বিনোদন সঙ্কটে ১০০ কোটি
মুন্নাগিরি জারি থাকে কি না, সেটাই দেখার
বধারিত ভাবে আরও এক বার উঠে আসছে সেই পুরনো প্রশ্নটা। যেমন উঠেছিল ১৯৯৩, ১৯৯৪ কিংবা ২০০৭-এ। অর্থাৎ সঞ্জয় দত্তের জেলে যাওয়ার বছরগুলোয়। ২০১৩-র মার্চের সকাল থেকে আবার সেই প্রশ্ন ঘুরছে বলিউডে সঞ্জয়ের যে ছবিগুলোর কাজ চলছিল, বা সদ্য শ্যুটিং শেষ হয়েছিল, সেগুলোর ভবিষ্যৎ কী?
আত্মসমর্পণ করার জন্য তাঁকে চার সপ্তাহ সময় দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। পাঁচ বছরের জেল। দেড় বছর ইতিমধ্যেই জেলে কাটিয়ে ফেলেছেন বলে সেই মেয়াদটা নেমে এসেছে সাড়ে তিন বছরে। কিন্তু তাতে তো আশ্বস্ত হওয়ার কিছু নেই। না সঞ্জয়ের, না প্রযোজক-পরিচালকদের। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক বার মুন্নাভাই গারদে ঢুকে গেলে প্রায় একশো কোটি টাকার ব্যবসা ঘোর অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। কেউ কেউ অবশ্য অঙ্কটা তিনশো কোটি বলেও দাবি করছিলেন। তবে সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
পুলিশকর্তা থেকে অন্ধকার জগতের ডন বিপরীত মেরুর দু’রকম চরিত্রকেই পর্দায় অন্য মাত্রা দিয়েছেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সাজা বহাল রাখার পর চূড়ান্ত ‘আয়রনি’ বলেই মনে হচ্ছে আগামী ১৪ জুন মুক্তি পেতে চলা সঞ্জয়ের ছবির শিরোনামটাকে ‘পুলিশগিরি’। তামিল ছবি ‘সময়’-এর এই রিমেকে সঞ্জয় এক সৎ পুলিশ অফিসারের ভূমিকায়।
‘পুলিশগিরি’ ছবিতে সঞ্জয় দত্ত।
সেখানে তাঁর সহ-অভিনেত্রী প্রাচী দেশাই। ছবির শ্যুটিং শেষ হয়ে গিয়েছে, তাই এক দিক দিয়ে বাঁচোয়া। অমিতাভ-জয়ার অভিনয়ে মাইলফলক হয়ে থাকা ‘জঞ্জির’-এর রিমেকেও সঞ্জয় রয়েছেন। সেটিরও শ্যুটিং শেষ। কিন্তু এর পরেও তাঁর কাজ বাকি রয়েছে ‘পিকে’, ‘উঙ্গলি’, ‘শের’, ‘ঘনচক্কর’ (অতিথি শিল্পী)-এর মতো কিছু ছবিতে। এবং মুন্নাভাই সিরিজের তৃতীয় ছবিতে। সম্ভবত যার নাম হতে চলেছে ‘মুন্নাভাই চলে দিল্লি’। সেটির শ্যুটিং শুরুই হয়নি। বলা বাহুল্য, অনিশ্চিতের তালিকায় এই নামটাও ঢুকে পড়ায় ভাল রকম ধাক্কা খাবেন সঞ্জয়-ভক্তরা।
রিমেক ‘জঞ্জির’-এর মুক্তি অবশ্য আটকে রয়েছে আইনি জটে। তার সঙ্গে সঞ্জয়ের পুরনো মামলার কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানালেন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ কোমল নাহাতা। মামলা-মোকদ্দমা চলছে সোহম শাহ পরিচালিত ‘শের’ নিয়েও। সেই ছবিতে অবশ্য সঞ্জয়ের ডাবিংয়ের কাজ কিছুটা বাকি রয়েছে। কাজ বাকি রয়েছে কর্ণ জোহর প্রযোজিত ও রেনসিল ডি’সিলভা পরিচালিত ‘উঙ্গলি’ ছবিতেও।
