পিয়ালির ঘর থেকে পাওয়া সুইসাইড নোট নিয়ে রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। ওই নোটটি পিয়ালির হাতের লেখা কি না, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। হাতের লেখা মিলিয়ে দেখতে শুধু রাজারহাটের ফ্ল্যাট থেকে পাওয়া পিয়ালির খাতাপত্রই নয়, তদন্তকারীরা বর্ধমানের বাড়ি থেকেও পিয়ালির হাতে লেখা কিছু নোটবই, খাতা ও ডায়েরি নিয়ে গিয়েছেন। হস্তলিপি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বর্ধমান থেকে সংগ্রহ করা পিয়ালির হাতের লেখার সঙ্গে সুইসাইড নোটটি মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।
পিয়ালির মৃত্যুর প্রায় দুই সপ্তাহ পরে এখনও অনেক জটই খোলেনি। ঘটনার দিন পিয়ালির ফ্ল্যাটের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সে রকমই সুইসাইড নোটের উপরেও জোর দিচ্ছেন তদন্তকারী অফিসাররা। পিয়ালির ভাই প্রীতম বলেন, “দিদির হাতের লেখা আমি চিনি। সেদিন সুইসাইড নোটটা আমাদের এক ঝলক দেখিয়েই নিয়ে নেয় পুলিশ। কাঁপা কাঁপা হাতে লেখা ওই সুইসাইড নোট প্রাথমিক ভাবে দিদির বলে মনে হলেও আরও নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।”
ঘটনার দিন অর্থাৎ ২৬ মার্চ পিয়ালির মৃত্যুর খবর পিয়ালির বাড়ির লোকেরা দুপুরে পেয়েছেন বলে দাবি করলেও পিয়ালির স্বামী সুভাষ চক্রবর্তী বিষয়টি জানতে পারেন সন্ধ্যায়। তদন্তকারী অফিসারদের কথায়, বন্ধ দরজার ভেতরে এক জন মহিলা আত্মহত্যা করেছেন এটা কী ভাবে রটল, এটা এখনও পরিষ্কার নয়। সেই সঙ্গে পিয়ালির স্বামীকে কেন খবরটা তখনই জানানো হল না, তারও উত্তর খুঁজছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন দুপুরে সুভাষের কাছে প্রথমে একটি অজানা নম্বর থেকে দু’বার ফোন আসে। অন্য প্রান্ত থেকে অস্পষ্ট ভাবে কিছু কথার পর ফোন কেটে যায়। ফের একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে বিকেলে। সেই ফোনে পিয়ালি সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে চেয়েও না বলে ফোনটা ছেড়ে দেন। তখন সুভাষ নিজে উদ্যোগী হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ ফোন করেন বর্ধমানের এক তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের নেতাকে। ওই নেতা সুভাষকে জানান, পিয়ালির দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর পর সুভাষ বিভ্রান্ত হয়ে এক মন্ত্রীকে ফোন করে জানতে চান, কী হয়েছে। সেই মন্ত্রী তখন তাঁকে ফোনে জানান, পিয়ালি ঘরের দরজা অনেক ক্ষণ থেকে বন্ধ। দরজা ভাঙা হবে। তিনি যেন তাড়াতাড়ি কলকাতায় পিয়ালি ফ্ল্যাটে চলে আসেন। প্রশ্ন উঠেছে পিয়ালির স্বামীকে পিয়ালি সম্পর্কে খবর দিতে কেন এত দেরি? কেনই বা দুর্ঘটনার কথা বলা হল? পিয়ালির পরিবার যদি দুপুরেই পিয়ালি সম্পর্কে খবর পেয়ে থাকে, তা হলে কেন তারা সে কথা সুভাষকে জানাল না? যে নম্বরগুলো থেকে পিয়ালির স্বামীর কাছে ফোন আসে, সেই নম্বরগুলো কার?
পুলিশ জেনেছে, ঘটনার আগের দিন রূপকথা পিয়ালির ফ্ল্যাটে ছিলেন। সঙ্গে আরও এক যুবক ছিলেন। সেই যুবক চলে যান সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ। সকাল সাড়ে ন’টায় পিয়ালির ফ্ল্যাট থেকেই রূপকথা অফিসে যান। ঘটনা ঘটে তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। ঘটনার আগের রাতে কী হয়েছিল, পিয়ালির মানসিক অবস্থা কেমন ছিল, সকালে আর কেউ ফ্ল্যাটে এসেছিলেন কি না, এ নিয়ে রূপকথাকে পুলিশ জেরা করছে। তবে সংবাদমাধ্যমকে রূপকথা ফোনে বলেছেন, “যা বলার পুলিশকে বলেছি।” |