সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুর ৭২ ঘণ্টা পরে সিবিআই তদন্তের দাবি নিয়ে শুক্রবার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করলেন প্রয়াত ছাত্র নেতার বাবা প্রণব গুপ্ত ও দিদি সুমিতা সেনগুপ্ত। রাজভবনে তাঁদের নিয়ে গিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে সুদীপ্তর বাবা ও দিদি সিবিআই তদন্তের দাবি জানান। ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশি কী কী মামলা দায়ের করেছে, তার সবিস্তার রাজ্যপালকে জানান সুমিতা। রাজ্যপাল গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের কথা শুনেছেন বলে জানিয়েছেন প্রণববাবু। সুদীপ্তর দিদির দাবি, সব কিছু শোনার পরে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন বলে রাজ্যপাল তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ঘটনার পরে দু’দিন পেরিয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেননি। তাই আমরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। ভাইয়ের মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত চাই।” পুলিশি তদন্তে তাদের আস্থা নেই বলেও জানিয়েছে ওই পরিবার। এ দিকে, সুদীপ্তর মৃত্যুর ঘটনায় এ দিন আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের আর্জি জানাল কলকাতা পুলিশ। শুক্রবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে এই আর্জি জানান কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা। কলকাতা পুলিশের হয়ে আবেদন করেন হেস্টিংস থানার ওসি। পুলিশের ওই শীর্ষ কর্তা বলেন, “সিআরপিসি-র ১৭৬ ধারা অনুযায়ী এই আর্জি জানানো হয়েছে।” |
এ দিন সকালে নিউ গড়িয়ার ঢালুয়ায় সুদীপ্তর বাড়িতে যান সূর্যকান্ত মিশ্র এবং সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী। সুদীপ্তর দিদি সূর্যবাবুর কাছে অভিযোগ করেন, “আমার ভাই অনেক বড় নেতা হয়ে গিয়েছিল। তাই ওকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “উনি তো সব মৃত্যুর ঘটনায় সবার বাড়িতে আসেন। কিন্তু আমাদের বাড়িতে এলেন না! সে দিন ঘটনার পরে তিনি স্টেডিয়ামে নাচগানের অনুষ্ঠান দেখছিলেন। মনে হয়, উনি শুধু তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী।”
রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁদের দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য সূর্যবাবুকে অনুরোধ করেন সুমিতাদেবী। পরে নিউ গড়িয়া থেকে ডায়মন্ড হারবারে আরও এক জখম এসএফআই কর্মীকে দেখতে যাওয়ার পথে ফোনে রাজভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সূর্যবাবু। রাজ্যপালের অফিস থেকে বিকেল পাঁচটায় সাক্ষাৎকারের সময় দেওয়া হয়। এর পরেই সুজনবাবু সোনারপুরের প্রাক্তন বিধায়ক শ্যামল নস্করকে সুদীপ্তর বাবা ও দিদিকে নিয়ে বিধানসভায় আসতে বলেন। সেখান থেকেই সূর্যবাবুর সঙ্গে রাজভবন যান তাঁরা। সূর্যবাবু বলেন, “ওই পরিবারের তরফে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। আমরা ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ওঁরা সিবিআই তদন্ত চেয়েছেন। আমরা ওই পরিবারের পাশে রয়েছি।”
সুদীপ্তর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তদন্তে নেমে এ দিন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের এডিজি এলএল ডঙ্গল ও রেজিষ্ট্রার রবীন্দ্রনাথ সামন্ত রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পরিদর্শন করেন। তারপর হেয়ার স্ট্রিট থানার কয়েক জন তদন্তকারী অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে নার্সিংহোমে গিয়ে জখম হোমগার্ড বিশ্বজিৎ মণ্ডল এবং এসএফআই নেতা জোসেফ আজম হোসেনকেও জেরা করেন তাঁরা। |