১০ দিনের পুলিশি হেফাজত
মুখ্যমন্ত্রীকে আমার নামে ভুল বুঝিয়েছে দল, দাবি কাওয়ের
রা পড়ার পরে গার্ডেনরিচের বরো চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তৃণমূলের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধেই। একই পথে হাঁটলেন তৃণমূল কাউন্সিলর শম্ভুনাথ কাও। দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধেই আঙুল তুললেন পুলিশের কাছে।
গার্ডেনরিচে পুলিশ হত্যায় অভিযুক্ত মুন্না অবশ্য দলনেত্রীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে মুখ খোলেননি। সরাসরি মমতার নাম নেননি ভাঙড়ের আরাবুল ইসলামও। কিন্তু শনিবার লালবাজারের গোয়েন্দাদের দাবি ক্ষুব্ধ শম্ভুনাথ বলেছেন, দলের একাংশ মুখ্যমন্ত্রীকে ভুল বোঝানোর ফলেই তিনি তাঁকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। শম্ভুনাথের দাবি, তিনি নির্দোষ। পরিকল্পনা করে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের বালিয়া থেকে সড়কপথে শনিবার সকালে কলকাতায় নিয়ে আসা হয় ধাপায় তৃণমূল নেতা অধীর মাইতি খুনের মামলায় প্রধান অভিযুক্ত শম্ভুনাথকে। পথে শম্ভুনাথকে অল্পই জেরা করার সুযোগ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, শম্ভুনাথ দলীয় নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে শুরু করেছেন। জেরায় শম্ভুনাথ দাবি করেছেন, দলের শীর্ষস্থানীয় কয়েক জন নেতার প্রশ্রয়ে ই এম বাইপাস সংলগ্ন এলাকা থেকে টাকা তোলা হত। ধাপা, মাঠপুকুর, বৈঁচতলা, ট্যাংরা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার নানা সূত্র থেকে প্রতি মাসে কয়েক লক্ষ টাকা আদায় হত। এর অল্পই তাঁর কাছে আসত। বাকিটা চলে যেত নেতাদের কাছে। সেই টাকা দলীয় তহবিলে জমা পড়ত কি না, তা তিনি নিশ্চিত জানেন না বলে দাবি করেছেন শম্ভুনাথ। তাঁর বক্তব্য, টাকার ভাগ না পেয়ে দলের ভিতরেই তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। এবং ওই গোষ্ঠীর ইন্ধনেই তাঁকে খুনের মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে শম্ভুনাথের অভিযোগ।

আলিপুর আদালতের পুলিশ লক আপ থেকে বার
করে আনা হচ্ছে শম্ভুনাথ কাওকে। —নিজস্ব চিত্র
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, প্রাথমিক জেরায় ধৃত কাউন্সিলর জানিয়েছেন, ২০ মার্চ সকালে স্থানীয় তৃণমূল নেতা অধীর মাইতিকে টেলিফোন করে তিনি ডেকে এনেছিলেন বিতর্কিত জমি নিয়ে ফের একপ্রস্ত আলোচনার জন্য। অধীরবাবুকে তিনি আদৌ ধাক্কা মারেননি বলেও শম্ভুনাথের দাবি। অধীরবাবু আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। উত্তেজিত হয়ে অন্য কারও ধাক্কা খেয়ে তিনি পড়ে যান। শম্ভুনাথের দাবি, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েই অধীরবাবু মারা যান।
কলকাতা পৌঁছনোর পরে এ দিন বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ গোয়েন্দারা শারীরিক পরীক্ষার জন্য কাওকে নিয়ে যান শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। সেখানে ‘ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার’ মন্দিরা সরকার তাঁকে পরীক্ষা করেন। চিকিৎসকেরা গোয়েন্দাদের জানান, শম্ভুনাথের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। হাসপাতাল থেকে বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় লালবাজারে। এর পর আলিপুর আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। একই মামলায় ধৃত শ্যামল মুখোপাধ্যায়কেও ওই দিন পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। এ দিন আদালত চত্বরে প্রায় শ’খানেক লোক জড়ো হয়ে শম্ভুনাথের কঠোরতম শাস্তি চেয়ে বিক্ষোভ দেখান।
আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট উমেশ সিংহের এজলাসে অভিযুক্তের পক্ষে জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন আইনজীবী তরুণ রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, শম্ভুনাথের বিরুদ্ধে অধীর মাইতিকে ধাক্কাধাক্কি করা এবং গালিগালাজের অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন) ধারা কী ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে প্রযোজ্য হতে পারে? ওই আইনজীবী দাবি করেন, এলাকার লোকেদের সঙ্গে তর্কাতর্কির সময় অধীরবাবু মাটিতে পড়ে যান। তিনি আগে থেকে অসুস্থ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর জন্য কোনও ভাবেই শম্ভুনাথ দায়ী নন। ঘটনার দিন পনেরো পরও অধীরবাবুর ময়না তদন্ত রিপোর্ট কেন জানানো হচ্ছে না তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
সরকারি আইনজীবী তপনকুমার সাহা এবং রাধানাথ রং জামিনের আর্জির বিরোধিতা করে বলেন, কোনও অপরাধের পর অভিযুক্ত পলাতক হলে সাধারণ ভাবে বোঝা যায়, ওই অপরাধের সঙ্গে তিনি জড়িত থাকতে পারেন। এ ক্ষেত্রেও অভিযুক্তকে উত্তরপ্রদেশের বালিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কী কারণে ওই খুনের ঘটনা ঘটল, তার তদন্তের জন্য অভিযুক্তকে হেফাজতে রাখা জরুরি। দু’পক্ষের সওয়াল শোনার পর বিচারক শম্ভুনাথকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আগামী দশ দিন হেফাজতে রেখে তাঁকে বিশদ জেরা করার সুযোগ পাবেন তদন্তকারী অফিসারেরা। তবে শম্ভুনাথের ভাবগতিক দেখে তাঁরা মনে করছেন, সব তথ্যই সরেজমিনে যাচাই করে নেওয়ার প্রয়োজন হবে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.