উত্তরপ্রদেশের বালিয়া থেকে নেপালে পালানোর ছক কষেছিলেন তৃণমূল কাউন্সিলর শম্ভুনাথ কাও। কিন্তু পালিয়ে বেড়াতে বেড়াতে গাঁটের কড়িতে টান পড়েছিল। এর মধ্যে মহেশতলা থেকে তাঁর ৫৯ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ। ফলে এক রকম বাধ্য হয়েই দিন চারেক আগে ৪ লক্ষ টাকা চেয়ে কাও ফোন করেন আলিপুর আদালতের এক আইনজীবীকে। সেটাই কাল হয়। ধাপা-কাণ্ডের অন্যতম প্রধান অভিযুক্তকে শনিবার প্রাথমিক জেরার পর এমনই দাবি করেছে পুলিশ।
বিহার বা উত্তরপ্রদেশ থেকে নেপাল সীমান্ত খুব দূরে নয়। কাও ভেবেছিলেন, কোনও ভাবে দেশছাড়া হতে পারলে রাজ্যের গোয়েন্দাদের পক্ষে তাঁর নাগাল পাওয়া শক্ত হবে। তাই নেপালের কিছু পরিচিত ব্যবসায়ীর মদতে তিনি সে দেশে ক’দিন গা ঢাকা দেওয়ার ছক কষেছিলেন বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
২০ মার্চ ধাপার তৃণমূল নেতা অধীর মাইতির মৃত্যুর ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে শম্ভুনাথ কাওয়ের নাম। জেরায় গোয়েন্দারা জেনেছেন, অধীরবাবুর মৃত্যুর খবর পেয়েই গোপন ডেরায় চলে যান কাও। তবে রাজ্য ছাড়েননি। গোয়েন্দাদের দাবি, জেরায় কাও বলেছেন, ২৯ মার্চ পর্যন্ত তিনি স্থানীয় কয়েক জন তৃণমূল নেতা ও আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। ঘনঘন ডেরা বদলেছেন। সোনারপুর ও বারুইপুরের একাধিক ভেড়িতেও রাত কাটিয়েছেন। পুলিশ বলছে, সোনারপুরের কাঠিপোতার একটি ভেড়িতে গোয়েন্দারা হানাও দেন। কিন্তু তার আগেই খবর পেয়ে যান কাও।
এ রকম বেশ কয়েক বার হাতের নাগালে পেয়েও ধরতে না পেরে পুলিশের সন্দেহ হয়, এমন কে আছে যারা তল্লাশির খবর কাওকে আগাম জানিয়ে দিচ্ছে? সেই মতো তালিকা তৈরি করে কয়েক জনের ফোনে আড়ি পাতা হয়। পুলিশের দাবি, কাও কবুল করেছেন, তাঁর পরিচিত কয়েক জন আইনজীবীর সঙ্গে কলকাতা পুলিশের একাধিক অফিসারের ঘনিষ্ঠতা আছে। সেই আইনজীবীদেরই একাংশ বিভিন্ন সময়ে গোয়েন্দা-হানার খবর কাওকে আগাম জানিয়ে দিতেন। এবং সেই মতো ডেরা বদলে ফেলতেন তিনি।
পাশাপাশি ভেড়ি এলাকার বেশ কিছু দাগী দুষ্কৃতীর সঙ্গেও কাও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলে খবর পান গোয়েন্দারা। এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, “পুরনো দুষ্কৃতীদের সঙ্গে কাওয়ের যোগাযোগের খবর মিলতেই আমরা তাদের কয়েক জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তাতেই ভয় পেয়ে ওই দুষ্কৃতীরা কাওকে সাহায্য করা বন্ধ করে দেয়।” পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীদের মদত পাওয়া বন্ধ হতেই রাজ্য ছাড়ার সিদ্ধান্ত পাকা করে ফেলেন কাও। পুলিশের দাবি, জেরায় কাও জানিয়েছেন, ২৯ মার্চ স্থানীয় এক যুবককে নিয়ে গাড়ি ভাড়া করে তিনি দেওঘরে পৌঁছন। গোয়েন্দাদের অনুমান, ওই যুবকের নাম চিমা। তিনি কাওয়ের বিশ্বস্ত গাড়িচালক, যিনি এখনও বেপাত্তা। দেওঘরে কাওয়ের নামে হোটেল বুক করা ছিল। সেখান থেকে ৩ এপ্রিল ট্রেনে পটনা হয়ে বালিয়ার সিকান্দরপুর পৌঁছন কাও।
৩০ মার্চ মহেশতলার জিঞ্জিরাবাজারে কাওয়ের আত্মীয় দেবাশিস সরকারের এক বন্ধুর বাড়ি থেকে ৫৯ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেন গোয়েন্দারা। মেলে একটি ট্রলি ব্যাগ। এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, “ব্যাগে কিছু কাগজপত্র ছিল। তা থেকেই জানা যায়, পটনায় জেনারেটরের কারবার আছে কাওয়ের। সেই সূত্রে ইঙ্গিত মেলে, গা ঢাকা দেওয়ার পরেও কলকাতা ও লাগোয়া এলাকার কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ আছে।” গোয়েন্দারা জানান, ধাপা-কাণ্ডের পরেই মোবাইল বন্ধ করে দেন কাও। ওই ব্যবসায়ীদের তিনি ফোন করতেন পরিচিতদের মোবাইল বা পিসিও থেকে। পুলিশ ব্যবসায়ীদের ফোনে আড়ি পাতা শুরু করে। জট খুলে যায়। পুলিশ জেনে যায়, বালিয়ায় মিন্টু খান নামে এক জনের বাড়িতে রয়েছেন কাও।
কেই এই মিন্টু খান? এখনও তাঁর খুঁটিনাটি জানা যায়নি। তবে পুলিশের অনুমান, চিমার সঙ্গে মিন্টুর পরিচয় ছিল। চিমার অনুরোধেই তাঁর মাতুরি গ্রামের বাড়িতে কাওকে আশ্রয় দিয়েছিলেন মিন্টু। |