|
|
|
|
ঠাণের বেআইনি বহুতল ভেঙে মৃত ৫০,
নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ |
সংবাদসংস্থা • ঠাণে |
সাততলা নির্মীয়মাণ বাড়িটি ভেঙে পড়ার পর ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় হয়ে গেল। যে দিকে তাকানো যায় চারপাশে শুধু ইট, পাথর, ধুলোর স্তূপ। পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। তারই মাঝে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। যদি কেউ বেঁচে থাকেন। নিকটজনের খোঁজ চালাচ্ছেন বাড়িটির বাসিন্দারাও। এরই মধ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০। মৃতদের মধ্যে ৯ মহিলা ১৯ জন শিশু রয়েছে। মৃতদের মধ্যে ১০ জন পশ্চিমবঙ্গের মালদহের বাসিন্দা। তাঁরা ওই বাড়িটিতে শ্রমিকের কাজ করতেন। আহতের সংখ্যা সত্তরের বেশি। বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন উদ্ধারকর্মীরা।
গত কাল সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ ঠাণের দাইঘর গ্রামের শিলফাটা এলাকায় নির্মীয়মাণ ৭ তলা বাড়িটি ভেঙে পড়ে। অনেক নির্মাণকর্মী তখনও সেখানে কাজ করছিলেন। নীচের কয়েকটি তলায় এরই মধ্যে ৩৫টি পরিবার থাকতে শুরু করে দিয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর। একটা কোচিং সেন্টার আর একটা দোকানও চালু ছিল ওই বাড়িতে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, যখন বাড়িটি ধসে পড়ে তখন কোচিং সেন্টারে অনেক ছেলেমেয়ে উপস্থিত ছিল। তাদের কয়েক জনের মৃতদেহ পরে ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আরও অনেকে চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা। |
|
ধসে পড়েছে বাড়িটির সাতটি তলাই। তার মধ্যেই চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: পিটিআই |
তদন্তে যে কথাটা উঠে আসছে তা হল, যে জমির উপর ওই বাড়িটি তৈরি হচ্ছিল তা বন দফতরের অধীন। নিয়ম অনুযায়ী সেখানে কোনও বাড়ি তৈরি করা যায় না। তা ছাড়া ওই বাড়িটি তৈরি করতে পুরসভার কাছ থেকেও কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। ব্যবহার করা হয়েছে খুব নিম্ন মানের সামগ্রী। এমনকী মহারাষ্ট্রের শ্রমমন্ত্রী হাসান মুশারিফ স্বীকার করে নিয়েছেন যে, কোনও ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে বাড়ির নকশা পর্যন্ত করানো হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা মঙ্গল পাটিল জানান, মাত্র ছ’সপ্তাহে বাড়িটি তৈরি হয়ে যায়। বেআইনি এই বাড়িটি নিয়ে ঠানে পুরসভায় তিনি অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে পর্যন্ত চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কেউ বাড়িটি পর্যবেক্ষণ করতে পর্যন্ত আসেননি। কংগ্রেস নেতা বসন্ত দাভাকার অভিযোগ করেছেন, এ রকম একশোর বেশি বেআইনি বাড়ি রয়েছে ঠাণেতে। বেশিরভাগই খুব নিম্ন মানের উপকরণ দিয়ে তৈরি। তাঁর মতে, এই বাড়িগুলো ভেঙে পড়লে হাজারের উপর মানুষ মারা যেতে পারে। মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার বিধায়ক রমেশ পাটিল অভিযোগ করেন, তিনিও এই বেআইনি নির্মাণ নিয়ে পুরসভায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশ ওই বেআইনি বড়িটির মালিক সলিল ও খলিল জমাদারের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত হত্যার মামলা দায়ের করেছে। তারা পলাতক। এ দিকে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে পুরসভার ডেপুটি কমিশনার-সহ দুই কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
আজ বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ, উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার এবং রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর পাটিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের আবেদন শুনে মুখ্যমন্ত্রী স্থানীয় প্রশাসকদের কাছে অনুরোধ করেছেন, মৃত শিশুদের দেহ ময়নাতদন্ত না করেই অভিভাবকদের হাতে দেহ তুলে দেওয়া যায় কি না। মুখ্যমন্ত্রী যখন হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়েছিলেন তখন জানা যায়, কয়েক জন ওই বাড়িতে নিখরচায় থাকতেন। মূল উদ্দেশ্য ছিল, বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে এলে তাদের বাড়িটির বাসিন্দা সাজিয়ে যাতে ভাঙা আটকানো যায়। বাড়িটা পুরোপুরি তৈরি হয়ে গেলে তাদের সেখান থেকে চলে যাওয়ার কথা ছিল। |
|
২৪ ঘণ্টা পরে উদ্ধার হয়েছে শিশুটি। ছবি: রয়টার্স |
দিল্লি থেকে কাজের সূত্রে মুম্বইয়ে এসেছিলেন ইমরান সিদ্দিকি। টাকা জমিয়ে নির্মীয়মাণ এই বাড়িটিতে একটা ফ্ল্যাট কিনেছিলেন ইমরান। থাকতেও শুরু করে দিয়েছিলেন ইমরান, তাঁর বাবা-মা, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শাকিলা-সহ আরও ১৫ জন আত্মীয়। আজ সকালে শাকিলার দেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ইমরানের আরও ১২ জন আত্মীয়ের দেহ। চহ্বাণকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন ইমরান। “বৌ, বাবা-মা কেউ রইল না। এ বার আমি কী করব?” কাতর ইমরানে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। অন্য দিকে দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরে ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে চার বছরের একটি মেয়েকে জীবন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু তার বাবা-মায়ের এখনও কোনও খোঁজ নেই।
বাড়িটিতে নির্মাণকর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন শান্তি যাদব। তিনি জানান, সন্ধে হয়ে আসায় কাজ বন্ধ করেছিলেন সবাই। কিন্তু ঠিকাদার তাঁদের কাজ চালু রাখতে বলেন। লরি থেকে ইট, চুন, সুরকি না নামালে তাদের কাজ থেকে বার করে দেওয়ার হুমকি দেন বলেও অভিযোগ করেন। তারা যখন লরি থেকে ইট নামাচ্ছিল তখনই হুড়মুড় করে গোটা বাড়িটাই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে।
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কম্যান্ডার অলোক অবস্তি জানান, ধ্বংসস্তূপের তলায় কেউ চাপা পড়ে রয়েছে কি না তা জানতে বিশেষ থার্মাল ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও দমকল কর্মীদের সঙ্গে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৯০ জন কর্মী ২৪ ঘণ্টা ধরে এক টানা উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন অলোক।
ঠাণের মেয়র হরিশ্চন্দ্র পাটিল বলেন, “দোষী ব্যক্তিদের ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত।” পুর কমিশনার আর এ রাজীব বলেন, “বেআইনি বাড়িটিতে দু’টি নোটিস পাঠানো হয়। বিদ্যুৎ দফতরকে বলা হয়েছিল বাড়িটির বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিতে। কিন্তু লোকবল এত কম যে সব কিছু জেনেও বাড়িটি ভাঙা যায়নি।” কোনও দুর্ঘটনা ঘটার পরে কে দায় নেবে তা নিয়ে চলে চাপান-উতোর। দোষী ব্যক্তিরা আড়ালেই থেকে যায়। শুধু মারা যান সাধারণ মানুষেরাই। |
এই সংক্রান্ত খবর... |
ছেলেদের দেহ ফেরার অপেক্ষায় মালদহের ২ গ্রাম |
|
|
|
|
|