|
|
|
|
গার্ডেনরিচ কাণ্ড |
আছে চাপ, বদলায়নি পুলিশও, ইকবাল তাই অধরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
রাজনীতির চাপও আছে, ফলে পুলিশও আছে পুলিশেই!
পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা মঙ্গলবার গার্ডেনরিচ থানায় গিয়ে সব অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়ে এসেছিলেন। পুলিশ তাতে উৎসাহিত হয়ে গ্রেফতার করে আনে শেখ সুহান এবং ইবনে-সহ ১৩ জনকে। কিন্তু ঘটনায় ইন্ধন দেওয়ার জন্য যাঁর বিরুদ্ধে নিচু তলার পুলিশ কর্মীরা সিপি-র কাছে নালিশ জানিয়েছিলেন, সেই মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না বুধবার রাত পর্যন্ত অধরাই। এফআইআরে পুরসভার ১৫ নম্বর বরোর তৃণমূল চেয়ারম্যান ইকবালের বিরুদ্ধে প্ররোচনার অভিযোগ থাকলেও বুধবার রাত পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনও মামলা করা হয়নি।
শেখ সুহান, ইবনেদের ধরার ক্ষেত্রেও প্রথমে রাজনৈতিক চাপ ছিল পুলিশের উপরে। ইবনেকে ধরেও ছেড়ে দিতে হয়েছিল। তার পরে নিচু তলার মনোবল ফিরিয়ে আনতে সাময়িক ভাবে সক্রিয় হয়েছিল লালবাজার। পচনন্দা নিজে থানায় বসে থেকে সুহানদের গ্রেফতার করিয়েছিলেন। কিন্তু ইকবালকে ধরার সময় দেখা গেল, লালবাজার আর ততটা সক্রিয় নয়।
অথচ বুধবার আদালতে গার্ডেনরিচের ঘটনা নিয়ে পুলিশ যে এফআইআর জমা দিয়েছে, তাতে ইকবালের বিরুদ্ধে গোটা ঘটনায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ইকবালের পাশাপাশি কংগ্রেস নেতা মোক্তারের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ লেখা হয়েছে কেস ডায়েরিতে। কিন্তু দু’জনের বিরুদ্ধেই মামলা রুজু করা হয়নি। ফলে তাদের গ্রেফতার করাও যায়নি। রাজনৈতিক চাপের কাছে নতিস্বীকারই এর কারণ বলে অভিযোগ। লালবাজারে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ অবশ্য চাপের কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, “এফআইআরে ইকবালের বিরুদ্ধে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জুতসই তথ্যপ্রমাণ পেলে অবশ্যই ইকবাল বা অন্য কেউ গ্রেফতার হবেন।” |
মোক্তার |
মহম্মদ ইকবাল |
|
পুলিশ সূত্রেরই খবর, তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্বের চাপে ইকবালকে গ্রেফতার নিয়ে একটা রফা করা হয়েছিল। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি ছিল, ইকবালকে গ্রেফতার করার আগে মোক্তারকে গ্রেফতার করতে হবে। মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে বন্দর এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই মোক্তারের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলে এসেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, ইকবালই দুষ্কৃতীদের লক্ষ্য ছিল। তাঁকে বাঁচাতে গিয়েই গুলিবিদ্ধ হন সাব ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরী। কিন্তু বুধবার রাত পর্যন্ত মোক্তারের বিরুদ্ধেও কোনও মামলা দায়ের করেনি পুলিশ।
নিচু তলার পুলিশ কর্মীরা কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ। তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রীরা মহাকরণ থেকে জানিয়েছেন, দলীয় নেত্রী দলমত নির্বিশেষে সব অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করতে বলেছেন। কিন্তু মহাকরণে দাঁড়িয়েই এ দিন সন্ধ্যায় ফিরহাদ হাকিম মন্তব্য করেন, “মহম্মদ ইকবাল এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে আমি বিশ্বাস করি না।” আর মন্ত্রীর এই মন্তব্যের
পরে লালবাজার আদৌ আর ইকবালকে গ্রেফতার করতে পারবে কি না, সেই সন্দেহ দানা বাঁধছে পুলিশের নিচু তলায়।
ইকবাল এবং মোক্তার নিজেরা দাবি করছেন, পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টাতেই মঙ্গলবার কলেজ চত্বরে গিয়েছিলেন তাঁরা। কোনও রকম গণ্ডগোলে তাঁরা জড়িত নন।
কিন্তু পুলিশের এফআইআর অন্য কথা বলছে। তাপস চৌধুরী হত্যা মামলার এই এফআইআর দায়ের করেছেন, কলকাতা পুলিশের ‘র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স’-এর ইনস্পেক্টর মিলনকুমার দাম। আলিপুর আদালতে এ দিন সেই এফআইআর জমা দেয় পুলিশ। তাতে বলা হয়, হরিমোহন ঘোষ কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোলমাল ও সংঘর্ষ বাধে। কলেজের মেন গেটের বাঁ দিকে মোক্তার ও তার দলবল ছিল। ডান দিকে ৬০-৭০ জন যুবককে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মহম্মদ ইকবাল। কলেজের গেটের ডান দিকে জড়ো হয়ে থাকা যুবকেরা ‘চেয়ারম্যান সাহেব, চেয়ারম্যান সাহেব’ বলে চিৎকার করছিল। আর চেয়ারম্যান সাহেব (ইকবাল) মিলনবাবুর চোখের সামনে আঙুল উঁচিয়ে ওই ছেলেদের প্ররোচনা দিচ্ছিলেন। আচমকা ইকবালের দলের চার-পাঁচ জন মোক্তারের দলের এক যুবককে (ওই যুবক তাহির হোসেন অবশ্য আনন্দবাজারকে জানান, তিনি তৃণমূল সমর্থক। তাঁকে মোক্তারের লোক বলে ভুল করেছিল সুহানরা) হিঁচড়ে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার তাপসবাবু ওই যুবককে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করছিলেন। সেটা দেখেই ওই চার-পাঁচ জন যুবকের মধ্যে থাকা সুহান আচমকা তাপসবাবুকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দেয়।
ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ কর্মীদের অবশ্য অভিযোগ, এফআইআরে-ও ইকবালের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেকটা হাল্কা করে দেখানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, বেলা ১০টা পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্তই ছিল। ইকবাল তল্লাটে আসার পরই উত্তেজনা ছড়াতে শুরু করে। মেটিয়াবুরুজের দিকে তখন দাঁড়িয়ে কংগ্রেসের মোক্তার এবং তার দলবল। দুই শিবিরের মাঝে দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন গার্ডেনরিচ থানার ওসি। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির গলির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ইকবাল তখন নিজেই পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন বলে জানাচ্ছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশকর্মীরা। বরো চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে ইকবাল ওসি-কে নির্দেশ দেন, “মোক্তারের দলবলকে সামলান।” কর্তব্যরত পুলিশের একাংশ তখন অন্য দিকে সরে যায়। এর পরেই ইকবাল-বাহিনী কাছাকাছি থাকা বিরুদ্ধ শিবিরের ছেলেদের উপরে চড়াও হয়। এর পরেই তাহিরকে বাঁচাতে গিয়ে ইকবালের সঙ্গী সুহানের গুলির মুখে পড়েন তাপসবাবু। |
|
|
|
|
|