|
|
|
|
ডাল লেক হত্যাকাণ্ড |
নেশার ঘোরেই খুন, ডাচ যুবকের বয়ান বাড়াল ধন্দ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ঠিক ছিল ডাল লেকের হাউসবোটটাতে চার দিন মতো কাটাবেন। কিন্তু কাশ্মীরের নৈসর্গিক সৌন্দর্য এতই ভাল লেগে গিয়েছিল বছর চব্বিশের তরুণীর, গত দু’মাস ধরে সেখানেই ছিলেন। আর প্রাণ গেল বড় প্রিয় সেই হাউসবোটেই। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত কাল ওই বোটের সহযাত্রী এক ডাচ পর্যটককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পুলিশি জেরার মুখে সেই রিচার্ড ডিউইট স্বীকার করেছে সেই খুনি।
দারুণ অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী ছিলেন সারা গ্রোভস। ২০১২ সালে কিলিমাঞ্জারোয় উঠেছিলেন। ছিলেন ফিটনেস ইনস্ট্রাক্টর, একা একাই এশিয়া-আফ্রিকার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াতেন। এ বারে ভারতে এসেছিলেন সেই অ্যাডভেঞ্চারের নেশাতেই। গোয়ায় আলাপ হয় সমীর শোড়ার সঙ্গে। সম্পর্ক গড়ে ওঠে দু’জনের মধ্যে। পরে বান্ধবীকে নিয়ে কাশ্মীরে নিজের বাড়িতে এসেছিলেন সমীর। তিনি এ-ও জানান, ভবিষ্যতে দু’জনে হয়তো বিয়েও করতেন। ডাল লেকের ওই হাউসবোটটিও সমীরদেরই ছিল। সেখানেই থাকতে শুরু করেন সারা। তিন দিন আগেই বোটের অন্য একটি কেবিনে উঠেছিল নেদারল্যান্ডসের পর্যটক ডিউইট। তার পরেই শনিবারের এই ঘটনা।
ডিআইজি আহাফাদুল মুজতবা বলেন, “ডিউইট স্বীকার করেছে, সে-ই মেয়েটিকে খুন করেছে। কিন্তু কেন সে এ রকম করল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ডিউইট আরও জানিয়েছে, সে মাদক (ক্যানাবিস) নিয়েছিল। নিশ্চিত হতে রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।” তবে যৌন উদ্দেশ্য যে ছিল না, এখনই সে বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় পুলিশ। আবার মেয়েটিকে যৌন হেনস্থা করা হয়েছিল, এমন প্রমাণও ঘটনাস্থল থেকে মেলেনি। কাশ্মীর পুলিশের একটি সূত্রের বক্তব্য, শুক্রবার রাতে ডিউইট খুব বেশি পরিমাণে ক্যানাবিস নিয়েছিল। মাঝরাতে নিজের কেবিনে ফেরে সে। নেশার ঘোরে তার মনে হয়েছিল, সারা তাকে মেরে ফেলবেন। তাই নিজেই জোর করে তাঁর কেবিনে ঢুকে পড়ে। হত্যা করে সারাকে।
হাউসবোটের মালিক, সমীরের বাবা আব্দুল রহিম শোড়া জানান, তিনি ও ছেলে ইরফান রাত আড়াইটে নাগাদ সারার দেহটা দেখতে পান। মাঝরাতে বীভৎস একটা আর্তনাদ শুনে ছুটে গিয়েছিলেন ইরফান। জানালেন, দরজা ভাঙাই ছিল। ঘরে ঢুকে দেখেন, রক্তে ভেসে যাচ্ছে তরুণীর শরীর, গলা কাটা, বুকে ছুরির কোপ। হাতে একটা ফোন ধরা ছিল সারার। ইরফান বললেন, “ও হয়তো আমাদেরই খবর দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। মায়ের ফোনে একটা মিসড কল রয়েছে ওর।” এর পরই তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পরে পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিশেষ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আব্দুল। সেখান থেকে ফেরার পথে এক অটোচালককের থেকে জানতে পারেন, সাত ফুটের মতো লম্বা এক বিদেশিকে তিনি যেতে দেখেছেন। পায়ে জুতো ছিল না, সারা গা-জামাকাপড় জবজবে ভিজে ছিল তার। ওই অবস্থাতেই সে একটা গাড়িতে উঠে পড়ে। অটোর চালকের কাছ থেকে গাড়িটির নম্বর নিয়ে নেন আব্দুল। পুলিশকে খবর দেন সঙ্গে সঙ্গেই।
পুলিশের এক কর্তা জানান, নিজের সব জিনিসপত্র ফেলে শুধুমাত্র পাসপোর্ট নিয়ে পালাচ্ছিল ডিউইট। বোট থেকে জলে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে ডাঙায় উঠে সে। কিন্তু সফল হয়নি। শ্রীনগর থেকে ৪৫ মাইল দক্ষিণে কোয়াজিগুন্দ-এ ধরা পড়ে ডিউইট।
সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে এ দেশে মেয়েদের উপর একের পর এক যৌন হেনস্থা, ধর্ষণ-শ্লীলতাহানির ঘটনা গোটা দুনিয়ার অজানা নেই। কিছু দিন আগেই এক সুইস মহিলাকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে মধ্যপ্রদেশে। সম্মান বাঁচাতে হোটেলের বারান্দা থেকে ঝাঁপ দেন এক ব্রিটিশ তরুণী। এ সব শুনে কিছু দিন আগেই সারার এক বন্ধু সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বলেছিলেন, “সাবধানে থেকো, চোখকান খোলা রেখো।” জবাবে সারা বলেছিলেন, “যত দূর সম্ভব, সাবধানে থাকব।” |
পুরনো খবর: হাউসবোটে কুপিয়ে খুন ব্রিটিশ তরুণীকে |
|
|
|
|
|