয়েব সাইটে’ তথ্য সরবরাহ করা ছাড়াও প্রতিটি হাটে হাটে ইলেকট্রনিক বোর্ড বসানোর পরিকল্পনা হয়েছে। হাটে পৌঁছে চাষিরা ওই বোর্ড দেখে সবজি বিক্রি করতে পারবে। ধূপগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটির সচিব সুব্রত দে বলেন, “বাজারগুলিতে যেন খদ্দেরের সমস্যা না-হয় তাই ভিনরাজ্যের পাইকারদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। নিয়মিত যোগোযোগ রেখে ওই পাইকারদের চাহিদা জেনে নেওয়ার চেষ্টা হবে।” |