সুদীপ্তর মৃত্যু
প্রতিবাদের ধরনে ক্ষোভ বাম শিবিরে
কালে হারাতে হয়েছে তরুণ এক নেতাকে। কিন্তু তার প্রতিক্রিয়ায় প্রতিবাদের চেহারা কেমন হওয়া উচিত ছিল, তা নিয়ে মতের ফারাক দেখা দিয়েছে বামফ্রন্টের অন্দরে।
পুলিশি হেফাজতে ছাত্র-নেতা সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুকে হাতিয়ার করে বাম ছাত্র-যুবদের পথে নামিয়ে অনেক বড় আন্দোলন করা যেত বলে বাম শিবিরের একাংশ মনে করছে। কিন্তু প্রতিবাদ কর্মসূচিতেও সিপিএমের একতরফা মনোভাবে ক্ষুব্ধ বাম যুব শিবিরের একাংশ। ভবিষ্যতে তারা সিপিএমের যুব সংগঠনের সঙ্গে একত্রে কর্মসূচিতে যাবে কি না, তা নিয়েও শুরু হয়েছে ভাবনা!
পুলিশ ও রাজ্য সরকারের বক্তব্য, ২ এপ্রিল নিছক দুর্ঘটনায় দুর্ভাগ্যজনক ভাবে প্রাণ গিয়েছে সুদীপ্তর। কিন্তু আন্দোলনকারীদের দাবি, বাস থেকে পড়ে আহত হওয়ার পরে পুলিশের লাঠি পড়েছিল সুদীপ্তর উপরে। ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছে বামফ্রন্ট। আদালতে সিবিআই তদন্তের দাবি জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সুদীপ্তর পরিবার। সেখানেও সাহায্য করছেন সিপিএম নেতারা। কিন্তু শরিকদের এবং সিপিএমেরই একাংশের আক্ষেপ, এমন বেনজির ও গুরুতর ঘটনার পরেও ততটা সক্রিয় হয়ে ময়দানে নামা হল কই! তাদের মতে, ছাত্র ধর্মঘট বা স্থানীয় ধর্মঘটে সীমাবদ্ধ না-থেকে অনেক দূর যাওয়া যেত।
এক শরিক নেতার কথায়, “আমাদের উচিত ছিল ৪ তারিখ গোটা রাজ্যে বন্ধ ডাকা। ছাত্র-যুবদেরই নামিয়ে রাজ্য স্তব্ধ করা!” সিপিএমেরই রাজ্য কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, “এটা এমন একটা ঘটনা, যা নিয়ে গ্রিস, হাঙ্গারি, কাতারের মতো বাইরের দেশ থেকে আমাদের দলের কাছে বার্তা এসেছে। অথচ প্রতিবাদের সময় আমরা দ্বিধা ঝেড়ে উঠে দাঁড়াতে পারলাম না!” সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ অবশ্য মনে করেন, বিরোধী হিসেবে বামেরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে আসছে। এই ঘটনায় ‘বাড়াবাড়ি’ করলে সেই ভাবমূর্তির ক্ষতি হত। সংবাদমাধ্যমের একাংশ সুদীপ্ত-কাণ্ডে বামেদের সমালোচনা করছে। বড় কিছু করতে গেলে আরও সমালোচনা হত। কিন্তু ফ্রন্টের অন্য অংশ সংবাদমাধ্যমের মতকে গুরুত্ব দিতে নারাজ।
এরই মধ্যে সমস্যা বেধেছে সিপিএমের যুব শাখার কার্যকলাপে। শরিকদের যুব নেতৃত্বের একাংশের অভিযোগ, একসঙ্গে আন্দোলনে নামার কথা বলেও কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার মতো জেলা বাদে বিভিন্ন জায়গায় ডিওয়াইএফআই নিজেদের মতো কর্মসূচি করে নিয়েছে। সুদীপ্তের ঘটনার দিন থেকেই প্রতিবাদী কর্মসূচি ঠিক করার ব্যাপারে সক্রিয় ছিলেন প্রবীণ ফব নেতা অশোক ঘোষ। অথচ তাঁর দলের যুব সংগঠনও জেলায় জেলায় প্রতিবাদের সময় উপেক্ষিত হয়েছে। সিপিএম নেতারা শুধু বলছেন, কোথাও অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি হয়ে থাকতে পারে।
সিপিএম অবশ্য সুদীপ্ত-অস্ত্র জিইয়ে রাখতে সচেষ্ট। দিন দশেকের মধ্যে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বড় স্মরণসভা হবে। অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে মহিলা সমিতি সম্ভাব্য সব সংগঠনকে প্রতিদিন পথে নামানোরও চেষ্টা হচ্ছে। সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “সুদীপ্তের দিদির কিছু মন্তব্যকে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে কোথাও কোথাও। কিন্তু ওর বাবা এই পুত্রশোকেও যে ভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, আমাদের সকলের জন্য তা শিক্ষণীয়। আর এক আহত ছাত্র জোসেফ হোসেনের বাবা বলেছেন, ভবিষ্যতেও ছেলেকে এগিয়ে দেবেন। এই অপূরণীয় ক্ষতির সময়েও এগুলো আমাদের প্রাপ্তি।” রবিবার সকালেও সুদীপ্তর বাবা প্রণব গুপ্তের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন রবীন দেব, তাপস সিংহ, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়েরা।
শোক মিটলে প্রতিবাদের ময়না তদন্তে অবশ্য কিছু কাঁটা অপেক্ষা করছে সিপিএম নেতৃত্বের জন্য!

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.