|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
ভাষা চরিত্রসম্ভব হয়ে ওঠে |
আশিস পাঠক |
সেই ঐতিহাসিক রাতে পারিজাতের পেট্রলে চলা খাজা মোপেড যদি কোনও স্পেশাল ম্যাজিক ট্রিকে এ-রাস্তা ও-রাস্তা দিয়ে, নানা টাইপের খাত্রা পার হয়ে, অকুপায়েড বাগদাদে পৌঁছে যেতে পারত তা হলে, কোনও সন্দেহই নেই যে, জব্বর একটা জমকালো ঘটনা ঘটত। এই ম্যাজিকটির পেছনে একটি নির্ভুল লজিকও আছে। বুশ পেট্রল চায় বলে সে বাগদাদে গেছে। বেবি কে. পেট্রল খায় বলে সে তো বাগদাদে যেতেই পারে।’’
বাংলা সাহিত্যে ফ্যাতাড়ুদের মহাচমকপ্রদ আবির্ভাবের ঠিক এক দশক পরে নবারুণ ভট্টাচার্য জন্ম দিলেন দুই নতুন বিস্ময়কর চরিত্রের, বেবি কে. ও পারিজাত। তাদের ধাত্রী বইটির নাম বেবি কে পারিজাত (সপ্তর্ষি প্রকাশন, ১০০.০০) এবং তার যে অংশ থেকে উপরের উদ্ধৃতিটি, তার নামটি বড় তাৎপর্যপূর্ণ, ‘সব খেল-ই খতম হয়’।
সব খেল-ই যে খতম হয়, সুমহান এবং সুপ্রাচীন বাংলা সাহিত্যের ধারা এই সারসত্যটি প্রায়শ বিস্মৃত হয়। নাগরিক হৃদয়ের বিবর্ণ জটিলতার যে খেল সাম্প্রতিক বাংলা আখ্যানের ভুবনটিকে ক্রমাগত একঘেয়ে করে তুলছে তার খতম হওয়ার সময় সত্যিই এসেছে। দশ বছর আগে কাঙাল মালসাট উপন্যাসে নবারুণের কলমে কবিবর পুরন্দর, ডি এস, মদন, চোক্তার ভদি, বেচামণি, বড়িলাল, বেগম জনসন, কমরেড আচার্য এবং বৃহৎ দণ্ডবায়সের বিস্ফোরক মিছিল সেই একঘেয়ে, একপেশে বাংলা সাহিত্যের ঝুঁটি ধরে নাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আম বাঙালি চিরকালই লেটে বোঝে এবং বই বই (অর্থাৎ সিনেমা) না হলে ফিরেও তাকায় না, সুতরাং অধুনা সেই মালসাট মাধ্যমে বহুচর্চিত।
আর সেই সময়েই ওই চরিত্রগুলির খেল একপ্রকার খতম করলেন নবারুণ। কথাসাহিত্যে (নিন্দুকেরা বলেন কুকথাসাহিত্য) তাঁর সৃষ্ট যে ধারাটি মহাকালের ফলস দাঁত পরা মুখগহ্বরের দিকে ধাবিত হচ্ছিল তা থেকে, তাঁরই ভাষায়, কিছুটা যেন অন্য গলতায় ডিউটি পড়ল।
না, পুরোপুরি ধারা-বদল করেননি নবারুণ। কিন্তু ভাষারীতিটি, তার সমস্ত খিল্লি এবং মাঝে মাঝে চকিত মহাকাব্যিক দীপ্তি নিয়ে অক্ষুণ্ণ রইল। ভাষা ব্যবহারের এই নতুন প্রক্রিয়া নিতান্ত ব্যর্থ চমক হয়ে থাকত যদি না এই ভাষা সদর্থে চরিত্রসম্ভব হয়ে উঠত।
চরিত্র বলতে কেবল ফ্যাতাড়ুরা নয়, উপন্যাসেরই মৌলিক চরিত্র। সেই মৌলিক মেজাজটি, বার বার মনে হয়, কোনও ভাবেই অন্যতর কোনও ভাষারীতিতে প্রকাশযোগ্য ছিল না। ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচাক ও অন্যান্য থেকে বেবি কে পারিজাত পর্যন্ত নবারুণের কথাযাত্রার এই ভাষারীতি ইতিমধ্যে বিবিধ উত্তম প্রকাশমাধ্যমে অনুকৃত হয়েছে কিন্তু তাতে বারংবার প্রমাণিত হয়েছে নবারুণের কব্জির জোরই। একুশ শতকের বাংলা উপন্যাসের ভাষায় যে জোরটি প্রায়শ দুর্লক্ষ্য। |
|
|
|
|
|