মমতা কঠোর, দলীয় কৌঁসুলি জোটেনি কাওয়ের
ক যাত্রায় পৃথক বন্দোবস্ত!
গার্ডেনরিচের হাঙ্গামায় মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না বা ভাঙড়ের গোলমালে আরাবুল ইসলামকে পুলিশ ধরলেও তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ আইনজীবীদের সহায়তা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হননি। কিন্তু ধাপার মাঠপুকুরে দলীয় নেতা অধীর মাইতি হত্যায় ধৃত তৃণমূল কাউন্সিলর শম্ভুনাথ কাও সেই সুযোগ পাচ্ছেন না।
খুনের মামলায় শনিবার শাসক দলের কাউন্সিলর কাওকে আলিপুর কোর্টে তোলা হলে তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ কোনও আইনজীবীকে তাঁর হয়ে সওয়াল করতে দেখা যায়নি। এর ফলে কাওয়ের বিষয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব তথা মুখ্যমন্ত্রীর কী অবস্থান, তা নিয়েও প্রশ্ন দানা বাঁধছে। তৃণমূলের রাজ্য স্তরের এক নেতার দাবি, “মুন্না বা আরাবুলের উপরে মুখ্যমন্ত্রী রুষ্ট হয়েছিলেন ঠিকই। তবে প্রকাশ্যে তাঁদের নাম করে কখনও কিছু বলেননি। কিন্তু কাওকে গ্রেফতার করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নিজে জনসভায় দাঁড়িয়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এটা পুরোপুরি ভিন্ন পরিস্থিতি।” কাওকে দল থেকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
ভাঙড়ে সিপিএম বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাকে নিগ্রহের অভিযোগে তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্রভাবশালী নেতা আরাবুলকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তবে তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ আইনজীবীরা তাঁর হয়ে আদালতে সওয়াল করেন। গার্ডেনরিচের হাঙ্গামায় গুলিবিদ্ধ হয়ে এসআই তাপস চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় ধৃত তৃণমূল কাউন্সিলর তথা বরো চেয়ারম্যান মুন্নাকে গ্রেফতারের পরেও তাঁকে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ব্যতিক্রম কাও। আলিপুর কোর্টে যে-সব আইনজীবী কাওয়ের হয়ে সওয়াল করেন, তাঁদের কেউই তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত নন। এই ভিন্ন ব্যবস্থা কেন? কাওয়ের বিষয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরূপ মনোভাবই এর পিছনে কাজ করছে বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। আরাবুল বা মুন্নার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল ওঠার পরেও সরাসরি তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করেননি মুখ্যমন্ত্রী। আর গত ২০ মার্চ ধাপার মাঠপুকুরে খুনের কথা জানাজানি হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাঁকুড়ার একটি জনসভায় মমতা নির্দেশ দেন, অবিলম্বে কাওকে গ্রেফতার করতে হবে। পুলিশকে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, শাসক দলের কাউন্সিলর হলেও কাওকে যেন এতটুকু রেয়াত করা না-হয়। মুখ্যমন্ত্রীর এই স্পষ্ট ঘোষণা শুধু প্রশাসনের জন্য নয়, প্রকারান্তরে তাঁর দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি বার্তা বলেও মনে করছেন রাজনীতি জগতের কলাকুশলীরা। তৃণমূলের শীর্ষ স্তর থেকেও দ্রুত নির্দেশ যায় দলের নিচু তলায়। জানিয়ে দেওয়া হয়, মুুখ্যমন্ত্রী চাইছেন না দলের কেউ কাওয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখুক।
কাওয়ের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর এই অবস্থানের কথা জেনেই তাঁকে আইনি সাহায্য করা থেকে তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ আইনজীবীরা পিছিয়ে এসেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। গত বছর শিল্প ধর্মঘটের দিন গাঙ্গুলিবাগানে সাংবাদিক-নিগ্রহ এবং সিপিএম পার্টি অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় কলকাতা পুলিশের অভিযুক্ত কনস্টেবল তারক দাসের পক্ষে একাধিক বার সওয়াল করেছিলেন তৃণমূলের বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। এমনকী ২৩ জানুয়ারি আলিপুর ছেড়ে বারুইপুর মহকুমা আদালতে গিয়ে আরাবুলের জামিনের আবেদনের পক্ষে সওয়াল করেন বৈশ্বানরবাবু। আলিপুর জেলা দায়রা আদালতেও আরাবুলের হয়ে একাধিক বার সওয়াল করেছেন তিনি। বেশ কয়েক বার আলিপুর জেলে গিয়েও আরাবুলের সঙ্গে আইনি শলাপরামর্শ করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
গার্ডেনরিচ কাণ্ডে মুন্নার ক্ষেত্রেও বৈশ্বানরবাবুকে একই ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। মুন্নাকে আইনি পরামর্শ থেকে শুরু করে তাঁর জামিনের আবেদনের সওয়াল সব কিছুতেই এগিয়ে এসেছেন তিনি। দেশপ্রিয় পার্কে নিজের অফিসে তিনি মুন্নার আত্মীয়দের সঙ্গেও দেখা করছেন।
আলিপুর আদালত সূত্রের খবর, বৈশ্বানরবাবু আলিপুর আদালতে সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে প্যানেলভুক্ত। তা সত্ত্বেও তৃণমূলের সব নেতা-কর্মীর মামলার জামিনের আবেদনের সওয়াল করেন তিনি। তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা বলেন, “কোনও পারিশ্রমিক না-নিয়েই তৃণমূলের মামলার সওয়াল করেন বৈশ্বানরবাবু।” কিন্তু কাওয়ের ক্ষেত্রে দেখা গেল, আইনি লড়াইয়ে তিনি নেই। কেন এমন হল? বৈশ্বানরবাবু বলেন, “আমি আইনজীবী ও তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী। দলীয় নির্দেশ মেনে চলি। দল যা নির্দেশ দেয়, আমি তা-ই করি।” অর্থাৎ কাওয়ের হয়ে সওয়াল করতে দলের শীর্ষ স্তর থেকে বৈশ্বানরবাবুকে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি বলেই মনে করছেন আলিপুর আদালতের আইনজীবীদের একাংশ।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.