সংখ্যালঘুদের দাবিদাওয়া নিয়ে সরব হতে ব্যর্থ হয়েছেন বামপন্থীরা। তারই ফায়দা তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের প্রয়াত প্রাক্তন মন্ত্রী কলিমুদ্দিন শামসের স্মরণসভায় এই কথাই ফের স্মরণ করিয়ে দিলেন সিপিএমের প্রবীণ নেতা আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা।
ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রয়াত নেতা কলিমুদ্দিন উর্দুভাষী মুসলিম হিসেবে কী ভাবে দেশের বিভিন্ন সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজেকে জড়াতে পেরেছিলেন,তা-ই বলছিলেন সিপিএম বিধায়ক রেজ্জাক। তাঁর মন্তব্য, “আমাদের বামপন্থীদের একটা ব্যারাম আছে! সংখ্যালঘু নেতারা কেউ সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে কথা বলে না। ভয় পায়! পাছে সাম্প্রদায়িক হয়ে যাই! অথচ সংখ্যালঘুদের সমস্যা আমাদের চেয়ে কেউ বোঝে না ভাল। এই জন্যই মাথায় ঘোমটা দিয়ে কুল গাছটা নাড়া দিয়ে এক জন কুলগুলো আঁচলে ভরে নিয়ে গেল! আমরা কুল-কাঁটায় রক্তাক্ত হচ্ছি! এখনও ব্যারাম সারেনি!” সরাসরি তৃণমূল নেত্রী বা অন্য কারও নাম না-করেই বক্তব্যের শেষ দিকে রেজ্জাক আরও এক বার বলেন, “আমাদের শ্রেণি সংগ্রাম চলবে অবশ্যই। কিন্তু শ্রেণির মধ্যে বর্গগুলোর দিকে নজর না-দিলে কুলকুড়ুনি ঘোমটা দিয়ে কুল নিয়ে চলে যাবে! আমাদের জন্য কুল-কাঁটা থাকবে!”
রেজ্জাকের এমন চাঁছাছোলা মন্তব্যের পরেই রবিবার টাউন হলে শ্রোতাদের একাংশ হাততালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানান। অনুষ্ঠানের সভাপতি, বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমকে হস্তক্ষেপ করে বলতে হয়, “স্মরণসভায় এ ভাবে হাততালি দিতে নেই!” অনুষ্ঠানের শুরুতে হালিম নিজে বর্তমান রাজ্য সরকারের কাজকর্মের সমালোচনা করে শক্তিশালী বাম আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
টাউন হলে এ দিনের স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল ‘সিটিজেন্স ফোরামে’র নামে। আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী, সিপিআইয়ের মঞ্জুকুমার মজুমদার, প্রবীর দেবের মতো শরিক নেতাদের পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং সংখ্যালঘু সেলের নেতা এস হায়দর উপস্থিত ছিলেন। এসেছিলেন বিজেপি-র এক প্রতিনিধিও। তবে আসেননি তৃণমূলের কেউ। ফ ব-র প্রবীণ রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ বলেন, “আজ যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁদের চিঠি পাঠিয়েছিলাম। কলিমুদ্দিন ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। এখনকার স্পিকারকেও তাই এখানে থাকার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। চিঠি পাঠিয়েছিলাম মুখ্যমন্ত্রীকেও।”
প্রদীপবাবু এ দিন বলেন, “মানুষ মারা গেলে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আবদ্ধ থাকে না। মৃত্যুকে রাজনীতি দিয়ে ভাগ করা যায় না। কলিমুদ্দিন বামপন্থী ছিলেন। কিন্তু যত মতপার্থক্যই থাকুক না কেন, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তাঁর বিচার করতে হবে। উনি কিছু করে যেতে পেরেছেন বলেই লোকে তাঁকে মনে রেখেছে। আমিও এই স্মরণসভায় এসেছি।” |