অসুস্থ যাত্রী নিয়ে কলকাতায় বিমান নামার পরেও চিকিৎসক কেন সময় মতো রোগীর কাছে পৌঁছলেন না, তা জানতে চেয়ে বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিল ডিজিসিএ। দেশে বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির তরফে শনিবারের ঘটনায় উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়েছে। ডিজিসিএ-প্রধান অরুণ মিশ্র রবিবার দিল্লি থেকে বলেন, “ব্যাপারটা অত্যন্ত গুরুতর। বিস্তারিত তদন্ত করব।”
শনিবার সকালে এয়ার ইন্ডিয়া-র উড়ানে দিল্লি থেকে কলকাতা আসার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এক যাত্রী। বসন্ত রাউত নামে বছর ষাটেকের সেই প্রৌঢ়কে বিমানযাত্রী এক মহিলা চিকিৎসক কিছুক্ষণ দেখভাল করেন। কলকাতায় নামার আগে যাত্রীর অসুস্থতার কথা পাইলট জানিয়ে দেন বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-কে। নিয়ম হল, এমন বার্তা এলে বিমানবন্দরে কর্তৃপক্ষের তরফে ডাক্তার প্রস্তুত রাখতে হবে। বিমান থামার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিমানে উঠে অসুস্থ যাত্রীকে পরীক্ষা করবেন। সিদ্ধান্ত নেবেন, হাসপাতালে পাঠানো দরকার কি না।
কিন্তু শনিবার কর্তৃপক্ষের তরফে এমন কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। বস্তুত বিমান নামার পরে পনেরো মিনিট অপেক্ষা করা হলেও কোনও চিকিৎসক এসে পৌঁছাননি। অসুস্থ যাত্রীকে হুইলচেয়ারে টার্মিনালের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু সেখানেও ডাক্তার মেলেনি। একই উড়ানে ছিলেন সিপিআই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত। গুরুদাসবাবু বলেছেন, বিমানবন্দরের এ হেন অব্যবস্থা সম্পর্কে নালিশ জানিয়ে তিনি বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহকে চিঠি লিখবেন।
কিন্তু এমনটা হল কেন?
বিমানবন্দর-সূত্রের খবর: কলকাতার নতুন টার্মিনালে চিকিৎসা-পরিষেবা জোগানোর ভার ন্যস্ত হয়েছে বেসরকারি এক হাসপাতালের উপরে। সেখান থেকে যে ডাক্তারেরা ডিউটিতে আসছেন, তাঁরা এখনও ভাল করে বিমানবন্দরের এলাকা চিনে উঠতে পারেননি। আর তারই জেরে বিভ্রাট। সূত্রটি জানাচ্ছেন, শনিবার এয়ার ইন্ডিয়া-র বিমানটির ৩৭ নম্বর বে-তে এসে দাঁড়ানোর কথা ছিল। বার্তা পেয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক গাড়ি নিয়ে বেরিয়েও পড়েছিলেন। কিন্তু ৩৭ নম্বর বে তিনি খুঁজে পাননি। কোন বে কোথায়, তার পরিষ্কার দিক্নির্দেশ না-থাকায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গাড়ি নিয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এমনকী ফোনে যোগাযোগ করা হলে ঠিকঠাক বলতেও পারেননি, ওই মুহূর্তে তিনি নিজে ঠিক কোথায় রয়েছেন। ফলে কর্তৃপক্ষের গাড়ি গিয়ে যে তাঁকে পথ চিনিয়ে নিয়ে যাবে, তারও উপায় ছিল না বলে সূত্রটির দাবি।
অর্থাৎ, আপৎকালে দিশাহীন হয়ে পড়েছিলেন চিকিৎসকই। অথচ বিমানবন্দর সূত্রের খবর, পুরনো টার্মিনালে (যেখানে এখন কোনও বিমান ওঠা-নামা করে না) অবস্থিত আগের মেডিক্যাল ইউনিটে এখনও প্রতি দিন নিয়ম করে বসছেন এক ডাক্তার ও জনা পাঁচেক সহকারী, বহু দিন ধরে বিমানবন্দরে ডিউটি করার সুবাদে পুরো তল্লাট যাঁদের নখদর্পণে। প্রশ্ন উঠেছে, বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মীরা বিমানবন্দর-চত্বর ভাল ভাবে চিনে ওঠার আগে পুরনোদের কেন নতুন টার্মিনালে রাখা হচ্ছে না? “শনিবার তেমন এক সহকারী সঙ্গে থাকলে ডাক্তার তো পাঁচ মিনিটে ঠিক জায়গায় পৌঁছে যেতেন,” আক্ষেপ এক সূত্রের।
এর প্রেক্ষিতে স্বভাবতই কর্তৃপক্ষের গাফিলতির পাশাপাশি পরিকল্পনার অভাবের দিকে আঙুল উঠছে। আর এ সব নিয়েই কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা তলব করেছে ডিজিসিএ। প্রসঙ্গত, কলকাতা ও চেন্নাই দুই শহরের নতুন টার্মিনাল একই সময়ে চালু হয়েছে। এবং দু’জায়গাতেই নয়া টার্মিনাল পরিচালনার ভার বেসরকারি হাতে না-দিয়ে নিজেদের হাতে রেখেছেন বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ। কলকাতার শনিবারের ঘটনা থেকে চেন্নাইও যাতে শিক্ষা নেয়, সেটাও নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিজিসিএ-র এক আধিকারিক। |