পাকড়াও এক শাগরেদ
হাঙ্গামা পাকাতে যাইনি, সাফাই দিতে ব্যস্ত কাও
ধাপার মাঠপুকুরে তৃণমূল নেতা অধীর মাইতি খুনের পরে ১৫ দিনেরও বেশি গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন তিনি। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সেই শম্ভুনাথ কাও কিন্তু গোয়েন্দাদের জেরায় দাবি করছেন, ২০ মার্চ ওই এলাকায় গোলমাল শুরু হওয়ায় তিনি অধীরবাবুকে সতর্ক করে দিয়ে সরে যেতেই বলেছিলেন। তিনি মোটেই হাঙ্গামা পাকাতে যাননি। দলবল নিয়েও যাননি। তদন্তকারীরা অবশ্য মনে করছেন, পুলিশকে বিভ্রান্ত করতেই এমন দাবি করছেন কাও। তাঁর ডানহাত অজয় দলুইকে রবিবার গ্রেফতার করা হয়েছে। সে অধীরবাবুকে মারধর করে খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত।
অজয় ধরা পড়ায় মূল অভিযুক্ত কাওয়ের বিরুদ্ধে মামলা দাঁড় করাতে পুলিশের হাত আরও শক্ত হল বলে মনে করছেন লালবাজারের কর্তারা। পুলিশি সূত্রের খবর, কাও এখনও প্রাণপণে গোয়েন্দাদের বোকা বানানোর চেষ্টা করছেন। জেরায় কাও সহজে ভাঙছেন না। তদন্তকারীদের বক্তব্য, একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে কাওয়ের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। ফেরার থাকাকালীনও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আইনি পরামর্শ নিয়ে চলছিলেন তিনি। তাই পুলিশের কোন প্রশ্নের কী জবাব দিতে হবে, সেটা ভালই জানা আছে কাওয়ের।
ওই অভিযুক্ত কী ভাবে পুলিশকে বোকা বানাতে চাইছেন বলে মনে করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা?
তদন্তকারীরা বলছেন, নিজের দল তৃণমূলের নেতাদের একাংশই তাঁর বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছে বলে কাও দাবি করছেন। অথচ তিনি কোনও নেতার নাম করেননি। এটা পুলিশকে বিভ্রান্ত করারই চেষ্টা। গোয়েন্দারা বলছেন, মাঠপুকুরে অধীরবাবুকে খুনের দিন তিনি ঘটনাস্থলে কী করছিলেন, তার জবাবেও পুলিশকে বিভ্রান্ত করে চলেছেন কাও। পুলিশের কাছে তাঁর দাবি, মাঠপুকুরে গোলমালের দিন পুরকর্মীরাই বিতর্কিত জমি মাপতে গিয়েছিলেন। এই কাজে তাঁর কোনও ব্যক্তিগত স্বার্থ ছিল না। লালবাজারের জেরার মুখে ধৃত তৃণমূল কাউন্সিলর জানান, তিনি ঘটনাস্থলে শান্ত হয়েই ছিলেন। যা করেছেন, দলের নেতাদের জানিয়ে করেছেন। তিনি সঙ্গে কাউকেই নিয়ে যাননি। শুধু ওই তল্লাটে যাতে কোনও গোলমাল না-হয়, তা দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি যে গা-ঢাকা দিচ্ছেন, দলীয় নেতাদের অনেকেই তা জানতেন।
তবে লালবাজারের কর্তারা জানান, বিতর্কিত জমিতে নির্মাণকাজ নিয়ে অধীরবাবুর আপত্তির কথা তিনি জানতেন বলে কাও স্বীকার করেছেন। তাঁর আরও দাবি, ঘটনার দিন চিৎকার-চেঁচামেচি হচ্ছে দেখে তিনিই অধীরবাবুকে সরে যেতে বলেন। একটু পরেই খুনের কথা জানতে পারেন। ওই খুনে তাঁর কোনও প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল না বলেই কাওয়ের দাবি। নিহত অধীরবাবুর স্ত্রী অনিতা মাইতির বয়ানে অবশ্য অন্য তথ্য উঠে এসেছে। পুলিশের কাছে অনিতাদেবী জানান, ঘটনার দিন সকালে তাঁর স্বামীর মোবাইলে ফোন করে তাঁকে খাটাল এলাকায় ডেকে পাঠান কাও। ফোন আসে বেশ কয়েক বার। অধীরবাবুর যেতে দেরি হওয়ায় তাঁকে ধমকও দেন কাও। কাওয়ের মোবাইলের কললিস্টের সূত্রেও ইতিমধ্যে বিষয়টি যাচাই করেছেন গোয়েন্দারা।
অধীর-খুনে কাওয়ের ভূমিকা প্রমাণ করতে তথ্য জোগাড়ের সঙ্গে সঙ্গে ওই তল্লাটে প্রোমোটার-চক্রের সঙ্গে কাওয়ের দহরম মহরম প্রমাণেরও চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। কাওয়ের সম্পত্তির পরিমাণ থেকেও তাঁর বেআইনি কাজ-কারবারের বহর মালুম হচ্ছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। ওই কাউন্সিলরের সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্য আয়কর দফতরকেও জানাচ্ছে পুলিশ।
এত দিন কাওয়ের সঙ্গে তাঁর শাগরেদ অজয়কেও হন্যে খুঁজছিলেন গোয়েন্দারা। পুলিশের দাবি, বহুতল নির্মাণ নিয়ে গোলমালে অধীরবাবুকে মারধর করে খুনের ঘটনায় অজয়ও প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত। রবিবার দুপুরে মাঠপুকুর থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশি সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরপ্রদেশের বালিয়ায় কাও ধরা পড়ার পরেই ভেঙে পড়েছিল অজয়। সে বুঝে যায়, আর বেশি দিন পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বাঁচা যাবে না। মাটি বা বালি বোঝাই লরি থেকে টাকা তুলতে অজয়ই কাওয়ের ডানহাত ছিল বলে পুলিশ জানায়। পরিস্থিতি বুঝতেই বেশ কয়েক দিন পরে সে অজ্ঞাতবাস ছেড়ে মাঠপুকুরে ঢুকেছিল। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ তাকে ধরে। এর আগে শ্যামল মুখোপাধ্যায়-সহ কাওয়ের অন্য দুই শাগরেদ ধরা পড়েছে। ট্যাংরা থানা এলাকায় কাওয়ের পরিচিত এক মহিলার ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পালিয়ে বেড়ানোর সময় ওই মহিলার সঙ্গেও কাও যোগাযোগ রেখে চলছিলেন বলে জানায় পুলিশ।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.