সমতল শিলিগুড়িতে তৃণমূলকে বিঁধলেও দার্জিলিং পাহাড়ে গিয়ে রাজধর্ম পালন করলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। রবিবার দুপুরে শিলিগুড়িতে এক দলীয় সমাবেশে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অভিযোগ করেন, হেরে যাওয়ার ভয়ে তৃণমূল পঞ্চায়েত ভোট করতে চাইছে না। সন্ধ্যায় দার্জিলিঙে গিয়ে বিমল গুরুঙ্গদের তিনি স্পষ্ট ভাষাতেই জানিয়ে দিলেন, পাহাড়ে উন্নয়ন প্রসঙ্গে রাজ্যকে এড়িয়ে যেতে চায় না কেন্দ্র। উন্নয়নের কেন্দ্রীয় সাহায্য সরাসরি তাঁদের হাতেই দেওয়ার দাবি তোলেন গুরুঙ্গেরা। সেই দাবি অগ্রাহ্য করে জয়রাম বলেন, “ত্রিপাক্ষিক চুক্তি মেনে কেন্দ্র সরাসরি টাকা দিতে পারবে না। সেটা রাজ্যের মাধ্যমেই দিতে হবে। আমরা তাই-ই করব।” |
বিমল গুরঙ্গ ও জয়রাম রমেশ। দার্জিলিঙে। ছবি: রবিন রাই |
পাহাড়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার উপরেও জোর দিয়েছেন জয়রাম। সুবাস ঘিসিংয়ের আমলে পাহাড়ে একরকম একদলীয় শাসনই কায়েম ছিল, এখন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আমলেও পরিস্থিতি তেমনই রয়েছে বলে দাবি করেছে মোর্চা বিরোধী দলগুলি। গুরুঙ্গদের সামনেই জয়রাম সেই প্রসঙ্গেও কড়া বার্তাই দেন। তাঁর কথায়, “আমরা চাই না পাহাড়ে একদলীয় শাসন কায়েম হোক। সব দল যাতে নিজস্ব কর্মসূচি পালন করতে পারে, তা নিশ্চিত হওয়া জরুরি।” ওই সময়ে গুরুঙ্গকে দৃশ্যতই বিব্রত দেখা যায়। তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাঁরা সব দলকে মর্যাদা দেন বলেই ইদানীং জিএনএলএফ, তৃণমূল সব দলই দলীয় কর্মসূচি নিতে পারছে। তবে সেই সঙ্গেই তাঁরা পাহাড় থেকে সিআরপি তুলে নেওয়ার জন্যও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন। মোর্চা বিরোধী দলগুলির অবশ্য বক্তব্য, সিআরপি থাকার ফলেই সম্প্রতি তাঁরা পাহাড়ে সভা-সমাবেশ করতে পারছেন। জয়রাম গুরুঙ্গদের জানিয়ে দিয়েছেন, পাহাড়ে সিআরপি আরও থাকবে কি না, তা রাজ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দেখার বিষয়। |
শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার সভায় জয়রাম রমেশ। ছবি: সন্দীপ পাল |
কেন্দ্র যে দার্জিলিং পাহাড় নিয়ে আর কোনও সমস্যা চায় না, তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন জয়রাম রমেশ। দার্জিলিং পাহাড়ে আলাদা রাজ্যের দাবিতে ফের আন্দোলন তীব্র হলে তেলেঙ্গানা সহ দেশের অন্যত্রও একই দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কেন্দ্র তাই চায়, মোর্চা এখন শুধুই উন্নয়নে মনোনিবেশ করুক। দার্জিলিঙে গোর্খা রঙ্গ মঞ্চে জিটিএ চিফ গুরুঙ্গ ও অন্য সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের পরে সেই বার্তাই এই দিন সোজাসুজি বলেছেন জয়রাম। তাঁর কথায়, “কেন্দ্র, রাজ্য ও মোর্চার মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে জিটিএ গঠিত হয়েছে। এখন টানা পাঁচ বছর জিটিএ-এর মাধ্যমে পাহাড়ের উন্নয়ন করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমি গুরুঙ্গদের বলেছি, এখন পাহাড়ের উন্নয়ন ছাড়া অন্য কোনও আন্দোলনের কথা ভাববেন না। কারণ, অতীতে আন্দোলনের জন্য পাহাড়ের উন্নয়নে অনেক ব্যাহত হয়েছে।”
তবে গুরুঙ্গের অভিযোগ, রাজ্যই অনেক ক্ষেত্রে চুক্তি মেনে চলছে না বলে উন্নয়নে বিঘ্ন ঘটছে। গুরুঙ্গ বলেন, “আমরা তো উন্নয়নই করতে চাই। পাঁচ বছর জিটিএ চালাতে চাই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে রাজ্যই চুক্তি মেনে চলতে চাইছে না। সে জন্য সমস্যা হচ্ছে। সেটা কেন্দ্রকে দেখতে হবে।” তবে কেন্দ্র যে সেক্ষেত্রেও রাজ্যকে এড়িয়ে চলতে চায় না, তা-ও এই দিন খোলাখুলিই বুঝিয়ে দিয়েছেন জয়রাম রমেশ। বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের কাছে তিনি জানিয়ে দেন, কেন্দ্র, রাজ্য ও মোর্চা তিন পক্ষকে চুক্তি মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, “প্রয়োজনে যাতে ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়, সেই চেষ্টা আমাদের তরফে করা হবে।”
ঘটনাচক্রে, এদিনই কালিম্পঙে দলীয় সভা করেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। সেখানে নারী মোর্চার কালিম্পং শাখার প্রাক্তন সভাপতি নন্দিতা গৌতম তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তিনি মোর্চার নানা সমালোচনা করলেও মুকুলবাবু কিংবা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব কিন্তু মোর্চার বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি। বরং মুকুলবাবু বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই পাহাড়ে শান্তি ফিরেছে। উন্নয়ন হচ্ছে। তা দেখে পাহাড়ের মানুষ আমাদের সংগঠনের আসছেন। তবে আমরা সকলকে নিয়েই সেই উন্নয়নে গতি আনতে চাই।”
|