ঠানে থেকে গ্রামে এল ১১টি দেহ
কফিন ঘিরে কাঁদল গোটা মোথাবাড়ি
ফিনবন্দি প্রিয়জনদের মৃতদেহ গ্রামে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েছে গ্রাম। একবার শেষ দেখা দেখতে ১১টি কফিনের উপরে হুমড়ি খেয়ে মালদহের মোথাবাড়ির দুলালগঞ্জ, লক্ষীপুরের শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই। ভিড়ের ধাক্কায় কারও কপাল কেটে গিয়েছে, কেউ হাতে, পায়ে চোট পেয়েছেন। কিন্তু, কারও কোনও হুঁশ নেই। রবিবার দুপুর ১২ টা নাগাদ মুম্বই থেকে কলকাতা হয়ে কফিন বন্দি লাশ মালদহে পৌঁছয়। ট্রাক থেকে কফিন বন্দি লাশগুলি মাটিতে নামাতেই সেই কফিনকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে মৃতের পরিবারের সদস্য থেকে গ্রামের সমস্ত মানুষ। গ্রামের মানুষের হাত থেকে কফিনবন্দি লাশগুলি মৃতের পরিবারের হাতে তুলে দিতে প্রশাসনের কর্তাদের রীতিমতো হিমসিম খেতে হয়েছে।
একঘন্টা পর শোকে বিহ্বল গ্রামবাসীদের সরিয়ে মৃতদেহগুলিকে তাঁদের পরিবারের হাতে তুলে দেন সদর মহকুমাশাসক পুস্পেন মিত্র এবং কালিয়াচক ২ নম্বর ব্লকের বিডিও বাপ্পা গোস্বামী। সদর মহকুমাশাসক বলেন, “একসঙ্গে একই গ্রামের এত জনের মৃত্যু দেখা যায় না। গোটা গ্রামের কান্না দেখে আমিও কেঁদে ফেলেছিলাম। পরে সামলে নিয়েছি।”
মোথাবাড়ির গ্রামে ভিড়। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মুম্বইয়ের ঠানেতে বহুতল বাড়িতে কাজ করার সময় বাড়িটি ধসে গিয়ে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার মধ্যে মালদহের মোথাবিড়ি এলাকার ১১ জন শ্রমিক রয়েছেন। তাঁরা ওই নির্মীয়মাণ বহুতল বাড়িতে কাজ করছিলেন। মৃত্যুর খবর আসার পর মোথাবাড়ির দুলালগঞ্জ, লক্ষীপুর, কাহালায় শোকের ছায়া নেমে আসে। মুম্বই থেকে মৃতদেহ কখন গ্রামে ফিরবে তিন দিন ধরে সে অপেক্ষাই করছিলেন পরিবারের সদস্য সহ গোটা গ্রামের মানুষ। অবশেষে, রবিবার দুপুরে ১১টি কফিন বন্দি লাশ গ্রামে পৌঁছয়। এ দিন কলকাতা থেকে ট্রাকে করে ১১টি লাশ কালিয়াচকে ঢুকতে সেখানে যোগ দেন মোথাবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন। পাশাপাশি, মৃতের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে গ্রামে আগে থেকে হাজির ছিলেন এলাকার সাংসদ, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী। কফিনবন্দি লাশগুলি গ্রামে ঢুকতেই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী গ্রাম ছেড়ে যান।
প্রশাসনের মাধ্যমে শনিবার রাতেই বাসিন্দারা জানতে পারেন কলকাতা থেকে দেহ রবিবার সকালে মালদহে আসবে। অপেক্ষায় শনিবার রাতে জেগে কাটিয়েছেন দুলালগঞ্জ, লক্ষীপুর গ্রামের বাসিন্দারা। পুলিশি ঘেরাটোপে কফিন বন্দি লাশ গ্রামে ঢুকতেই দুলালগঞ্জের বাসিন্দারা সেগুলি ট্রাক থেকে নামিয়ে দুলালগঞ্জ প্রামানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ত্রিপল টাঙিয়ে তার নীচে রেখেছিল। রক্তে ভেজা সাদা কাপড়ে মোড়া ক্ষতবিক্ষত দেহগুলি থেকে তখন সুগন্ধি ঠেলে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই কফিনবন্দি মৃতদেহের পাশেই ঠাঁই দাঁড়িয়েছিল গ্রামবাসীরা। সাদা কাপড়ে মোড়া মিরাজুল শেখকে দেখে চিৎকার করে লায়লা বিবি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ওঁর চেহারা কেন এমন হল। আমি ওঁর কাছে যাব। ওঁকে ভালো করে দেখব।” আত্মীয়েরা তাকে জোড় করে ধরে রাখতে পারছিলেন না। হাত ছিটকে বেরিয়ে কফিনের ভিতরে শুয়ে থাকা মৃত স্বামীর কাছে যেতে চাইছিলেন লায়লা বেওয়া। ছেলে হাইউলের ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখে বাবা হেজাব শেখ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ওঁ আমার ছেলে না। কাকে তোরা আমার কাছে এনেছিস। আমার ছেলে কোথায়? আমার ছেলে মারা যায়নি।” বাঙিটোলা পঞ্চায়েতের কংগ্রেস উপপ্রধান মানজারুল হোসেন আহমেদ বলেন, “এই মৃত্যুর পর ভিন রাজ্যে যাওয়ার প্রবণতা কমবে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.