|
|
|
|
তালিকাতেই ত্রুটি, সহায় প্রকল্পে বঞ্চিত হতদরিদ্ররা |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
অনাহারের গ্রাম আমলাশোল যে ব্লকে পড়ে সেই বেলপাহাড়িতে ‘সহায়’ প্রকল্পে উপভোক্তা মাত্র ৫৬ জন। অথচ তুলনায় সম্পন্ন লোকের বাস যেখানে সেই ডেবরা ব্লকে উপভোক্তার সংখ্যা ৭৭৭, পিংলায় ৭৫০, খড়্গপুর ২ ব্লকে ৬১৯ জন।
হতদরিদ্র মানুষকে রান্না করা খাবার দেবার প্রকল্পে পরিসংখ্যানের এই ফারাক পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রশাসনিক কর্তাদের চোখ কপালে তুলে দিয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, ঠিকমতো তালিকা তৈরি হচ্ছে তো? উপভোক্তা বাছাইয়ের মাপকাঠি ঠিক আছে তো? গাফিলতি যে রয়েছে সম্প্রতি তার প্রমাণ মিলেছে ‘স্ট্রেনদেনিং রুরাল ডিসেন্ট্রালাইজেশন’ (এসআরডি) বিভাগকে দিয়ে করানো তদন্তে। প্রশাসন সূত্রে খবর, তদন্তে দুটি বিষয় উঠে এসেছে। প্রথমত, বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দেখেই কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত প্রকল্পের আওতায় নিয়ে এসেছে। প্রকৃত অবস্থা খতিয়ে দেখা হয়নি। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক স্বজনপোষণের জেরে অন্যায্য ভাবে অনেকের নাম তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। আর এই জোরা ফলায় বঞ্চিত হয়েছেন অনাহারে দিন কাটানো প্রকৃত দরিদ্র মানুষজন। |
সহায় প্রকল্প কী? |
যে সব গরিব মানুষ দিনে এক বেলা খেতে পান, আর এক বেলা অন্ন সংস্থানের উপায় নেই,
এমনকী চাল দিলেও রান্না করে খাবার পরিস্থিতি নেই, তাঁদের জন্যই এই প্রকল্প।
এতে এক বেলা রান্না করা খাবার
দেওয়া হয় উপভোক্তাদের। |
|
জঙ্গলমহলে সহায় |
• সুযোগ পাওয়ার কথা
৫,৪৮৬টি পরিবারের
|
• বর্তমানে সুযোগ পাচ্ছে
২,২৭৮টি পরিবার
|
• ব্লক ভিত্তিক উপভোক্তা
|
বেলপাহাড়িতে ৫৬ জন, |
লালগড়ে ৬৫ জন, |
জামবনিতে ২২ জন, |
ঝাড়গ্রামে ৭৮ জন, |
গোপীবল্লভপুর ১ ব্লকে ১২৯ জন, |
গোপীবল্লভপুর ২-এ ১০৮ জন, |
নয়াগ্রামে ১৭৯ জন, |
শালবনিতে ১৫৮ জন, |
কেশিয়াড়িতে ৯৭ জন। |
|
|
সমস্যা রয়েছে প্রশাসনিক স্তরেও। ২০০৯ সাল থেকে চলে আসা এই প্রকল্পে এতদিন নজরদারিই করা হয়নি। প্রকল্প দেখভালের জন্য চুক্তির ভিত্তিতে প্রতি ব্লকে একজন করে ‘ইয়ং প্রফেশনাল’ নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে তাঁদের অধিকাংশই কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। জেলায় যেখানে ব্লক ২৯টি, সেখানে এই পদে কর্মী আছেন মাত্র তিন জন। ফলে, প্রশাসনিক গাফিলতির বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
জেলার ২৯টি ব্লকের মধ্যে ২৮টিতেই (কেশপুর বাদে) সহায় প্রকল্প চলে। প্রশাসনিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৮টি ব্লকের ৪৫৭৮টি পরিবারের ৫৭৫০ জন সদস্য এই প্রকল্পের আওতাধীন। প্রকল্প চালাতে বছরে ৪ কোটি ১৬ লক্ষ ৭৪ হাজার ৬৮০ টাকা খরচ হয়। অথচ যেখানে দারিদ্র সর্বাধিক, সেই জঙ্গলমহলের ব্লকগুলিতেই উপভোক্তার সংখ্যা নগণ্য। কিন্তু তদন্তে উঠে এসেছে জেলার ১৬৯৫৪টি পরিবার এই প্রকল্পের আওতায় আসার উপযুক্ত। যার মধ্যে জঙ্গলমহলের ১১টি ব্লকের ৫,৪৮৬টি পরিবার উপযুক্ত। বর্তমানে সেখানে মাত্র ২,২৭৮টি পরিবারের ২,৬৯০ জন সুযোগ পাচ্ছেন। বাকিরা বঞ্চিতই থেকে গিয়েছেন।
যেখানে প্রকল্প চলছে, সেখানেও হাল বেশ খারাপ। অর্থাভাবে বেশিরভাগ জায়গাতেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে খাবার দেওয়ার কাজ। খড়্গপুর ২ ব্লকের চাঙ্গুয়ার গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শিবপ্রসাদ মল্লিক বলেন, “দেড় লক্ষ টাকা ধার করেও কিছুদিন খাবার দেওয়ার কাজ চালিয়েছিলাম। এখনও টাকা পাইনি। ফলে প্রকল্প বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি।” ওই ব্লকের কালিয়াড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অসীমা কারকের বক্তব্য, “অনেকদিন এই প্রকল্পে টাকা পাইনি। কোনও জায়গায় ধার করে চালানো গেলেও সর্বত্র চালানো সম্ভব হচ্ছে না।” প্রশাসন সূত্রে খবর, ব্লক থেকে এ বার জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে, অর্থাভাবে প্রকল্প বন্ধ হতে বসেছে। এই পরিস্থিতিতে কী করণীয়? প্রশাসনিক ভাবে এখনও এর জবাব দেওয়া হয়নি। তবে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে যে টাকা খরচ হয়েছে, তা দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু নতুন তালিকাও তৈরি করা হবে। ফলে, যতদিন না নতুন তালিকা হচ্ছে, ততদিন প্রকল্প স্বাভাবিক ছন্দে চালানো কঠিন। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নতুন তালিকা তৈরি হওা কঠিন। অর্থ সঙ্কটও রয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, চাহিদা মেটাতে প্রায় ৪ কোটি টাকার প্রয়োজন। কিন্তু সরকার মাত্র ১ কোটি টাকা দিয়েছিল। ফলে সমস্যা থাকছেই। কবে সঙ্কট কাটে, কী ভাবেই বা কাটে সেটাই এখন দেখার। |
|
|
|
|
|