|
|
|
|
পথে কাজ দেবেন না মেয়েকে, আর্তি মায়ের |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
স্বামীর মতো মেয়েও বিপদে পড়ুক, চান না মিনতি চৌধুরী। তাই বুধবার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা যখন তাঁদের বাড়িতে যান, মেয়েকে পুলিশে চাকরি দেওয়ার কথা বলেন, তখন মিনতিদেবীর একটাই আর্তি, “দেখবেন, ওকে যেন রাস্তায় কাজ করতে না হয়!” কেন? “মেয়ে তার বাবার মতো পুলিশের উর্দি পরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডিউটি করছে, এই টেনশন আর সহ্য করতে পারব না।”
মঙ্গলবার গার্ডেনরিচে কাজের সময় তাঁর স্বামী তাপস চৌধুরী গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। পুলিশের উর্দি পরেও যে ভাবে দিনের আলোয় ভরা রাস্তার মাঝখানে তিনি গুলিবিদ্ধ হলেন, তাতে পুলিশের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। পুলিশের নিচুতলায় এই প্রশ্ন দিনভর ঘুরেছে। মিনতিদেবীর কথায় যেন তারই প্রতিধ্বনি শোনা গেল।
ঠাকুরপুকুরের সারদাপল্লির বাড়িতে বুধবার পুলিশ কমিশনারের মুখোমুখি বসে মিনতিদেবী বলেন, “এ রাজ্যে পুলিশের কোনও নিরাপত্তা নেই। পুলিশের হাতে বন্দুক নেই। বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে পাবলিক।” তাই তাঁর মেয়ে লালবাজারে বা অন্য পুলিশ অফিসে বসে চাকরি করলে মিনতিদেবীর আপত্তি নেই। অফিসে বসে করণিকের দায়িত্ব সামলালেও ঠিক আছে। কিন্তু কোনও ভাবেই যেন তাকে তার বাবার মতো পথে না পাঠানো হয়। |
মিনতি চৌধুরী (তাপস চৌধুরীর স্ত্রী)
পরিবারটা যাতে বাঁচে সরকার দেখুক। মুখ্যমন্ত্রী দেখুন। ওঁর কথাতেই
তো ডিউটি করতে যাচ্ছে, কিন্তু পুলিশের নিরাপত্তা নেই। পুলিশের
হাতে বন্দুক নেই, পাবলিক বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
|
|
পুলিশের নিরাপত্তার অভাব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেও অভিযোগের আঙুল তোলেন সদ্য স্বামীহারা এই মহিলা। তিনি পুলিশ কমিশনারের কাছে জানতে চান, “মুখ্যমন্ত্রী কি আসবেন?” পচনন্দা সামান্য থেমে বলেন, “উনিও চিন্তিত। উনি কলকাতার বাইরে রয়েছেন।” মিনতিদেবী বলেন, “পুলিশমন্ত্রী পুলিশের কথা শোনেন না। উনি এসে দেখুন, আমাদের সংসারটা ভেসে গেল।”
মিনতিদেবীর মেয়ে কলেজছাত্রী তনুশ্রীও বাবার মৃত্যু নিয়ে এ দিন
একই প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি বলেন, “পুলিশ নিজেকে রক্ষা করতে বন্দুক চালাতে পারে না। কিন্তু অন্যেরা গুলি চালায়। ওই ছেলেটা অস্ত্র পেল কোথা থেকে? নিশ্চয়ই কেউ ইন্ধন জোগাচ্ছে!” তাপসবাবুর পুত্র নবম শ্রেণির ছাত্র তমালের দাবি, “বাবাকে যারা
মেরেছে, তাদের কঠোর শাস্তি চাই।”
সিপি এ দিন বেলা ৩টে নাগাদ তাপসবাবুর বাড়িতে যান। সঙ্গে ছিলেন এসিপি প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ও অন্যেরা। জোড় হাতে মিনতিদেবীর সামনে গিয়ে দাঁড়ান পচনন্দা। বসার জন্য তাঁকে একটি প্লাস্টিকের চেয়ার এগিয়ে দেওয়া হয়। তাতে বসেন পচনন্দা।
কাঁদতে কাঁদতে মিনতিদেবী পুলিশ কমিশনারকে বলেন, “সবই হারিয়েছি। বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছি। মেয়ের চাকরিটা হলে ভাল হত।” এ দিন সকালেই ঠাকুরপুকুর থানার পুলিশ এসে মিনতিদেবীর আবেদনপত্র গ্রহণ করেছে। সাদা কাগজে বাংলায় তাঁর স্বামীর খুন হওয়ার ঘটনাটি সবিস্তার লিখে ১৯ বছরের মেয়ে তনুশ্রীর জন্য চাকরির আবেদন করেন মিনতিদেবী। উদ্ভিদবিদ্যায় অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী তনুশ্রীর বায়ো-ডেটাও ওই আবেদনপত্রের সঙ্গে দেওয়া হয়। পুলিশ কমিশনার মিনতিদেবীকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, “হ্যাঁ, আপনার আবেদনপত্র পেয়েছি। চাকরি হবে।” তখনই মিনতিদেবীর অনুরোধ, “দেখবেন, ওকে যেন রাস্তায় কাজ করতে না হয়!” শুনে সিপি থমকে যান। তার পরে বলেন, “ঠিক আছে, তাই হবে।” এর পরেই মিনতিদেবীর হাতে পচনন্দা দু’লক্ষ টাকার একটি চেক তুলে দিয়ে বলেন, “এটা সরকারি সাহায্য নয়। এটা কলকাতা পুলিশের তরফে একটা চেষ্টা।” ফের কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সবাই। |
সৎ মানুষের পক্ষে পুলিশে চাকরি
করাটাই বোধহয় ঠিক নয়।
পিঙ্কি মেটা (খুন হওয়া ডিসি পোর্ট
বিনোদ মেটার স্ত্রী) |
|
মিনতিদেবী বলে ওঠেন, “ছেলেও পড়াশোনা করছে। শাশুড়ি অসুস্থ। এক জনের উপার্জনেই সব চলত! আমরা কী করব?” পুলিশ কমিশনার তাপসবাবুর ছেলে তমালের মাথায় হাত রেখে ডিসিকে বলেন, “উনি যা বলছেন সব নোট করুন।” এর পরে তিনি মিনতিদেবীকে বলেন, “আপনার ছেলের পড়াশোনা ও বাড়ির অসুস্থদের খরচ জোগাবে কলকাতা পুলিশই।” স্থানীয় ডিসি-র নম্বরও মিনতিদেবীকে রাখতে বলেন তিনি। বলেন, “কোনও দরকারে বা আমার সঙ্গে দেখা করতে হলে, ওঁকে বলবেন।” তাপসবাবুর পরিবারের নিরাপত্তার দিকে নজর রাখার জন্যও এলাকার পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন পচনন্দা। |
|
|
|
|
|