যুদ্ধং দেহি মনোভাব নিয়ে দিল্লি যাচ্ছেন মমতা
শুভেচ্ছার সুর কাটল জয়রামের মন্তব্যে
য়রাম রমেশের জন্মদিনে ব্যক্তিগত শুভেচ্ছাবার্তা পাঠালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা হাতে পেয়ে অভিভূত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বললেন, “কোনও মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে আমি এমন ব্যক্তিগত চিঠি পাইনি।” এবং নিজের অত্যন্ত প্রিয় ল্যামি পেন দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদও দিয়ে ফেললেন।
সেই জয়রামই রবিবার শিলিগুড়ির সভায় দাঁড়িয়ে ‘তানাশাহি’ চালানোর অভিযোগ তুলে কড়া ভাষায় বিদ্ধ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে। বললেন, “পঞ্চায়েত ভোট না হলে বরাদ্দ মিলবে না।” সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট করে দেন, “এটা হুমকি নয়। আইনেই বলা রয়েছে, এই প্রকল্পের টাকা শুধুমাত্র পঞ্চায়েতের হাতেই দিতে হবে।”
ফলে জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তায় কেন্দ্র-রাজ্য সুসম্পর্কের যে আবহ তৈরি হচ্ছিল, তা এক লহমায় ভেঙে গিয়েছে। তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা তো জয়রামকে পাল্টা জবাব দিয়েছেনই। এমনকী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, তিনি কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতের আবহ চাননি। সেটা কেন্দ্রীয় সরকারই তৈরি করছে। সুতরাং আগামিকাল তিনি দিল্লি যাবেন ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাব নিয়েই। পরশু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে তিনি জানাবেন, সমর্থন প্রত্যাহারের পর থেকে কী ভাবে শুধু পশ্চিমবঙ্গকে অর্থনৈতিক অবরোধের মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, শুভেচ্ছাবার্তা বিনিময়ের পরে জয়রাম কেন শিলিগুড়িতে গিয়ে এমন কড়া ভাষায় সরকারকে বিঁধলেন এবং পঞ্চায়েতের অর্থ সাহায্য বন্ধ করার কথা বললেন?
জয়রামের বক্তব্য, এই শুভেচ্ছা বিনিময় বা বন্ধুত্বের শর্ত মানে তৃণমূলের কাছে আত্মসমর্পণ নয়। বরং আত্মসম্মান রক্ষা করে চললে তবেই দু’টি দল বা সরকারের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হতে পারে। তিনি সেই কাজটাই করেছেন। পঞ্চায়েত ভোটের আবহে রাজ্যের শাসক দলকে আক্রমণ করাটাই তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক। কারণ, দলের কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত করাটাও তাঁর দায়িত্ব।
তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহারের আগে জয়রামের সঙ্গে মমতার সম্পর্ক ভাল ছিল। তখন তিনি মমতাকে যে সব চিঠি লিখতেন, তাতে নিজে হাতে লিখতেন ‘শ্রদ্ধেয়া দিদি’। সমর্থন প্রত্যাহারের পর জয়রামের চিঠির চরিত্র বদলে যায়। এ বারে জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তা বিনিময় ঘিরে আবার সেই উষ্ণতাই ফিরে এসেছিল। আগামী পরশু, ৯ এপ্রিল জয়রামের জন্মদিন। তার আগে এই শুভেচ্ছা। তারও আগে সম্প্রতি দিল্লিতে সংসদ ভবনের সামনে তৃণমূল সাংসদদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে রাজ্য নিয়ে আলোচনার জন্য মমতার কাছে এক ঘণ্টা সময়ও চেয়েছিলেন।
