বিনোদন অন্তরঙ্গ স্মৃতিচারণে উঠে
এল গণেশের গৃহস্থালি

স্মরণসভায় সচরাচর এমনটা হয় না। গণেশ পাইনের গার্হস্থ্য জীবনের গল্পটা যোগেন চৌধুরী ফাঁস করতেই আর হাসি চেপে রাখা গেল না। সামনের সারিতে বসে প্রাণ খুলে হাসছেন গণেশ-জায়া মীরা পাইন। যোগেন বলছেন, ‘বউদি’র তত্ত্বাবধানে সুবিন্যস্ত গেরস্থালির ক্যানভাসে ঈষৎ অপ্রস্তুত, কিন্তু নির্লিপ্ত হাব-ভাব ফুটিয়ে তোলা ‘গণেশদা’-র কথা।
শনি-সন্ধ্যায় সিমা’র আয়োজনে গণেশ পাইনের স্মৃতি-তর্পণ এমন অনেক ‘প্রাইভেট’ কথার দোরগোড়া ছুঁয়ে গেল। উত্তর কলকাতার তস্য গলি কবিরাজ রো-এর ছাই-রঙা পাঞ্জাবির গণেশকে লাল, নীল, সবুজ পরিধানে রঙিন করে দেওয়ার নেপথ্যে মুখ্য ভূমিকা ‘বউদি’রই। আবার নয়ের দশকের গোড়ায় নিজের সৃষ্টি নিয়ে গভীর হতাশায় ডুবে থাকা গণেশ যে আরও কয়েকশো ছবি এঁকে গেলেন, তার জন্যও মীরার সক্রিয় সহযোগিতাকেই কৃতিত্ব দিলেন যোগেন।
পুত্র ইন্দ্রনীলও বললন, অন্তরঙ্গ গণেশের কথা। চলে যাওয়ার ক’দিন আগে ফুসফুসে অসুখ জেনেও প্রিয় রেস্তোরাঁর টুটি-ফ্রুটি আইসক্রিমে শিশুর মতো বুঁদ হয়েছিলেন গণেশ। শেষ সন্ধ্যায় ভালবেসে দু’টো ডিমের চপও খেয়েছিলেন। এই সব টুকরো-টাকরা গালগল্পে সিমা গ্যালারির আবহ কখনওই ঠিক ভারাক্রান্ত হল না।
সিমা-র কর্ণধার রাখী সরকারও এটাই চেয়েছিলেন। প্রতিভাবান ও সৃজনশীল চিত্রশিল্পী হিসেবে গণেশ পাইন তো তাঁর জীবদ্দশাতেই সবার স্বীকৃতি পেয়েছেন। সুতরাং এই স্মরণসভা যেন কখনওই অশ্রুসজল না হয়ে ওঠে শুরুতেই অনুরোধ করেন রাখী। গণেশ পাইনের পরিমিত নিরহঙ্কার জীবনবোধ তাই গোটা সভাকে যেন মাতিয়ে রাখল। ইন্দ্রনীল বললেন, সাংসারিক খুঁটিনাটিতে আনাড়ি হলেও ছবির জগতে ঢুকলেই গণেশ কিন্তু রাজা। তখন আর সব কিছু তাঁর কাছে তুচ্ছ। একটানা আঁকতে আঁকতে পোকা খেয়ে ফেলেছেন, কিন্তু ক্যানভাস থেকে ব্রাশ তোলেননি।
গণেশ পাইনের স্মরণসভা। সিমা আর্ট গ্যালারিতে। ছবি: সুমন বল্লভ
কিন্তু তাঁকে নিয়ে এত আলোচনায় নিজে কতটা স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন গণেশ? তিনি অন্যদের খুঁটিয়ে দেখতে ভালবাসলেও অন্যেরা তাঁকে খুঁটিয়ে দেখছে, এটা মোটেও পছন্দ ছিল না প্রয়াত চিত্রশিল্পীর। কিন্তু এটা তো তাঁকে খুঁটিয়ে দেখারই সময় বললেন গণেশ-ঘনিষ্ঠ চিত্ররসিক অরুণ ঘোষ। গণেশের প্রয়াণের ১২ দিন বাদেই মারা গিয়েছেন তাঁর জার্মানি-নিবাসী বন্ধু অচিন্ত্য সেনগুপ্ত। দু’দশক ধরে বন্ধুকে লেখা সব চিঠি এখন গণেশ-মননের গুরুত্বপূর্ণ দলিল। অরুণবাবু বলছিলেন, গণেশের সমসময়ের মানুষজন ক্রমশ কমে আসছেন। গণেশের জীবনী ও তাঁর শিল্পকর্মের সম্পূর্ণ তালিকা তৈরিতে তাই বিলম্ব কাম্য নয়।
