নন্দীগ্রামে দলীয় পর্যবেক্ষক নিয়োগ তৃণমূলের
প্রার্থী বাছাই নিয়ে অশান্তির আশঙ্কা
তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ক্রমশই বাড়ছে নন্দীগ্রামে। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থী বাছাই নিয়ে দলের অন্দরের ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামাল দিতে নন্দীগ্রামের প্রতিটি অঞ্চলে দলীয় ভাবে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ইতিমধ্যে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় অন্য এলাকার নেতাকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। প্রার্থী বাছাই নিয়ে স্থানীয় ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামাল দেওয়ার পাশাপাশি এলাকার স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে দলীয় পর্যবেক্ষকরা নিয়মিত বৈঠক করছেন। বিষয়টি মেনে নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক মামুদ হোসেন বলেন, ‘‘দলীয় প্রার্থী বাছাই-সহ গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সাহায্য করার জন্যই দলীয় ভাবে ব্লক নেতৃত্বকে বিভিন্ন এলাকার দ্বায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে।”
নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের পরে ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল জোট। নন্দীগ্রামের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সবক’টিতে ও নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। সিপিএমের বেশ কিছু সক্রিয় নেতা-কর্মী এলাকা ছেড়ে যান। ফলে নন্দীগ্রামে রাজনৈতিক ভাবে প্রায় একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করে তৃণমূল। কিন্তু গত প্রায় ৫ বছরে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির কাজ নিয়ে দলের অন্দরেই কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে বার বার।
দুর্নীতি, স্বজনপোষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে নন্দীগ্রামে প্রথম গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে আসে গোকুলনগর গ্রাম পঞ্চায়েতে। যার জেরে পদত্যাগ করেন পঞ্চায়েত প্রধান জহরলাল কর। এরপর ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হন তৃণমূলেরই অশোক মণ্ডল। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে মামলা করেন দলের একটি গোষ্ঠীর লোকজন। প্রশাসনিক তদন্তের পর তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গোকুলনগর ছাড়াও সামসাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তৃণমূলের কোন্দল একাধিকবার প্রকাশ্যে এসেছে। আবু তাহের ও শেখ সুফিয়ান গোষ্ঠীর লোকজনদের মধ্যে প্রকাশ্যেই মারপিট হয়েছে বেশ কয়েকবার।
পঞ্চায়েতের কাজে দুর্নীতির অভিযোগে বিরোধীদের আন্দোলন না থাকলেও দলের অন্দরে কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভ নিয়ে উদ্বিগ্ন নেতৃত্ব। প্রার্থী বাছাই নিয়ে তাই আগাম সতর্কতা নিয়েছেন তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী। চণ্ডীপুরে প্রকাশ্য সভায় তিনি ঘোষণা করেছিলেন বুথ স্তরে আলোচনা করে সর্বসম্মত প্রার্থী বাছাই করতে হবে। সেই মতো ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে। সম্প্রতি নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের দলীয় সভাপতি মেঘনাদ পালের নেতৃত্বে ১৩ জনের ব্লক নির্বাচন কমিটি গঠন হয়েছে। এ ছাড়া ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রতিটির জন্য অঞ্চল নির্বাচন কমিটি গড়া হয়েছে। সেই কমিটি’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত এলাকার বাইরের একজন দলীয় নেতাকে পর্যবেক্ষক হিসেবে রাখা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনাচূড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে দলীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে রাখা হয়েছে বিধায়ক ফিরোজা বিবিকে। এ ছাড়া কালীচরণপুরে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধক্ষ্য শেখ সুফিয়ান, ভেকুটিয়ায় পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আবু তাহের, কেন্দেমারিতে জেলা পরিষদ সদস্য পীযূষ ভূঁইয়া, মহম্মদপুরে পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধক্ষ্য স্বদেশ দাস, নন্দীগ্রামে প্রদ্যোত কামিল্যা, গোকুলনগরে প্রণব মহাপাত্র, সামসাবাদে সরোজ ভুঁইয়া, হরিপুরে সুদীপ খাঁড়া ও দাউদপুরে সোয়েম কাজিকে পর্যবেক্ষক হিসেবে রাখা হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে পর্যবেক্ষকরা নিজেদের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় গিয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে। বৈঠকে পর্যবেক্ষকদের স্থানীয় নেতৃত্বের কার্যকলাপ, পঞ্চায়েতের কাজকর্ম নিয়ে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি এলাকার রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানীয় জলের সমস্যা এমনকী চাকরি না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন দলীয় কর্মীরা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.