নাকের খোঁজে এখনও নাকাল। তবু নরুণ-প্রাপ্তির শিকে ছিঁড়েছে পুলিশের বরাতে। তৃণমূল কাউন্সিলর শম্ভুনাথ কাওয়ের হদিস না মিললেও তাঁর শ্যালিকার পুত্র দেবাশিস সরকার শনিবার গ্রেফতার হয়েছে।
পুলিশের দাবি, তদন্তকারীদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়াতে শম্ভু দেবাশিসের সঙ্গেই তলে তলে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছিলেন। ২০ মার্চ খুনের দায়ে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা প্রথমে মহেশতলার জিঞ্জিরাবাজারে দেবাশিসদের বাড়িতেই আশ্রয় নেন। দু’দিন কাটিয়ে ডেরা পাল্টান।
জিঞ্জিরাবাজারের সরকারপুলের বান্দালে দেবাশিসের বাড়িতে একযোগে অভিযান চালায় কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ। রবিবার আদালতে দেবাশিসকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ হাজতে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, জিঞ্জিরাবাজারেই দেবাশিসের এক বন্ধুর বাড়িতে হানা দিয়ে নগদ ৫৯ লক্ষ টাকা, প্রায় ১৭ লক্ষ টাকার গয়না ও শম্ভুর মোটরবাইক উদ্ধার হয়। পুলিশের দাবি, শম্ভুই সেখানে টাকা লুকিয়েছিলেন। ওই টাকা-গয়না পুলিশ হাতে পাওয়ায় বারবার আশ্রয় পাল্টে শম্ভুর পক্ষে দীর্ঘ অজ্ঞাতবাসে থাকায় কিছুটা সমস্যা হবে বলে তদন্তকারীদের ধারণা। দেবাশিসের বন্ধুর বাবা বিশ্বনাথ নস্করকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
শম্ভুর খোঁজে এই সাফল্যটুকু বাদ দিলে বাকিটা সেই গেছোদাদা-র গল্প। তিনি কোথায় আছেন অঙ্ক কষে পুলিশ যতই ধরার চেষ্টা করুক না-কেন, ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় কিছুতেই পৌঁছতে পারে না। প্রকাশ্য মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শম্ভুনাথকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন ঠিকই, কিন্তু তার ১১ দিন বাদেও ব্যর্থ পুলিশ। শম্ভু জিঞ্জিরাবাজারে আছেন খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছে জানতে পারল, খবরটা একদম ঠিক! তবে ক’দিন আগেই অন্য আশ্রয়ের খোঁজে ছুট দিয়েছেন। পিকনিক গার্ডেনের এক আত্মীয়-বাড়ি, মুকুন্দপুরের একটি লজ বা সেলিমপুরে এক বন্ধুর বাড়িতে হানা দিয়েও পুলিশ একই ভাবে খালি হাতে ফিরেছে। প্রতিবারই খবর মিলেছে, কাও ক’দিন আগেই অন্যত্র গিয়েছেন।
তবে এই গা-ঢাকা দেওয়ার পর্বে শম্ভুর বড় ভরসা তাঁর শ্বশুরবাড়ি। এত দিনে একটিবারও শম্ভুর অন্য আত্মীয়দের কাছে তাঁর একটি ফোনও আসেনি। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকেদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন শম্ভু। শম্ভু ও দেবাশিসও যে এক জায়গায় ছিলেন, তা দু’জনের মোবাইলের অবস্থান থেকেই পুলিশের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ সূত্রের খবর, পিকনিক গার্ডেনে আর এক শ্যালিকার বাড়িতেও ছিলেন শম্ভু। কিন্তু সেখানে হানা দিয়েও পুলিশ দেখে, পাখি পালিয়েছে। শম্ভুর স্ত্রী ও ৮ বছরের ছেলেও পিকনিক গার্ডেনের মসজিদবাড়ি লেনের ওই বাড়িতে ছিলেন বলে পুলিশের দাবি।
শম্ভুর পরিজনদের জেরা করে এখনও পর্যন্ত অবশ্য তাঁর বিষয়ে বলার মতো কিছু সূত্র পায়নি পুলিশ। ধৃত দেবাশিসও পুলিশকে বিভ্রান্ত করছেন বলে তদন্তকারীদের দাবি। মেসো (শম্ভু) কোথায় থাকতে পারেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার জবাব দেবাশিস এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে পুলিশের দাবি। গত ২০ মার্চ ধাপা-মাঠপুকুর এলাকায় একটি বহুতল নির্মাণ নিয়ে বিবাদে অধীর মাইতি নামে এক প্রৌঢ়কে খুনের পরেই গা-ঢাকা দিয়েছিলেন শম্ভু। |