|
|
|
|
ইন্দিরা আবাসের টাকা পড়েই জেলায় |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
প্রকল্পের নাম ‘ইন্দিরা আবাস যোজনা’। বিপিএল তালিকায় নাম থাকা গরিব মানুষদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রকল্প এটি। প্রকল্প ব্যয় ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা।
প্রকল্পের নাম ‘অধিকার’। বিপিএল তালিকায় নাম থাকতে হবে এমন নয়। গরিব হলেই হল। এই প্রকল্পে উপভোক্তাদের তালিকা তৈরির জন্য বিধায়কদের চিন্তাভাবনাই শেষ কথা। এক্ষেত্রেও প্রকল্প ব্যয় ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা। দু’টি ক্ষেত্রে প্রকল্প ব্যয় একই হলেও ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির ব্যাপারে কারও কোনও উদ্যোগ নেই। টাকা এসে পড়ে রয়েছে ২০১১-১২ আর্থিক বছর থেকে। টাকা খরচ করতে না পারায় ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে বরাদ্দ পর্যন্ত মেলেনি। ফলে তালিকায় নাম থাকা তিন লক্ষাধিক মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ, অধিকার প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য হুড়োহুড়ি। এর কারণ খুঁজতে গেলে উঠে আসছে সেই ‘পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি’। ‘অধিকার’ প্রকল্পে যেহেতু বিধায়কেরা খুশি মতো উপভোক্তা চিহ্নিত করতে পারেন, তাই ‘পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতিতে’ সুবিধা হয় বেশি। তৃণমূলের এই ‘পাইয়ে’ দেওয়ার রাজনীতি মানতে না পেরে দলের যুব নেতা তন্ময় রায় সদ্য ইস্তফা দিয়েছেন। তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যতই শোরগোল পড়ুক না কেন, অধিকার প্রকল্পের ‘অসঙ্গত’ শর্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছে না কেউ।
সরকারি সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, পশ্চিম মেদিনীপুরে যাঁদের একেবারেই মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই তাঁদের সংখ্যা লক্ষাধিক। |
প্রকল্পের হাল-হকিকৎ |
কে পাবে |
বিপিএল তালিকাভুক্ত দরিদ্র পরিবার |
কত বরাদ্দ |
দু’দফায় ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা |
জেলায় বাড়িই নেই |
৩৬ হাজার ৬৫৮টি পরিবারের |
২০১১-১২ |
মিলেছিল প্রায় ২৭ কোটি টাকা |
খরচ হয়েছে |
মাত্র ৭ কোটি টাকা |
২০১২-১৩ |
খরচ না-হওয়ায় বরাদ্দ ফিরে গিয়েছে |
|
যাঁদের মাথা গোঁজার ঠাঁই রয়েছে কিন্তু তা উপযুক্ত নয় (অর্থাৎ একটি ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে অনেকে থাকেন বা ছিটেবেড়ার ঘর, যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে) এমন পরিবারের সংখ্যা ছিল ২ লক্ষ ৭৯ হাজার ৬৬৬টি। পরিসংখ্যান বলছে, মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই এমন ৩৬ হাজার ৬৫৮টি পরিবারের বাড়ি তৈরি করা যায়নি এখনও। ২০১১-১২ আর্থিক বছরে ২২ হাজার বাড়ি তৈরির বরাদ্দ মিলেছিল। প্রথম ধাপে বরাদ্দের অর্ধেক অর্থাৎ প্রায় ২৭ কোটি টাকাও পেয়েছিল প্রশাসন। যার মধ্যে এখনও ২০ কোটি টাকা খরচ করতে পারেনি। তাই ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে আরও ১৪ হাজার ৬৩৭টি পরিবারের বাড়ি তৈরির পরিকলল্পনা করলেও আগের আর্থিক বছরের অর্থ খরচ না করতে পারায় বরাদ্দ মেলেনি। কেন ওই টাকা খরচ করা যায়নি? জেলা পরিষদের সভাধিপতি সিপিএমের অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা তো ব্লকে ব্লকে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। ব্লকেই সেই টাকা পড়ে রয়েছে। শুনেছি তালিকা নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে প্রশাসনের বিতর্ক হওয়ায় টাকা খরচ করা যায়নি। ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন গরিব মানুষেরা।” জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের অরুণ মজুমদারও স্থানীয় পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক প্রশাসনের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এক একটি ব্লকে এই প্রকল্পে ২০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। জঙ্গলমহলের ব্লকগুলিতেও একই অবস্থা। কারণ, মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই এমন ৩৬ হাজার ৬৫৮টি পরিবারের মধ্যে জঙ্গলমহলের ১১টি ব্লকে রয়েছে ১১ হাজার ৩১৬টি পরিবার। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে যে ২ লক্ষ ৭৯ হাজার ৬৬টি বাড়ি তৈরি করা যায়নি, তার মধ্যে জঙ্গলমহলের ১১টি ব্লকে রয়েছে ৮৭ হাজার ২৬৬ জন উপভোক্তা। প্রকল্পের কাজ এগোচ্ছে না কেন?
বিডিওদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, সমীক্ষার সময় প্রতিটি পরিবারের পাশে নম্বর দেওয়া রয়েছে। যিনি সব থেকে কম নম্বর পেয়েছেন, তাঁকেই আগে বাড়ি দিতে হবে। এই ভাবেই এগোতে হবে নিয়ম। এক বিডিও-র কথায়, “বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তা মানতে নারাজ। তাঁদের মনে হয়েছে, ওই তালিকা বানিয়েছে সিপিএম। তাই তালিকায় পেছনে রয়েছে এমন উপভোক্তাদের নাম নিয়ে এসে বলছেন, আগে বাড়ি তৈরি করে দিতে হবে। কিন্তু তালিকায় নাম থাকলেই যে হবে না, নম্বর দেখে কে আগে পাবেন কে পরে পাবেন তা নির্দিষ্ট করা রয়েছেতা তাঁরা মানছেন না। ফলে পুরো প্রকল্পই আটকে যাচ্ছে।”
জেলায় ইন্দিরা আবাস যোজনার ক্ষেত্রে ২২ হাজার উপভোক্তার টাকা পড়ে রয়েছে। আর অধিকার প্রকল্পে মাত্র ৩৩০০ জনের বরাদ্দ এসেছে। সভাধিপতির কটাক্ষ, “অধিকার প্রকল্প নিয়ে মাতামাতি না করে ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়িগুলি তৈরি করে দিলে প্রকৃত গরিব মানুষের উপকার হত। তাহলে আর জনদরদী ও জঙ্গলমহলপ্রেমী মুখ্যমন্ত্রীকে লোকহীন সভায় উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করতে হত না।” |
|
|
|
|
|