তৃণমূলের ছাত্রনেত্রী ও আইনজীবী পিয়ালি মুখোপাধ্যায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে প্ররোচনার অভিযোগ উঠেছিল আগেই। ঘটনার ছ’দিনের মাথায়, রবিবার পিয়ালির ভাই প্রীতম মুখোপাধ্যায়ও বলেন, তাঁর দিদির মৃত্যুর পিছনে এক বা একাধিক লোকের প্ররোচনাই কাজ করেছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
কার বা কাদের বিরুদ্ধে প্ররোচনার অভিযোগ তুলছেন তাঁরা?
সরাসরি নাম না-করলেও প্রীতমের ইঙ্গিত তৃণমূলের প্রথম সারির কিছু নেতার দিকেই। তিনি বলেন, “আমাদের অনেক কথা বলার আছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে এখন মুখ খুলছি না।” পুলিশের উপরে তাঁরা আস্থা রাখছেন বলে জানিয়ে প্রীতমের মন্তব্য, “আশা করছি, দোষীরা শাস্তি পাবে। দরকার হলে নির্দিষ্ট অভিযোগ এনে এফআইআর করতে আমরা পিছপা হব না।”
ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এখনও তাদের হাতে আসেনি বলে জানিয়েছে পিয়ালির পরিবার। প্রীতমের দাবি, তাঁর দিদির মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনের জন্য নিরপেক্ষ তদন্তের ব্যবস্থা হোক। তিনি বলেন, “পেশাগত চাপে দিদি আত্মহত্যা করতে পারে, এটা বিশ্বাস করতে পারছি না। চাপ নিয়ে কাজ তো দিদি বরাবরই করত।” তাঁদের পরিবার পুলিশকে সব রকম সাহায্য করতে তৈরি বলেও জানান প্রীতম।
২৬ মার্চ রাজারহাটে নারায়ণপুরের একটি ফ্ল্যাটে পিয়ালির ঝুলন্ত দেহ পায় পুলিশ। পাওয়া যায় একটি সুইসাইড নোটও। পিয়ালির বাড়ি বর্ধমানে। গত কয়েক মাস ধরে কর্মসূত্রে তিনি রাজারহাটের ওই ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। সোমবার রাতে ওই ফ্ল্যাটে তাঁর খড়দহের বান্ধবী রূপকথা গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়াও ছিলেন আরও এক চেনা বন্ধু। সেই বন্ধুটির পরিচয় নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। রূপকথা ওই বন্ধুর পরিচয় খোলসা করে জানাননি। প্রীতমের দাবি, তাঁর দিদির ওই বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। রূপকথা অবশ্য সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি। তিনি এ দিন ফোনে বলেন, “সোমবার বিকেলে কী হয়েছিল, কারা ছিল, সেই ব্যাপারে যা বলার প্রশাসনকে বলেছি। আর কিছু বলব না।”
পিয়ালির রহস্যমৃত্যুর তদন্তভার নিয়েছে বিধাননগরের গোয়েন্দা বিভাগ। ওই নেত্রীর দেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টা আগে, সোমবার রাতে কারা তাঁর ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন, কী ঘটনা ঘটেছিল এই সব প্রশ্নের জবাব পেলে জট কিছুটা খুলতে পারে বলে পুলিশের একাংশের আশা। পুলিশি সূত্রের খবর, সোমবার সন্ধ্যায় কারা (এক জন না দু’জন) পিয়ালির ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন, তা জানতে আবাসনের রক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আবাসনের নথি ঘেঁটেও দেখা হচ্ছে। তবে তাতে সবটুকু জানা যাবে কি না, সেই বিষয়ে পুলিশেরই সংশয় আছে। কারণ তারা বলছে, অনেক ক্ষেত্রেই কোনও চেনা লোকের সঙ্গী হিসেবে কেউ এলে বা কোনও পরিচিত ব্যক্তি হাজির হলে সব সময় তাঁর বা তাঁদের নাম খাতায় লেখা হয় না।
তদন্তকারীরা জানান, শুধু পিয়ালির বন্ধুবান্ধব বা পরিচিতেরাই নন, তিনি যাঁর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন, তাঁকেও জেরা করা হবে। ওই বাড়িওয়ালা বিদেশে থাকেন। তাঁকে খবর পাঠানো হয়েছে। পিয়ালির ল্যাপটপে তাঁর সঙ্গে চার নেতা-মন্ত্রীর ভিডিও-ছবি পাওয়া গিয়েছে বলে জানায় পুলিশ। তবে কারা সেই নেতা-মন্ত্রী, তদন্তের স্বার্থেই পুলিশ তা জানাতে চাইছে না।
প্রশ্ন উঠেছে পিয়ালির জীবনযাত্রা নিয়েও। এই জীবনযাপনের সঙ্গে
তাঁর আয়ের সঙ্গতি ছিল কি না, পুলিশ তা যাচাই করছে। রাজারহাটের
ফ্ল্যাটটি দামি আসবাবে ভর্তি। ভাড়াও বেশি। এত খরচ জোগাত কে, তারও তদন্ত চলছে। এই সব দিক খুঁটিয়ে দেখার মধ্যেই ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেয়েছে পুলিশ। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা-প্রধান অণর্র্ব ঘোষ বলেন, “গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলে সাধারণ ভাবে যে-সব লক্ষণ ফুটে ওটে, ময়না-তদন্তের রিপোর্টেও তা-ই মিলেছে।”
|