পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আসছে। বসিরহাট মহকুমা জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে দলবদলের পালা। সেই দলবদলে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের দিকেই পাল্লা ভারী। সিপিএম এবং কংগ্রেস ছেড়ে ইতিমধ্যেই বহু নেতা-কর্মী যোগ দিয়েছেন শাসক দলে। এতে রীতিমতো চিন্তায় বিরোধী দু’টি দলের নেতারা।
সম্প্রতি বসিরহাট এবং স্বরূপনগরে দু’টি জনসভায় এসে তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সাধারণ মানুষ ও বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদেরও তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “গরিব মানুষের উন্নয়ন চাইলে পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রার্থী হতে হবে। সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপির হয়ে যাঁরা পঞ্চায়েতে প্রার্থী হতে চাইছেন, তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও বলতে হবে, গ্রামের মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে তৃণমূলে আসুন। সকলকেই সাদরে গ্রহণ করা হবে।”
মন্ত্রীর উপস্থিতিতে স্বরূপনগরের কংগ্রেসের বেশ কিছু নেতা-কর্মী তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁদের মধ্যে আছেন স্বরূপনগর জেলা পরিষদের সদস্য আবদুল ওহাব মণ্ডল, পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মমতাজউদ্দিন আহমেদ, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ধীমান সিকদার, গোবিন্দপুর পঞ্চায়েতের সদস্য মোশারফ মণ্ডল, মোস্তাফা মণ্ডল, সুমিত্রা সরকার, শহিদুল গাজি, যুব কংগ্রেস নেতা নুরুল ইসলাম, গোলাম কিবরিয়া-সহ বেশ কয়েক জন। প্রতিশ্রুতি পূরণে খাদ্যমন্ত্রী নিজে আবদুল ওহাব মণ্ডলকে তত্ক্ষণাত্ ব্লকের নির্বাচন কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। বসিরহাটের সংগ্রামপুর, ইটিন্ডা এবং মাটিয়া বাজার এলাকা থেকে সিপিএম ও কংগ্রেসের প্রায় ৩ হাজার নেতা-কর্মী তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সেলের রাজ্য আহ্বায়ক নারায়ণ গোস্বামীর দাবি, “উন্নয়নের জন্য পঞ্চায়েত ভোটে মানুষ তৃণমূলের সঙ্গী হচ্ছেন।”
জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মতো সরাসরি তাদের দলে আসার আহ্বান না জানালেও সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতারা সভা-সমাবেশে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরছেন শাসক দলের ‘অনুন্নয়ন’। সম্প্রতি বসিরহাটের ইটিন্ডা এবং হাসনাবাদের তালপুকুরে দু’টি জনসভায় কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সির সামনেই কংগ্রেসে যোগ দেন হাসনাবাদ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য মালেকা মণ্ডল, সিপিএম সদস্য রাজউল্লা গাজি, তৃণমূল নেতা রবীন মণ্ডল এবং পিয়ার আলি। তাঁদের সঙ্গেই কংগ্রেসে যোগ দেন কয়েকশো দলীয় কর্মী-সমর্থক।
দিন কয়েক আগে হাড়োয়ায় এক জনসভায় সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিতাভ নন্দীর সামনে স্থানীয় সোনাপুকুর-শঙ্করপুর পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান মোজাম্মেল মোল্লা-সহ প্রায় দু’শো জন সিপিএমে যোগ দেন। সিপিএম নেতা ভুবন মণ্ডল বলেন, “কয়েক মাস আগেও ওরা আমাদের সঙ্গে ছিল। খারাপ অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরল। তৃণমূল দলটায় যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে এবং যে ভাবে দুর্নীতি ও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া শুরু হয়েছে, তাতে ওদের সঙ্গে থাকাটাই দায় হয়ে পড়েছে বলে অনেকেই পুরনো ঠিকানায় ফিরছেন।”মহকুমায় ২২টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে ১২টি সিপিএমের, ছ’টি তৃণমূল এবং চারটি কংগ্রেসের দখলে রয়েছে। ১০টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে সাতটি তৃণমূলের এবং তিনটি কংগ্রেসের দখলে রয়েছে। ৯০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে অধিকাংশই তৃণমূলের। এ বার দেখার, নেতা-কর্মীদের দলবদলের পরে পঞ্চায়েত ভোটে সেই সমীকরণের কতটা অদল-বদল হয়। |