গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার এক নেত্রীকে দলে টেনে নিলেও বিমল গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে একটি কথাও উচ্চারণ করলেন না তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। রবিবার দুপুরে কালিম্পংয়ের গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের মাঠে তৃণমূলের জনসভায় মুকুলবাবু ছাড়াও ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সভায় মোর্চার কালিম্পং মহকুমার সভানেত্রী নন্দিতা গৌতম তৃণমূলে যোগ দেন। তিনি কয়েকদিন আগে মোর্চা থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। পাহাড়ে মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী করা হয়েছে তাঁকে। ওই সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুকুলবাবু স্পষ্ট করে দেন, পাহাড়ের উন্নয়নই তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য। মোর্চার সঙ্গে তাঁরা যে আর বিরোধ বাড়াতে চান না, গুরুঙ্গের নাম উচ্চারণ না করার মধ্যে দিয়ে সে বার্তাই মুকুলবাবু দিয়ে গিয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।
মুকুল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ের উন্নয়ন চান। আমি সেই উন্নয়নের বার্তা নিয়েই এসেছি। পাহাড়ের মানুষ এতদিন ভুল রাজনৈতিক পথে হাঁটছিলেন। তারা এখন মনে করছেন তৃণমূলে যোগ দিলে তাঁদের উন্নয়ন সম্ভব। তাই তারা দলে যোগ দিয়েছেন। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।” সভার মুকুলবাবুকে মোর্চা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “আমরা নিজেদের কথা জানাতে এসেছি। অন্য কোনও দল সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না।” |
কালিম্পঙে সভায়।—নিজস্ব চিত্র। |
দিন কয়েক আগে মোর্চার সভাপতি গুরুঙ্গ রাজ্য সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যপারে বলেন, “রাজনীতিতে কোন দলের সঙ্গে কখন কেমন সম্পর্ক হবে তা চূড়ান্ত ভাবে বলা যায় না। আজকে যার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ, আগামী দিনে তার সঙ্গে সম্পর্ক ভাল হতে পারে। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। যে কোনও সময় পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে।” তার পরে একই ধরনের মন্তব্য করেন মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরিও। ওই বক্তব্যর মধ্য দিয়ে রাজ্য সরকার সম্পর্কে তাদের সুর যে বর্তমানে অনেক নরম, তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মোর্চা নেতৃত্ব। এদিন মুকুলবুরাও রাজনৈতিক সভা করে মোর্চার উপর চাপ বাড়ানোর কৌশল নিলেও গুরুঙ্গ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য না করে সম্পর্ক উন্নতি করার বার্তা দিয়েছেন বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর।
এদিনের সভায় অবশ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া নন্দিতা গৌতম মোর্চা নেতাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, “মোর্চা কোনও উন্নয়ন করেনি। আমাদের ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা যে তিমিরেই ছিলাম সেখানেই আছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৩৪ বছর পরে সিপিএমকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। পাহাড়ে এসে উন্নয়নে বার্তা দিয়েছেন। আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস আছে তাঁর প্রতি। মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের পাহাড়ের সভানেত্রী হিসেবে দলের সংগঠন মজবুত করাটাই এখন আমার মূল লক্ষ্য।” গৌতমবাবুর বক্তব্যে ছিল উন্নয়নের কথাই। তিনিও বলেন, “পাহাড়ে উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সকলকে নিয়ে চলতে চাই।”
মাস দেড়েক আগে একটি লেপচা সংগঠনের অনশন তুলতে গিয়ে মোর্চা সমর্থকদের হামলার মুখে পড়তে হয় গৌতমবাবুকে। সে দিক থেকে এ দিন যাতে কোনও গণ্ডগোলের ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সভাকে ঘিরে ব্যাপক পুলিশি ব্যবস্থা ছিল। রাস্তার দু’ধারেও সিআরপি টহল চলে। সভায় লেপচা সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রায় ১৫০ জন সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। মিটিংয়ের পর লেপচাদের সঙ্গে একটি বৈঠকও করেন মুকুলবাবু। এ দিন একটি বহুতল থেকে তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য শোনেন মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিনয় তামাং। তিনি বলেন, “আমাদের দলের থেকে বহিষ্কৃত দু’একজন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তৃণমূল নেতারা মোর্চা নিয়ে কোনও কথা বলেননি। আমরাও বেশি কিছু বলতে চাই না।” |