কাওয়ের পাড়া
মাঠপুকুরে কোথাও স্বস্তির নিঃশ্বাস, কোথাও ক্ষোভ
খনও ভাল করে দিনের আলো ফোটেনি। টেলিভিশন মারফত পৌঁছে গিয়েছিল খবরটা। কাউন্সিলর ধরা পড়েছেন। মাঠপুকুর এলাকায় তখন আলো-আঁধারির ছায়া। অনেক পরিবারে স্বস্তির নিঃশ্বাস। কোথাও আবার নীরবতা। চাপা ক্ষোভ।
একটু বেলা গড়াতেই নিহত স্বামী অধীর মাইতির ছবি বুকে জড়িয়ে ধৃত কাউন্সিলর শম্ভু কাওয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দাবি তুললেন অনিতাদেবী। তার চোখ তখন আটকে টেলিভিশনের পর্দায়। যেন অনেক দিন পরে প্রাণভরে একটু নিঃশ্বাস নিতে পেরেছেন তিনি। কত কথা মনে পড়ছে। কান্নাও পাচ্ছে। বললেন, “আমি শম্ভু কাওয়ের ফাঁসি চাই না। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চাই।” কেন? এ বার যেন চোখ দু’টো একটু কঠোর হয়ে উঠল, “স্বামীর এ ভাবে মৃত্যু হওয়ায় আমি সারা জীবন দগ্ধে মরব। শম্ভু কাওয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলে সে ও তার পরিবারও একই কষ্ট পাবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা আশ্বাস দিয়েছেন, তা পূরণ করেছেন। কাউন্সিলর ধরা পড়েছে। এ বার আমার এই ইচ্ছেটাও যেন পূরণ করেন।”
অধীরবাবুর মেয়ে সুনীতা বাগেরও একই আর্জি মুখ্যমন্ত্রী, তথা ‘দিদি’র কাছে।
মৃত অধীর মাইতির স্ত্রী অনিতা।
গত ২০ মার্চ মাঠপুকুর এলাকায় ১৫ কাঠা জমির উপরে একটি বহুতল নির্মাণকে কেন্দ্র করে গোলমালের ঘটনায় মারা যান স্থানীয় তৃণমূল নেতা অধীরবাবু। বৃহস্পতিবার ছিল তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান, শুক্রবার নিয়মভঙ্গ। বিতর্কিত সেই জমিতেই সাদা কাপড় ঘিরে মৎস্যমুখ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সুষ্ঠু ভাবে কাজ সম্পন্ন করার জন্য সকাল থেকেই অধীরবাবুর বড় জামাই শান্তি বাগ চার দিকে ছুটে বেড়াচ্ছেন। অধীরবাবুর মৃতদেহ নিয়ে শ্মশানে হাজির হয়েছিলেন প্রায় ৯০০ মানুষ। তাই আমন্ত্রিতদের তালিকায় রয়েছে অনেক নাম। সকাল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে তার প্রস্তুতি। সেই জায়গায় দাঁড়িয়েই অধীরবাবুর এক আত্মীয় বলেন, “এলাকার বহু মানুষ আমাদের আর্থিক সাহায্য করেছেন। তাই সকলকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছি।”
অধীরবাবুর পরিবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চাইলেও তাঁর পড়শিদের দাবি অবশ্য আরও এক ধাপ এগিয়ে। তাঁরা চান, শম্ভু কাওয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি যথাযথ পুলিশি তদন্তও হোক। অধীরবাবুর বাড়ির গলির সামনে একটি ক্লাবে বসে থাকা অনেকের অভিযোগ, কাউন্সিলরের ক্ষমতা পেয়ে শম্ভু বেআইনি পথে অনেক টাকা লুঠপাঠ করেছেন। গরিবদের টাকাও হাতিয়েছেন। আগে সে সব টাকা উদ্ধার করুক পুলিশ, দাবি তুলেছেন তাঁরা।
মাঠপুকুরের এক দিক যখন ঘটনার দু’সপ্তাহ পরেও রাগে ফুঁসছে, অন্য প্রান্তের সবুজ রঙের তিনতলা বাড়িটি সকাল থেকেই দরজা-জানালায় খিল তুলে রেখেছে। সপ্তাহ দুয়েক আগেই যে বাড়ি ছিল এলাকার প্রধান আকর্ষণ। এক মুঠো সাহায্যের আশায় ‘কাউন্সিলর সাহেবের’ দরজায় প্রতিদিন সকাল থেকে লাইন পড়ে যেত। ঘনঘন গাড়ির আনাগোনা, লোকের কোলাহল, বৈভব-ক্ষমতায় সরগরম থাকত তিনতলা বাড়িটি। এ দিন তা ছিল অসম্ভব শান্ত!
শম্ভুনাথ কাওয়ের বাড়ির সামনে পুলিশ-পাহারা। শুক্রবার।
এ দিন দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির সামনে বসে রয়েছেন স্থানীয় জনা কুড়ি মহিলা। শম্ভুবাবুর বাড়িতে কেউ আছেন কি? তাঁদের কাছেই জানতে চাওয়া হল। রে-রে করে উঠলেন সকলে। ভিড়ের মধ্যে থেকেই বেরিয়ে এল ক্ষোভ, “ওই ঘটনার পরে শোকে মারা গিয়েছেন শম্ভুবাবুর দাদা বিশ্বনাথ কাও। কাউন্সিলরের মা-ও খুব অসুস্থ। বাড়ির কেউ আপনাদের সঙ্গে কোনও কথা বলবেন না।”
টেলিভিশনের পর্দায় দোর্দণ্ডপ্রতাপ কাউন্সিলরের গ্রেফতারের খবর আসার পর থেকে সবুজ বাড়িটি কার্যত ঘিরে বসে রয়েছেন ওই মহিলারাই। ভিড়ের মধ্যে থেকে ছায়া দলুই, অমলা সাহাদের অভিযোগ, পুলিশ আর প্রশাসন একতরফা আচরণ করছে। অধীর মাইতি মারা না গেলেই ভাল হত। কিন্তু তাঁর বিভিন্ন বিষয়েও তদন্ত করা উচিত পুলিশের। তাঁর সঙ্গেও নানা রকম দুর্নীতির যোগ ছিল।
দলটির ক্ষোভ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও। “দিদি যদি অধীরবাবুর পরিবারের লোকজনকে চাকরি দিতে পারেন, তা হলে শম্ভুনাথের মৃত দাদার মেয়েকেও কেন চাকরি দেওয়া হবে না?” প্রশ্ন উঠল ওই ভিড়ের মধ্যে থেকেই।
২০ মার্চ থেকেই পুলিশ-পিকেট বসেছে কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে। কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বলেন, “সকাল থেকেই এই মহিলারা বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন।”
আশপাশের গলি-ঘুপচিতেও শম্ভুর অনুগামীদের অবাধ গতিবিধি। সে সময়ে সুদূর উত্তরপ্রদেশে শম্ভু কাওকে মুখ ঢেকে, হাতকড়া পরিয়ে বালিয়া আদালতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি করছেন পুলিশ অফিসারেরা।


—নিজস্ব চিত্র

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.