‘টেট’-এ অব্যবস্থার প্রতিবাদ |
সংসদ অফিসের সামনে বিক্ষোভ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
প্রাথমিকের টেট পরীক্ষা ঘিরে চরম বিশৃঙ্খলার প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সামনে দফায় দফায় বিক্ষোভ হল। প্রতিবাদে সামিল হলেন এসএসআই- ডিওয়াইএফ থেকে যুব কংগ্রেস- ছাত্র পরিষদ, বিজেপির যুব মোর্চাও। বিক্ষোভ চলে বিকেল পর্যন্ত। বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে সকাল থেকে সংসদের সামনে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। মজুত ছিল হ্যান্ড মাইক, কাঁদানে গ্যাসের সেলও। যদিও দিনের শেষে তেমন কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেনি। যানজট ও পরীক্ষা কেন্দ্রের ঠিকানা ভুলের জেরে যাঁরা রবিবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিতে পারেননি, তাঁদের ফের সুযোগ করে দেওয়ার দাবিতে সোমবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ অফিসে বিক্ষোভ দেখায় এসইউসি’র ছাত্র সংগঠন ডিএসও ও যুব সংগঠন ডিওয়াইও। দুই সংগঠনের সমর্থকরা এ দিন বিকেলে তমলুক শহরের হাসপাতাল মোড়ে জড়ো হওয়ার পর মিছিল করে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ অফিসের সামনে যান এবং বিক্ষোভ শুরু করেন। সংসদ অফিসের সামনে আগেই পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল। |
|
প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সামনে বিক্ষোভে বিজেপি। |
বিক্ষোভকারীরা জোর করে সংসদ অফিসের ভিতরে ঢুকতে গেলে পুলিশ বাহিনী বাধা দেয়। তখন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি বাধে। পরে দুই সংগঠনের নেতারা সংসদ অফিসে স্মারকলিপি দেন। এ দিন বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া ডিওয়াইও জেলা সম্পাদক ইরফান আলি, ডিএসও জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনুপ মাইতি অভিযোগ করেন, ‘‘রবিবার বাসে, ট্রেনে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেও অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেননি। এ ছাড়াও পর্ষদের গাফিলতিতে পরীক্ষাকেন্দ্রের ঠিকানা ভুল থাকায় বহু পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারেনি। প্রশাসনিক গাফিলতির কারণে যাঁরা পরীক্ষা দিতে পারেননি, তাঁদের দ্রুত পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা করতে হবে।” পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি গোপাল সাহু অবশ্য এ দিন দাবি করেন, “রবিবার জেলার অধিকাংশ পরীক্ষার্থীই পরীক্ষা দিয়েছেন। যাঁরা পরীক্ষা দিতে পারেননি, তাঁরা আগামী বুধবারের মধ্যে সংসদ অফিসে আবেদন করতে পারবেন। তাঁদের আবেদন রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে পাঠানো হবে।”
পশ্চিমে সংসদ অফিসের সামনে সোমবার সকালে প্রথমে বিক্ষোভ দেখায় যুব কংগ্রেস-ছাত্র পরিষদ। দুই সংগঠনের কর্মী- সমর্থকেরা সংসদের মধ্যে ঢুকে স্লোগান দিতে থাকেন। কেন এমন অব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হল পরীক্ষার্থীদের, তার জবাব চাওয়া হয়। পরে সংসদের চেয়ারম্যান স্বপন মুর্মুর কাছে এক স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়। দুপুরে সংসদ সভাপতির কাছে স্মারকলিপি জমা দেয় বিজেপির যুব মোর্চা। নেতৃত্ব দেন সংগঠনের জেলা সভাপতি শুভজিত্ রায়, অরূপ দাস প্রমুখ। |
|
|
প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সামনে বিক্ষোভে
ছাত্র পরিষদ সমর্থকরা। |
প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সামনে বিক্ষোভে
এসএফআই সমর্থকরা। |
|
দুপুরে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করে এসএফআই-ডিওয়াইএফ। দুপুর দু’টো থেকে শুরু হয় এই কর্মসূচি। চলে বিকেল চারটে পর্যন্ত। নেতৃত্বে ছিলেন ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক দিলীপ সাউ, এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডা প্রমুখ। ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদকের বক্তব্য, “রাজ্য সরকারের উচিত, যাঁরা পরীক্ষা দিতে পারেননি, তাঁদের সম্পর্কে সুস্পষ্ট নীতি গ্রহণ করা।” পাশাপাশি তিনি বলেন, “আমাদের বিক্ষোভ কর্মসূচির কথা জেনে সোমবার সকাল থেকে সংসদের সামনে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হল। সংসদের সামনের রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ করা হল। এতো পুলিশ যদি রবিবার মোহনপুর সেতুর আশপাশে মোতায়েন করা হত, তাহলে হাজার হাজার পরীক্ষার্থীকে সমস্যায় পড়তে হত না।” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদকের বক্তব্য, “সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা নিতে ব্যর্থ হয়েছে পর্ষদ। ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত নিয়ে ছেলেখেলা করা হয়েছে। কোনও পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এমন বিশৃঙ্খলা-দুর্ভোগ আগেও কখনও হয়নি।” |
|
প্রতিবাদে পথে ডিএসও। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
এদিকে, সংসদ কর্তৃপক্ষ জানান, যাঁরা পরীক্ষা দিতে পারেননি, তাঁরা অ্যাডমিট কার্ডের জেরক্স সঙ্গে দিয়ে আবেদন করতে পারেন। সংসদ অফিসেই আবেদনপত্র জমা নেওয়া হবে। পরে ওই সব আবেদন রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান বলেন, “রিসিভ সেকশনে আবেদনপত্র জমা নেওয়া হবে। আগামী দু’-তিন দিন ধরে আবেদনপত্র জমা নেওয়া হবে। পরে আমরা এই সব আবেদনপত্র রাজ্যে পাঠিয়ে দেব। রাজ্য থেকে যেমন নির্দেশ আসবে, সেই মতোই পদক্ষেপ হবে।”
|
—নিজস্ব চিত্র। |
পুরনো খবর: অব্যবস্থায় নাকাল পূর্বও
যানজটে আটকে গেল পরীক্ষার্থীদের ভাগ্য |
|