কে কাকে সান্ত্বনা দেবেন?
পরপর পাশাপাশি ঘরে স্বজন হারানোর শোক।
এক সপ্তাহ আগে হরিয়ানার গুরুগাঁওয়ে কাজ করতে গিয়ে টাওয়ার থেকে পড়ে মালদহের পাঁচ জন শ্রমিক মারা যান। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না-কাটতে বৃহস্পতিবার জেলার মোথাবাড়ির লক্ষ্মীপুর, ছাক্কুটোলায় খবর পৌঁছে যায়, মুম্বইয়ে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে ওই দুই গ্রামের ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গ্রামের ১০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন একজন। দু’জন এখনও নিখোঁজ।
পুলিশ ও জেলাপ্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুম্বইয়ের ঠাণেতে ওই ঘটনায় মৃতদের নাম রাজিউল্লা শেখ (২৮), সাফিকুল ইসলাম (২৭), মাবুদ শেখ (২০), রাবিউল শেখ (২৪), বাবেল শেখ (২২), নুর বাকাস (২০), মিরাজুল শেখ (৩৭), আনারুল শেখ (২২), হাইউল শেখ (২৩) এবং হাবিব শেখ (১৯)। আট জনের বাড়ি ছাক্কুটোলায়। দু’জনের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। সকলেই নিম্নবিত্ত পরিবার। সকলের ঘরেই একই কান্না, এরপর কী হবে? মিরাজুলের স্ত্রী লায়লা বিবি চার সন্তানকে বুকে জড়িয়ে কাঁদছিলেন, “কেমন করে সংসার চালাব এ বার!” রাবিউল শেখের স্ত্রী জুলেখা বিবিও একই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি কেউ।
দেড় দশক আগে গঙ্গা ভাঙনে সব খুইয়ে ছাক্কুটোলার আমবাগানে আশ্রয় নেন মিরাজুল। সংসার চলছিল না। তাই আড়াই মাস আগে তিনি মুম্বই পাড়ি দেন। যেমন লক্ষ্মীপুরে মাধ্যমিক পাশ করে মাবুদ শেখও বোনের বিয়ের খরচ জোটাতে কাজের খোঁজে মুম্বই যান। |
এদিন দুপুরে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল ছেলের ছবি বুকে আঁকড়ে কাঁদছেন মাবুদের মা মংলি বিবি ও বাবা মন্টু শেখ। মন্টু বলেন, “ছেলের সঙ্গে গ্রামের যে ছেলেরা কাজ করতে গিয়েছিল তারাই খবর দিয়েছে।” ছোট বোন সুলেখা কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “বিয়ের খরচ জোটাতে দাদা মুম্বইয়ে না গেলে বেঁচে থাকত।”
ওই গ্রামের ও আশেপাশের এলাকার শতাধিক যুবক কাজের সন্ধানে মুম্বই পাড়ি দিয়েছেন। বাঙিটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মানজারুল হোসেন আহমেদ বলেন, “গ্রামে একশো দিনের কাজ করলে ১৩৬ টাকা পাবে। বাইরে কাজ করলে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দৈনিক পাচ্ছে। বেশি টাকা রোজগারের আশাতেই এলাকার ৬০ শতাংশ গরিব পরিবারের ছেলে ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছে।”
দু’টি গ্রাম এখন অপেক্ষা করছে কখন ফিরবে দেহগুলি। মুম্বই থেকে দ্রুত শ্রমিকদের দেহ মালদহে আনতে উদ্যোগী হয়েছেন পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী। তিনি বলেন, “দশটি দেহ আনতে মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে। শনিবারের মধ্যে মালদহে দেহ নিয়ে আসা সম্ভব হবে।” জেলাশাসক গোদালা কিরণকুমার জানান, রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মুখ্য সচিব ও দিল্লিতে রেসিডেন্স সেক্রেটারিকে ঘটনার কথা জানানো হয়েছে। জেলা শ্রম দফতরের সহকারী কমিশনার দেবু কর জানান, প্রতিদিন মালদহ থেকে বহু মানুষ ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাচ্ছে। কিন্তু কত মানুষ ভিন রাজ্যে গিয়েছেন সেই তালিকা নেই। তাঁর কথায়, “যাঁরা বাইরে কাজ করতে যান তাঁরা যদি আমাদের দফতরে নাম নথিভুক্ত করে বাইরে যেতেন, তা হলে দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে তাঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দেড় লক্ষ টাকা করে সাহায্য করা যেত।” মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু অবশ্য বলেছেন, “এই পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াবে রাজ্য সরকার।” |