ন্ধ গলির শেষ প্রান্তে বস্তির ছোট্ট ঘর। নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কথা বলতে রাজি হলেন বৃদ্ধ। খিদিরপুর-গার্ডেনরিচ-মেটিয়াবুরুজের ফেলে আসা ইতিহাস। বন্দর এলাকায় উড়ে বেড়ায় টাকা। যে টাকার ভাগ বন্দর এলাকা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে আরও দূরে। যে টাকা উড়ে বেড়ায় রাজনীতির আঙিনায়। তাঁর অভিজ্ঞতার আলোয় টাকা ও রাজনীতির খেলা মিলেমিশে এক হয়ে যায়।
গত কয়েক বছর ধরে বন্দরের অলি-গলি যে দু’জনের নামে কেঁপে উঠত, ১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচে পুলিশ অফিসার তাপস চৌধুরী খুনের মামলায় সেই দু’জন মোক্তার আহমেদ এবং মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না এখন জেলে। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বন্দরের ‘টাকা’ ভাগ হয়ে যেত এই দু’জনের মধ্যে। আবার রাজনীতির ময়দানে নেমেও চলত যুদ্ধ। সেই বন্দর এখন ‘অভিভাবকহীন’! আচমকা প্রসেনজিৎ আর দেব যদি আজ সরে যান টলিউড থেকে, যে অবস্থা দাঁড়াবে, অনেকটা সেই অবস্থা সম্রাটহীন সাম্রাজ্য।
মুন্না-মোক্তারের তৈরি করে যাওয়া মাঠে নামতে যে ‘হিম্মত’ দরকার, প্রশ্ন উঠেছে এই মূহূর্তে কার আছে সেই হিম্মত? সেই ফাঁকা মাঠে নামলে ক্ষমতা ও টাকার দখল যেমন পাওয়া যাবে, তার সঙ্গে যে কোনও বুলেটে লেখা হয়ে যেতে পারে তাঁর নামও। ঠিক যেমন ঘটেছিল মোগলের ক্ষেত্রে।
সাবাতাজ তবরেজ
গার্ডেনরিচের মতো ঘটনা ফের ঘটলে, বাকি জীবনের মতো নেতার পাকাপাকি ঠিকানা হয়ে যেতে পারে জেলখানার চার দেওয়াল। পর্দার আড়ালে বসে কলকাঠি নাড়া রাজনৈতিক নেতা নেমে পড়বেন নতুন বোড়ের সন্ধানে।
এই মূহূর্তে বন্দর এলাকায় মুন্না-মোক্তারের উত্তরসূরি হিসেবে যে দু’টি নাম উঠে আসছে, তাঁদের দেহে নবীন রক্ত। এক জন তবরেজ, অন্য জন সাবাতাজ। প্রথম জন বন্দরের প্রভাবশালী এক পরিবারের ডাকাবুকো যুবক। অন্য জন মুন্নার মেয়ে, পরিস্থিতির চাপে কোণঠাসা এক তরুণী। প্রথম জনের পিছনে রাজনীতির কারবারিদের সমর্থন। অন্য জনের মাথা থেকে সরে গিয়েছে রাজনীতির ছাতা। তাঁর আশা, সঙ্গে থাকবে সাধারণ মানুষের সমবেদনার সমর্থন।
বৃদ্ধ জানালেন, বন্দরের বাতাসে ভেসে বেড়ানো এই টাকা যাঁরা তুলে নিতে পারবেন, তাঁরাই এখানে ‘শের’। সেই টাকার ভাগ যাঁরা পৌঁছে দিতে পারবেন ক্ষমতাবান রাজনৈতিক নেতার ঘরে, তাঁদেরই হাতে তুলে দেওয়া হবে রাজনৈতিক ক্ষমতা। এক এক জন চলে যাবেন এক একটি রঙের ছাতার তলায়। গত ৩০ বছর ধরে এটাই বন্দরের ইতিহাস। সেই ইতিহাসের পাতা থেকেই এক এক করে উঠে এসেছে ইদ্রিস আলি, মোগল, মোক্তার, কসমা, মুন্নাদের নাম। তাঁদের সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে যাবতীয় প্রতিরোধ। বন্দরের ‘নিয়ম’ না মেনে, কঠোর হতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে বিনোদ মেটার মতো পুলিশ অফিসারকে।
এ বার নবীন রক্ত কি অন্য বার্তা আনবে? এত দিন ধরে যে পরম্পরা চলে এসেছে, সেই তোলাবাজির ইতিহাসে কি কিছুটা হলেও যতিচিহ্ন পড়তে পারে? বন্দরের এলাকা দখল কি শুধুই রাজনীতির জমির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে? না কি নবীনরাও মেতে উঠবেন একই খেলায়? এ নিয়ে মুখ খুলতে চান না কেউই। জিজ্ঞাসা করলে মুখ ঘুরিয়ে নেন মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকের দল। বন্দর এলাকার অজস্র কানা-গলির প্রতিটি বাঁকে যেন ছড়িয়ে থাকে অজানা কোনও ত্রাস! মোটরবাইক-আরোহীর দৃষ্টি যেন বলে দিতে চায়, “এখানে তুমি বহিরাগত। উল্টোপাল্টা প্রশ্ন কোরো না। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে সরে পড়ো। নইলে বিপদ হতে পারে।” তবু, ‘আতা-পাতা’ গোপন রাখার শর্তে বৃদ্ধের মতো কথা বলেন কয়েক জন। সে রকমই কিছু স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ অফিসার, রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজনীতিতে টাকার ভীষণ চাহিদা! সেই চাহিদা থেকে লড়াই। বন্দরের বাতাসে উড়তে থাকা বিশাল অঙ্কের ওই টাকা থেকে রাজনৈতিক নেতারা মুখ ফিরিয়ে নেবেন, এমন ধারণা সমর্থন করছেন না অনেকেই। বন্দরের চরিত্র অনুযায়ী সেখানে এমন নেতার দরকার, যাঁর পায়ের নীচে বসে জীবন-ভিক্ষা চাইবেন স্থানীয় মাস্তানও! ‘অবাধ্য’ প্রোমোটর বা ব্যবসায়ীকে সাদরে নিজের ঘরে ডেকে ইয়ার্কির ছলে যে নেতা বলে দেবেন, “আরে, সাবধানে থাকছেন তো! আমাকে কে যেন সে দিন বলল আপনি নাকি খুন হয়ে যেতে পারেন!” তবরেজের মধ্যে নাকি সে রকম নেতা হওয়ার ‘সম্ভাবনা’ রয়েছে।
কী ভাবে উঠে আসছেন তবরেজ? সাবাতাজের উত্থানের হিসেবটাই বা কী?

(চলবে)

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.