আর ‘পিকে’? রাজকুমার হিরানির এই ছবির কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন সঞ্জয়। তবে কোমল বলছেন, “পিকে মূলত আমির খানের ছবি। সঞ্জয় হয়তো খুব বেশি হলে দশ দিনের মতো শু্যট করেছেন। চূড়ান্ত সমস্যা হলে ওই অংশটি নতুন করে শ্যুট করা যেতে পারে। দরকারে শের-এও অন্য কাউকে দিয়ে বাকি ডাবিংটুকু করিয়ে দেওয়া যাবে।”
তবে বিকল্প ব্যবস্থা তো পরের কথা। আর মুন্নার বিকল্প এত সহজে কেউ খুঁজবেনই বা কেন? আজই মুম্বইয়ের ‘ইম্পিয়িরাল হাইটস’ সঞ্জয়ের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন রাজকুমার হিরানি, বিদ্যা বালন, সুজয় ঘোষ, সোহা আলি খান-রা। গিয়েছিলেন ‘পুলিশগিরি’র প্রযোজক রাহুল অগ্রবাল। বললেন, “ছবি নির্ধারিত দিনেই রিলিজ করব। সঞ্জয় তো ইন্ডাস্ট্রির মুন্নাভাই। আগের বারও ভক্তেরা ওঁকে হতাশ করেননি। এ বারও করবেন না।” কর্ণ জোহর বলেছেন, “সঞ্জয়ের মতো মানুষের সাজা হওয়াটা খুবই দুঃখের।”
সঞ্জয়ের কাঁধে
ছবির নাম প্রযোজক নির্দেশক কোথায় দাঁড়িয়ে
কর্ণ জোহর শ্যুটিং অনেকটাই শেষ
রাজকুমার হিরানি পরের বছর মুক্তি
অর্পূব লাখিয়া শ্যুটিং শেষ, ছবি আইনি
জটিলতায় আটকে
টি পি অগ্রবাল মুক্তি জুনে
বিধুবিনোদ চোপড়া শ্যুটিং শুরু হয়নি
এমন আবেগ সরিয়েও কখনও কখনও বেরিয়ে পড়ছে কঠোর বাস্তব। আশঙ্কা, দোলাচল, সংশয়। আপাতত যার সবচেয়ে বেশি ছায়া দেখা যাচ্ছে ‘মুন্নাভাই-৩’ নিয়ে। এ বার আর রাজকুমার হিরানি নন, ছবির পরিচালক সুভাষ কপূর। প্রযোজক বিধু বিনোদ চোপরা আপাতত আমেরিকায়। তিনি না ফেরা পর্যন্ত ছবির ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলতে পারছেন না পরিচালক।
আসলে সোজা হিসেব। বলিউডের একটা অংশ মনে করছে, এমনিতেই ‘লগে রহো...’র পরে প্রায় বছর সাতেক মুন্নাভাই সিরিজের কোনও ছবি হয়নি। এখন সঞ্জয় যদি সাড়ে তিন বছর জেলে কাটান, তা হলে ফের গোটা ব্যাপারটায় মরচে পড়ে যাবে। আর এ এমন এক চরিত্র, যাতে সঞ্জয়ের একমাত্র বিকল্প সঞ্জয়ই। চিরকালীন মুন্নাভাই। পর্দায়, পর্দার বাইরেও।
মনে করিয়ে দেওয়া যাক ২০০৭-এ ইয়েরওয়াড়া জেলের বাইরের একটা দৃশ্য। সঞ্জয় বেরোচ্ছেন, দৌড়ে এসে হ্যান্ডশেক করে যাচ্ছেন পুলিশ কনস্টেবলরা। তা হলে কি মুন্নাভাই-টাই সব? আর তাঁর অপরাধ? বারবার জেলে যাওয়ায় ক্ষতি হবে না তাঁর ভাবমূর্তির? সঞ্জয় তো শুধু ফিল্ম নয়, বিজ্ঞাপনও করেন। দর্শকসমাজে বিজ্ঞাপনের প্রভাবও কম নয়।
বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রহ্লাদ কক্কর কিন্তু কট্টরপন্থী। বলছেন, “মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে শিশুদের যৌন হয়রানির অভিযোগ আসা মাত্রই তাঁকে পেপসির বিজ্ঞাপন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সলমনের ক্ষেত্রেও তা-ই। বিজ্ঞাপন জগতে এমন মানুষদের দরকার, যাঁদের ভাবমূর্তি নিয়ে কোনও প্রশ্নচিহ্ন নেই। তবে ‘বিগ বস’-এর উপস্থাপক হিসেবে সঞ্জয় আবার সুযোগ পেতে পারেন, কারণ তিনি সেই ১৯৯৩ থেকে এই মামলায় অনেক সহানুভূতি কুড়িয়েছেন।”