তার পরেও কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের নেতৃত্বের মধ্যে সম্পর্ক আর রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা এক নয়। শুভেচ্ছার বিনিময়ে জয়রাম অভিভূত চিঠি দিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু তার মানে এই নয়, রাজ্য সরকারের কোনও কিছু নিয়ে তিনি সমালোচনা করতে পারবেন না। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে এর মধ্যেই প্রদেশ কংগ্রেস রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব। সেখানে দলের কর্মী-সমর্থক তো বটেই, দীপা দাশমুন্সি এবং অধীর চৌধুরীর মতো জঙ্গি নেতাদের চাঙ্গা রাখতেই তাঁদের পক্ষ নিয়ে জয়রামের মুখ খোলা স্বাভাবিক। তা ছাড়া দীর্ঘদিন মমতার সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে কংগ্রেস নেতৃত্ব ভাল ভাবেই জানেন, তাঁর সঙ্গে নরমে-গরমে চলাটাই স্বাভাবিক। জয়রামও সেই কাজটাই করেছেন। এবং করেছেন আইন মেনেই। কারণ, পঞ্চায়েত আইনেই বলা হয়েছে, পঞ্চায়েত উন্নয়নের টাকা সরাসরি তাদের হাতেই যাবে। রাজ্যের মাধ্যমে যাবে না। কংগ্রেস সূত্রের আরও বক্তব্য, রাজ্য বা জেলা উন্নয়নের টাকা কিন্তু জয়রাম আটকাতে যাননি।
জয়রামের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মুকুল রায় থেকে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সকলেই জয়রামের অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন। মুকুলবাবুর বক্তব্য, “অন্ধ্রপ্রদেশে পঞ্চায়েত ভোট বন্ধ। মামলা চলছে। অথচ তারা সব থেকে বেশি টাকা পাচ্ছে। আর আমরা পঞ্চায়েত ভোট করতে চাইছি। ১৩ বার আলোচনা করেছি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে। তবু আমাদের টাকা আটকে দেওয়ার কথা হচ্ছে। এটা কি গণতন্ত্র!”
একই কথা বলেছেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, “অন্ধ্রেও পঞ্চায়েত ভোট হয়নি। জয়রাম আগে নিজের রাজ্য সামলান (জয়রাম অন্ধ্র থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভার সাংসদ)।” তাঁর বক্তব্য, “পঞ্চায়েতের টাকা বন্ধ করার অধিকার জয়রামের মতো কোনও মন্ত্রীর নেই। ওই টাকা আসে কাজের ভিত্তিতে। আমরা কাজ করতে পারলে কেন্দ্র টাকা দিতে বাধ্য।”
জয়রামের এই কথার প্রভাব মমতার আসন্ন সফরে পড়তে চলেছে। তিনি আগামিকাল দিল্লি আসছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঙ্গলবার তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা। রাজ্যের যোজনা বরাদ্দ নিয়েও মন্টেকের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে তাঁর। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দের সঙ্গেও বৈঠকে বসতে পারেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গকে যে অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে ফেলে ভাতে মারার চেষ্টা চলছে, তা নিয়ে অভিযোগ জানাবেন তিনি।
শ্রীলঙ্কা নিয়ে ইউপিএ সরকারের পাশে থাকলেও ফের তাদের শরিক হওয়ার সম্ভাবনা মমতা খারিজ করে দিয়েছেন। তবে মমতা-শিবির চাইছিল, জোট হোক বা না হোক, কেন্দ্রের সঙ্গে সুষ্ঠু সাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠুক। পঞ্চায়েত নির্বাচনে আধা-সামরিক বাহিনী থেকে দার্জিলিং, আর্থিক সহায়তা থেকে নিরাপত্তা সব বিষয়েই কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করা উচিত বলে মনে করেন মমতা নিজেও। অতীতে সিপিএম কেন্দ্রের নীতির বিরুদ্ধে যতই প্রকাশ্যে সরব হোক না কেন, মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুও বরাবরই কেন্দ্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলতেন। এনডিএ জমানায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও তাই করতেন। নবীন পট্টনায়ক থেকে নীতীশ কুমার কিংবা নরেন্দ্র মোদী, সকলেই এই কাজে দড়। মমতাও এ বারের দিল্লি সফরে ঝগড়াঝাঁটি চাইছিলেন না। রাজ্যের জন্য কিছু আদায় করতে চাইছিলেন।
শুভেচ্ছা বিনিময়ে তারই সূত্রপাত হয়েছিল। কিন্তু দিনের শেষে ফের ঘোর যুদ্ধের আবহ।

এই সংক্রান্ত খবর...
• পাহাড়ের উন্নয়নে রাজ্যকে নিয়েই চলতে চায় কেন্দ্র

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.