সিমা গ্যালারির সভাকক্ষে ছড়ানো গণেশের কিছু বহু-চর্চিত ছবি ও ছবির প্রতিকৃতি। ভারতীয় চিত্রকলার ঐতিহ্য ছুঁয়েও গণেশের নিজস্ব চিত্রভাষার স্বাক্ষর। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বিস্ময়, “আশির দশকে ‘দেশ’ পত্রিকা-র জন্য গণেশের একটি সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে শুনলাম, খাজুরাহো বা অজিন্ঠার চিত্রকলা কোনওটাই দেখতেই যাননি গণেশ।”
চিত্রশিল্পী রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, বিষয়ের মধ্যে গণেশের একীভূত হওয়ার কথা। মঞ্চের পিছনেই গণেশের টেম্পারা ‘উডেন হর্স’। ক্যানভাসে বহুমাত্রিক ভাবনার জট নিয়ে ভাবতে ভাবতে চিত্রসমালোচক মনসিজ মজুমদারের মনে পড়ল ষোড়শ শতকের ইংরেজ মেটাফিজিক্যাল কবি ডান-মার্ভেলদের কথা। ‘ব্ল্যাক মুন’-এর অস্থি-পঞ্জর সর্বস্ব হরিণটিও তখন অমোঘ ভাবে মনে করাচ্ছে, গণেশের জীবনবোধে মৃত্যুর ছায়া বা একসঙ্গে জীবন-মৃত্যু আলো-অন্ধকার দু’টি জগতে পা রেখে চলার কথা। মনসিজ বলছিলেন, সার্থক কবি-দ্রষ্টার মতোই গণেশও ছবিতে রূপের মধ্যে অরূপকে খুঁজেছেন। গণেশের জীবন-দর্শনই যেন মিশে গেল প্রমিতা মল্লিকের রবীন্দ্র-গানে। বুদ্ধদেব বসুর ‘কালসন্ধ্যা’ থেকে মহাভারতের মুষলপর্বের স্বজন-হারা কিন্তু নির্মোহ কৃষ্ণের কথা পড়লেন কৌশিক সেন। ঝুপ করে নেমে এস গণেশের ছবির অন্ধকার। চিত্রকলা, সঙ্গীত, নাটকের মোহনায় সন্ধ্যার ক্যানভাস তখন উপচে পড়ছে।

পুরানো খবর

পেশাদার সঞ্জয়
আর কয়েক দিন পরেই আদালতে তাঁর আত্মসমর্পণের কথা। তাই এখন দুই শিফটে কাজ করছেন সঞ্জয় দত্ত। দিনের বেলা ছবির শুটিং আর রাতে ডাবিং নিয়েই ব্যস্ত থাকছেন মুন্নাভাই। একটি সূত্র জানাচ্ছে, রাহুল অগ্রবালের ‘পুলিশগিরি’ ছবির কাজ শেষ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন সঞ্জয়। এই ক’টা দিন তিনি এতটাই ব্যস্ত যে পরিবারকে প্রায় সময়ই দিতে পারছেন না। পরিচালক রাহুলের কথায়, “সঞ্জয় চাইছেন এই ছবিটা তাড়াতাড়ি শেষ করে অন্য কাজে হাত দিতে। আর তাই সময় বাঁচাতে শুটিংয়ের পরেই ডাবিংয়ের কাজ করছেন তিনি।”

পুরানো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.