সহানুভূতি! অনেকেই মনে করেন, কোনও অভিনেতার জেলে যাওয়ার মতো করুণ পরিণতি হলে আপনি-আপনিই তাঁর প্রতি দর্শকের একটা সহানুভূতি তৈরি হয়ে যায়। যার ইতিবাচক সাড়া পড়ে বক্স অফিসে। এ বারও সঞ্জয়ের ক্ষেত্রে একই ব্যাপার ঘটতে পারে। তা ছাড়া, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাস বলছে, একমাত্র সাইনি আহুজা ছাড়া আইনি জটিলতা বলিউডের আর কারও কেরিয়ারে বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারেনি। সলমন খান, মধুর ভান্ডারকর বা রঘুবীর যাদবরা দিব্যি ছবি করে চলেছেন। কোমল নাহাতার বক্তব্য, “ছবি বাজে হলে তার দায় খারাপ বিষয়বস্তুর। সইফ আলি খানের ‘ককটেল’ রিলিজের আগেই এক রেস্তোরাঁয় জোর ঝামেলা হয়। বক্স অফিসে সেই ঘটনার কোনও নেতিবাচক প্রভাব ছিল না।”
“টিকিট কেটে সিনেমা দেখতে গেলে কেউ ভাবে না অভিনেতার ক’টা বিয়ে বা ক’দিন সে জেলে ছিল,” বলছিলেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। ২০০৫ সালে রুদ্রনীল নিজে ২৯ দিন জেলে ছিলেন। সে কথা উঠতে বললেন, “আজ দর্শক আমার জেল-কাহিনি নিয়ে মাথা ঘামান না। জেল থেকে বেরোনোর পরেই তো আমার কেরিয়ারের মোড় ঘুরে গিয়েছে। মানুষ সিনেমা আর বাস্তবে তফাতটা বোঝে।”
হলিউডের ক্ষেত্রেও কি তা-ই? অভিনেতা শঁ পেন ৩৩ দিন জেলে ছিলেন এক চিত্রগ্রাহককে মারার অভিযোগে। বেরিয়েও ছবি করেন। এবং ‘মিস্টিক রিভার’ আর ‘মিল্ক’-এর জন্য অস্কার পান।
তা হল সঞ্জয়ের চিন্তাটা কোথায়? সম্ভবত বয়স নিয়ে। তারুণ্যের পূজারী বলিউড। সেখানে সাড়ে তিন বছর পরে ৫৭ ছুঁইছুঁই সঞ্জয় কি পারবেন নিজের জায়গা ফিরে পেতে? মহেশ ভট্ট কিন্তু চিন্তাহীন। বললেন, “অনেক বার সঞ্জয়ের ‘অবিচুয়ারি’ লেখা হলেও ও বারবার ফিরে এসেছে। বয়স সত্যিই একটা বড় ফ্যাক্টর। তবে সঞ্জয় তো এখন আর লিড রোল করে না। কী ভাবে ফিরে আসবে, তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে ও কী ধরনের ছবি করছে আর তাতে কতটা নিজেকে সঁপে দিতে পারছে, তার উপর। আর ও যদি তখন অভিনয় না-ই করতে চায়, তা হলেই বা আপত্তি কীসের?” সঞ্জয় যদিও এত দূর ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই কিছু বলতে নারাজ।
শুধু জানিয়েছেন, তাঁকে শক্ত থাকতেই হবে। সব ছবির কাজ শেষ করবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
কিন্তু এটাও তো সত্যি কথা, এক ঝাঁক নতুন মুখ প্রতিনিয়ত উঁকি দিচ্ছে রুপোলি পর্দায়। সাড়ে তিন বছর সত্যিই অনেক সময়। মুন্নাভাইকে হয়তো সত্যিই প্রমাণ করতে হবে, ‘এ ভাবেও ফিরে আসা যায়।’ তবে ভক্তরা বলছেন, প্রমাণের আদৌ দরকার আছে কি?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.