|
|
|
|
‘মানুষ হও, পুলিশ নয়’, তাপসের সন্তানদের বার্তা দিলেন পিঙ্কি মেটা |
সুনন্দ ঘোষ |
মঙ্গলবার কলকাতা বন্দর এলাকায় দুষ্কৃতী-তাণ্ডবের ছবি উস্কে দিল লুকিয়ে রাখা পুরনো ক্ষত। মুখ খুললেন ২৯ বছর আগে ওই বন্দর এলাকাতেই দুষ্কৃতীদের হাতে নিহত কলকাতা পুলিশের তৎকালীন ডিসি (বন্দর) বিনোদ মেটার স্ত্রী পিঙ্কি মেটা। বললেন, “কোনও সৎ মানুষের পক্ষে পুলিশে চাকরি করাটা বোধহয় ঠিক নয়।”
১৯৮৪ সালে বিনোদ যখন মারা যান, তখন তাঁদের একমাত্র ছেলে রিষুর বয়স মাত্র ন’বছর। ছেলেকে দিয়ে তখনই পিঙ্কি শপথ করিয়ে নেন, কখনওই যেন সে পুলিশের চাকরি না করে। কথা রেখেছেন রিষু। ৩৮ বছরের সেই যুবক এখন অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি নিয়ে পড়াশোনা করে চাকরি করছেন তিনি।
অথচ, ছোটবেলায় বাবার মতোই পুলিশ অফিসার হতে চেয়েছিলেন রিষুও। বুধবার সে কথা জানালেন পিঙ্কি। বললেন, “আমি হতে দিইনি। ও তো বাবার মতোই সাহসী ও সৎ। আমি ওকে দিয়ে শপথ করিয়ে নিয়েছিলাম যে, ও পুলিশের চাকরি করবে না। এক বার ধাক্কা সামলে নিয়েছিলাম। দ্বিতীয় বার ধাক্কা খেলে আমার পক্ষে তা হজম করা সম্ভব হত না।” স্বীকার করে নিয়েছেন, ছেলের ব্যাপারে এখনও তিনি উদ্বিগ্ন। এখনও ছেলেকে একটু বেশিই যেন আগলে রাখতে চান।
মঙ্গলবারের ঘটনা দেখেছেন? |
পিঙ্কি মেটা |
প্রয়াত বিনোদ মেটা |
|
উত্তরে বললেন, “দেখেছি।” বিনোদ মেটার ঘটনার সময়ে টিভি চ্যানেলের এই রমরমা ছিল না। ঘটনাস্থলে সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকেরা থাকলেও, তাপসবাবুর মতো বিনোদ মেটার মৃত্যুর মুহূর্তের ছবি কেউ ক্যামেরাবন্দি করতে পারেননি। স্বামীর মরদেহের সামনে দাঁড়িয়ে মনে মনে পরিস্থিতিটা শুধু অনুমান করেছিলেন পিঙ্কি। কী নৃশংস ভাবে তাঁকে খুন করা হয়েছিল, তা ভাবলে এখনও শিউরে ওঠেন তিনি। এখনও মনের গভীরে চিন চিন করে ওঠে ক্ষতস্থান। বলেন, “ওরা (দুষ্কৃতীরা) বিনোদকে কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। তাই মেরে দিয়েছিল। সৎ মানুষেরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে চাইলে পাশে কাউকে পান না। সমাজের জন্য ভাল কিছু করতে চাইলে কেউ তা করতে দেয় না।”
মাঝে অনেক বছর কেটে গিয়েছে। পিঙ্কি এখন রাজ্য সরকারের পর্যটন দফতরের চাকুরে। থাকেন এ শহরেই। এই বছরেই অবসর নেবেন।
মঙ্গলবার কলকাতা পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরীর মতোই ১৯৮৪ সালের ১৮ মার্চ-এর ঝকঝকে সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি বিনোদ। পিঙ্কির কথায়, “সকালে যাকে সুস্থ-সবল দেখলাম, সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যুর খবর স্ত্রীর কাছে কতটা আকস্মিক, এই ধাক্কা যে কতটা বিশাল, তা একমাত্র সমব্যথীই বুঝতে পারেন। এই মুহূর্তে ওই পুলিশ অফিসারের (তাপসবাবুর) স্ত্রীর বুকের মধ্যে কী তোলপাড় হচ্ছে, সম্ভবত আমিই তা অনুভব করতে পারছি।”
পিঙ্কি নিজের ছেলেকে যে কথা বলে বোঝাতেন, একই কথা বলতে চেয়েছেন তাপসবাবুর ছেলে ও মেয়ের ক্ষেত্রেও। পিঙ্কির মতে, তাপসবাবুর দুই সন্তান যদি সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে, তাদের মধ্যে বাবা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা পূরণ করতে পারে, তা হলেই তাদের বাবার প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা
জানানো হবে।
তাঁর কথায়, “ভালবাসার মানুষ কখনও চিরকালের জন্য চলে যান না। মনে মনে ভেবে নিতে হবে, মানুষটা কাছেই কোথাও আছেন। আড়াল থেকে তিনি সব কিছু দেখতে পাচ্ছেন। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালানোর সময়ে এই চিন্তাটাই শক্তি জোগাবে।” মঙ্গলবার বন্দর এলাকায় দুষ্কৃতীর গুলিতে মৃত পুলিশ অফিসার তাপস চৌধুরীর স্ত্রী মিনতিদেবীর প্রতি এই বার্তা পাঠালেন ২৯ বছর আগে স্বামী হারানো এক পুলিশের স্ত্রী। |
|
|
|
|
|