পুস্তক পরিচয় ২...
তাঁর কলম চালু গদ্যে কথা বলে না
সুদীর্ঘ আখ্যানের কথক দেবেশ রায় এ বারে আখ্যায়িকা লিখেছেন: সিনেমার মত খুনোখুনি (এবং মুশায়েরা, ১৫০.০০)। দু’টি ভাগ এটির ‘হাফটাইম পর্যন্ত’ এবং ‘হাফটাইমের পর’। অন্যান্য আখ্যানে যে ভাবে ব্যক্তির ভিতর দিয়ে তিনি সময়-সমাজ-ইতিহাস আবিষ্কার করেন, এ আখ্যায়িকাও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু দস্তুর মতো গড়নে নতুন। গোয়েন্দা গল্পের ধাঁচ থেকে সিনেমার দৃশ্য এর আঙ্গিক হয়ে ওঠে। আর যে ডকুমেন্টেশন তাঁর লেখনীর বড় শক্তি তা দিয়েই শুরু হয় এই আখ্যায়িকা: ‘কলকাতার যে-কোনো পুরনো পেছিয়ে-থাকা জায়গা হতে পারে। পেছিয়ে-থাকা মানে বড়লোকরা সেখানে থাকত না আর যারা একটু সুযোগ পেত তারা আর সেখানে থাকত না। আবার কারো-কারো শিকড়ও গজিয়েছে বড়সড় বাড়ি বানিয়ে, আত্মীয়স্বজনদেরও এনে বেশ একটা গ্রাম পত্তন করে নিয়েছিল মহাযুদ্ধগুলির মাঝামাঝি। যেমন কালীঘাটের আদিগঙ্গার পাশে, কুদঘাটের আদিগঙ্গার ওপারে পূর্ব পুঁটিয়ারি, বরানগরের কুঠিঘাটা, বেলেঘাটা মেইন রোডের দক্ষিণ দিকটা, পাথুরেঘাটার গঙ্গার পারের দিকটা।’
ঢাকানিবাসী লেখক জাকির তালুকদারের উপন্যাস কুরসিনামা (ছোঁয়া, ১৫০.০০), প্রকাশকের কথায়, ‘প্যারালাল টেক্সট-এর প্রকরণে নির্মিত’। সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতকের কবি শুকুর মাহমুদের ‘গুপিচন্দ্রের সন্ন্যাস’-এর ছায়া অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে এর উপাখ্যান পর্ব, আর মূল আখ্যানপর্বে রয়েছে বাংলাদেশে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরেই জন্ম-নেওয়া পিতৃপরিচয়হীন এক শিশুর প্রতিকূল সমাজে মনস্তাত্ত্বিক ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যে বেড়ে ওঠা। গুপিচন্দ্রের পিতৃপরিচয় জানার আকুলতার সঙ্গে মিশে যায় একাত্তরের সেই যুদ্ধশিশুর আকুলতা ও দীর্ঘশ্বাস।
শুরুতেই লিখেছেন কণা বসু মিশ্র, ‘মাত্র পঞ্চাশটি গল্প নিয়ে এই বইটি। আরো অসংখ্য গল্প রয়েছে। কোনটি প্রিয় কোনটি অপ্রিয় জানি না। তবু তার ভেতর থেকেই কিছু...।’ তাঁর এই স্বনির্বাচিত পঞ্চাশটি গল্প-এ (পুনশ্চ, ৩২৫.০০) মেয়েদের আত্মমর্যাদার অধিকার, অভিমানী মেয়েদের চার দেওয়ালেবন্দি জীবনবৃত্তের মধ্যে প্রেম, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের জন্যে তাদের তীব্র লড়াই বা জেহাদ ঘোষণা, সব মিলিয়ে মেয়েদের নিজস্ব স্বর। গল্পের চরিত্র বা মুখগুলি দেশকালের সীমা ছাড়িয়ে নাগরিক, আবার সব মুখই যে নগরকেন্দ্রিক তা নয়, গ্রামবাংলার মানুষের মুখ, বা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বাইপাসের মানুষজনও।
চর্চাপদ থেকে বেরিয়েছে অরূপরতন বসুর অন্তরীপ ও অন্যান্য (সম্পা: অর্ণব সাহা, ১৭০.০০)। ‘ভিন্ন অভিমুখ থেকেই গদ্যসাহিত্যের এক সম্পূর্ণ পৃথক ঘরানার দিকে যাত্রা করেন অরূপরতন। হাতে-গোনা কয়েকটি উপন্যাস ও ছোটোগল্প, ছড়ানো-ছেটানো কিছু প্রবন্ধ জাতীয় রচনা ও অন্যান্য রচনায় ছড়িয়ে থাকে সেই অভিযাত্রার চিহ্ন। তেমনই কয়েকটি লেখার সংকলন এই বই।’ সম্পাদকের অভিমত। স্থির পরিণতির দিকে এগোয় এমন আদি-মধ্য-অন্তের গদ্যকে নিত্য ভেঙে ফেলতেন অরূপরতন, তাঁর গদ্যের ভাঙচুর বিষয়ের অন্তর্লীনকে টেনে বের করে আনে, বাস্তবতার গহন থেকে আনে অন্য কোনও মায়া-বাস্তব। যেমন তাঁর ‘প্রথম নৈঃশব্দ্য’: ‘চারিদিকে বই-এর গাদা, ছাপার কালি আর পুরোনো ভিজেকাঠের গন্ধ। ট্রামের শব্দ। বাইরে গ্রীষ্মের মেঘ, জানালা দিয়ে দেখা যায়, দিগন্তের কাছে মোটা কালো একটি পেন্সিলের রেখার মতো সোজা চলে গেছে। ল্যাম্পপোস্টের মাথায় কাক ও চড়ুই খড়কুটো জড়ো করেছে, তার ভিতর আলো ও অন্ধকারের একটি বুনুনি একবার জ্বলে উঠে ফের নিভে যায়।’
পূর্ণিমার জ্যোৎস্নার অপচ্ছায়া নিয়ে আমাদের পরিবারের মধ্যে তর্কের প্রচলন ছিল। এমন বাক্য দিয়ে শুরু হয় পীযূষ ভট্টাচার্যের ‘জ্যোৎস্নার অপচ্ছায়া’ গল্পটি। সূচনাতেই চেনা যায় তাঁর কলম চালু গদ্যে কথা বলে না। তাঁর সাম্প্রতিক গল্পগ্রন্থ, কৃষ্ণবর্ণ ষাঁড়ের পিঠে-র (চর্চাপদ, ১৮০.০০) পিছনের প্রচ্ছদে জানানো হয়েছে ‘তাঁর গল্পের তল একইরকম ভূমিতে অবস্থিত নয়। ভীষণ এবড়োখেবড়ো, আবার শ্যাওলা পিছল, কোথাও-বা কবিতার মতো।’ নাম-গল্পটির প্রথম বাক্যটিই তো কবিতার মতো: ‘এতদিন ধরে ঘটনাটিকে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে পেঁচিয়ে রেখেছিল একই প্রজাতির এক প্রকারের লতানো গাছ যেভাবে কোনো পরিত্যক্ত স্মৃতিসৌধকে ঘিরে রাখে।’


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.