অব্যবস্থায় নাকাল পূর্বও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
পরীক্ষা শেষের পনেরো মিনিট আগে পড়িমড়ি করে কেন্দ্রে ঢুকছেন পরীক্ষার্থীরা। কোথাও আবার পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে না-পেরে মাঝপথ থেকেই ফিরতে হয়েছে। যানজট আর প্রশাসনিক অব্যবস্থায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে চূড়ান্ত দুর্ভোগের শিকার হলেন প্রাথমিকে নিয়োগ পরীক্ষার বহু প্রার্থী।
দিঘা-কলকাতা সড়কে চণ্ডীপুর ও হেঁড়িয়ায় যানজট ছিল সবচেয়ে বেশি। চণ্ডীপুরের মগরাজপুরে রেল ক্রসিংয়ের কাছে একটি বাস বিকল হয়ে সকালে যানজট হয়েছিল। যার জের চলে অনেকক্ষণ। এ ছাড়াও এ দিন হিজলি শরিফ থেকে তীর্থযাত্রীদের অনেকে যাতায়াত করায় সামান্য যানজট হয়েছিল বলে জানান পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন। |
|
চলছে পরীক্ষা |
তাঁর দাবি, “দ্রুত যানজট সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষার্থীদের কোনও অসুবিধা হয়নি।” জেলা জুড়ে বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রের খুচরো গোলমাল অবশ্য সে কথা বলছে না। গোলমালের মূল কারণটা হল, পরীক্ষাকেন্দ্রগুলো পড়েছিল অনেক দূরে-দূরে। রাস্তায় যানজটে পড়ে অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে পারেননি। অনেকে আবার মাঝপথ থেকে ফিরে এসেছেন। এ দিন পরীক্ষা শেষের মাত্র পাঁচ মিনিট আগে তমলুকের হ্যামিল্টন হাইস্কুলে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছন কাঁথির তৃপ্তি মাইতি, অঞ্জলি মান্না-সহ অন্তত জনা বিশেক পরীক্ষার্থী। কাঁথি থেকে গাড়ি ভাড়া করে এসেও সময়মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে না পারায় আফশোসের অন্ত নেই তাঁদের। পরীক্ষা অবশ্য দিয়েছেন তাঁরা। |
|
পরীক্ষার আগে। তমলুক হ্যামিল্টন স্কুলে পার্থপ্রতিম দাসের ছবি। |
প্রতিবন্ধীদের জন্য ধার্য অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মিনিট কুড়ি সেই সময়ে সম্পূর্ণ পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব ছিল না।তৃপ্তি ও অঞ্জলিদেবীর অভিযোগ, ‘‘প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আটকে ছিলাম। যানজট সরাতে প্রশাসনিক তৎপরতা দেখা যায়নি।” একই ভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন মেচেদা থেকে কাঁথির রামনগরে গোবরা ইন্দ্রনারায়ণ ক্ষেত্রমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া কাকলি গুছাইত, কাশ্মিরা খাতুন, সাহেব আলিরা। পরীক্ষা শেষের ১৫ মিনিট আগে পৌঁছন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, “ অতিরিক্ত সময়ও দেওয়া হয়নি।” |
|
একই বেঞ্চে তিন পরীক্ষার্থী। এগরায় কৌশিক মিশ্রের ছবি। |
এই পরীক্ষা কেন্দ্রেই একদম শেষ মুহূর্তে পৌঁছেছিলেন কয়েকজন। ঢুকতে বাধা দিলে বিদ্যালয়ের গেটে তালা মেরে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। পরে বিডিও’র হস্তক্ষেপে প্রায় ৪০ জন পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সভাপতি গোপাল সাহু। এগরার তেতুলিয়া ষড়রঙ্গ এনএন হাইস্কুলে পরীক্ষাকেন্দ্র পড়েছিল পাঁশকুড়ার অনেকের। মাঝপথে গাড়ি না পেয়ে পরীক্ষা না দিয়েই ফিরতে হয়েছে প্রায় জনা কুড়ি পরীক্ষার্থীকে। |
|
সংসার নিয়েই পরীক্ষাকেন্দ্রে। হলদিয়ায় আরিফ ইকবাল খানের ছবি। |
এমনই এক পরীক্ষার্থী সুপর্ণা মিত্র বলেন, “ বাসস্ট্যান্ডে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও এগরাগামী বাস পাওয়া যায়নি।” পরীক্ষাকেন্দ্রের ঠিকানা ঘিরেও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। ওয়েবসাইটে গয়েশ্বরী বালিকা বিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রের নামের পাশে থানা দেওয়া হয়েছিল সুতাহাটা, যা হওয়ার কথা মহিষাদল। পরে সেই ভুল সংশোধন করা হলেও এ দিন দূর-দূরান্ত থেকে সুতাহাটায় এসে পৌঁছন অনেকেই। পরে অবশ্য তাঁরা মহিষাদলে নির্দিষ্ট পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছন। ওয়েবসাইটে পরীক্ষাকেন্দ্রের নাম ছিল না বা ঠিকানা ভুলের জেরে সমস্যা হয়েছিল এমন প্রায় ৩০ জন পরীক্ষার্থী বাজকুল মিলনি মহাবিদ্যালয়ের সংরক্ষিত পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছেন এ দিন। নন্দকুমারের খঞ্চিতে আবার দু’টো গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জন পরীক্ষার্থী-সহ ৬ জন আহত হন। এঁদের বাড়ি কাঁথি ও ভূপতিনগর এলাকায়। দুই গাড়ির চালক-সহ ছ’জনই তমলুক জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। |
|