হাঙ্গামার পরদিন গার্ডেনরিচ
‘অস্বাভাবিক’ শান্ত এলাকা, ভোট-প্রস্তুতি কলেজে
পাত ভাবে চোখ-মুখ শান্ত, স্বাভাবিক। ভাবটা এমন, যেন কিছুই হয়নি।
কিন্তু, প্রশ্নের সামনে পড়লে বদলে যাচ্ছে মুখের ছবি। কথা বলতে চাইছেন না তাঁরা। মুখ-চোখের অস্থিরতায় যেন বুঝিয়ে দিতে চাইছেন, মঙ্গলবার গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে যে ঘটনা ঘটে গিয়েছে, তা মনঃপুত নয় তাঁদের। তাঁরা শুধু চাইছেন, তাড়াতাড়ি শান্তি ফিরুক এলাকায়।
ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শেখ সুহানের বাড়ি বাতিকল এলাকায়। তার বাড়ির পথ যাঁরা চিনিয়ে দিয়েছিলেন, বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পরে তাঁরাই বলেছেন, “আমরা এ পাড়ায় থাকি না।” যার অর্থ, মঙ্গলবারের ঘটনা নিয়ে, বন্দর এলাকার দখলদারি নিয়ে তাঁরা মুখ খুলতে চান না। এই যুবকদের কেউ চাকরি করেন, কেউ এমব্রয়ডারির কাজ করেন। বোঝা যায়, তার পাড়ায় খুব একটা জনপ্রিয় ছিল না সুহান। ২১ বছরের ছেলে হাতে খোলা রিভলভার নিয়ে দাপিয়ে বেড়াবে, এটা মেনে নিতে নারাজ এলাকার মানুষ। এখন মুখ খুললে ভবিষ্যতে বিপদে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুহানের দিদিই তো জানিয়ে দিয়েছেন, “সুহান পার্টি করত।”

থমথমে এলাকা, সুনসান পথঘাট। বুধবার, গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে। —নিজস্ব চিত্র
পাহাড়পুর রোডে হরিমোহন ঘোষ কলেজের বিশাল ফটক বন্ধ ছিল এ দিন। মঙ্গলবার এই কলেজের সামনেই গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়েছিলেন কলকাতা পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরী। বুধবারও রক্তের দাগ স্পষ্ট। কলেজের মূল ফটকের পাশের ছোট একটি গেট খোলা। সকাল থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা, কলেজের কর্মীরা সকলেই অন্য দিনের মতো এসেছিলেন। কিন্তু, মঙ্গলবারের ওই ঘটনার পরে এক জন ছাত্র-ছাত্রীও এ দিন কলেজে আসেননি। কথা বলতে চাননি কলেজের টিচার-ইন-চার্জ। জানা গিয়েছে, কলেজে মঙ্গলবার ওই গণ্ডগোলের ফাঁকেই মনোনয়নপত্র তুলে নিয়ে যান ছাত্র-ছাত্রীরা। তা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি।
মঙ্গলবার যে এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রের রূপ নিয়েছিল, বুধবার কলেজের সামনে সেই এলাকা থমথমে। কলেজের আশপাশের বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ। কলেজের সামনে সকালের দিকে বিশাল পুলিশবাহিনীকে টহলও দিতে দেখা যায়। যদিও দুপুর গড়ানোর পরে পাতলা হয়ে এসেছিল পুলিশের সংখ্যা। কলেজের পাশেই রয়েছে ইএসআই কর্পোরেশনের একটি অফিস। তার ব্রাঞ্চ অফিসার অমিত চক্রবর্তী বললেন, “আজও অফিসে আসতে ভয় হচ্ছিল। গত কালও আমি ওই সময়ে অফিসে ছিলাম না। অন্য কর্মীরা ভয়ে জানালা-দরজা বন্ধ করে রেখেছিলেন।” কলেজের চৌহদ্দি ছাড়ালে গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ এলাকায় অবশ্য চোখে পড়েছে চেনা কিছু ছবি। বাস-অটো চলেছে নিয়ম করে। বেশ কিছু এলাকার দোকান-বাজারও খোলা ছিল।
হরিমোহন কলেজের কাছে গলির মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন কয়েক জন। মঙ্গলবারের ঘটনা নিয়েই চলছিল আলোচনা। কিন্তু, প্রশ্নের সামনে পড়তেই চুপ করে গেলেন তাঁরা। কে মোক্তার, কে ইকবাল তা নাকি কেউই জানেন না। এক ব্যক্তির কথায়, “জেনে কী হবে বলুন তো।” স্থানীয় দোকানি শেখ মইদুল অবশ্য স্পষ্ট-বক্তা। তাঁর কথায়, “বোমা-গুলি চলাটা এই এলাকায় নতুন কিছু নয়। তাই, কলেজে মঙ্গলবার কী ঘটতে চলেছে, তা পুলিশ ভাল ভাবেই জানত। কিন্তু কেন যে সেই মতো ব্যবস্থা নিল না। তা হলে ওই পুলিশকর্মী মারা যেতেন না।”
গুলি লাগার পরে তাপসবাবুর দেহটা কলেজের প্রধান ফটকের সামনে যেখানে পড়ে ছিল, তার পাশেই বাসস্টপ। একটি বাসের জানালা দিয়ে কতগুলি উৎসুক মুখ তাকিয়ে ছিল রাস্তার দিকে। সবাই যেন কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করছেন। বাসের জানলা থেকে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, ‘‘দাদা, কোন জায়গাটায় খুন হয়েছিলেন ওই পুলিশ অফিসার?’’ উত্তর দেওয়ার আগেই হুশ করে বেরিয়ে গেল বাসটা।
বাসস্টপ লাগোয়া চায়ের দোকানি বললেন, ‘‘এখন কয়েক দিন বাইরের লোকেদের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে পাগল হতে হবে।’’
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.