|
|
|
|
চাহিদা-জোগানের ফারাক, তীব্র বিদ্যুৎ সঙ্কট ত্রিপুরায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আগরতলা |
ত্রিপুরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মক ভাবে কমে গিয়েছে। অন্য দিকে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে দ্রুত হারে। জোগান এবং চাহিদার এই বৈষম্যের ফলে রাজ্যে তীব্র বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মানিক দে।
বিদ্যুৎমন্ত্রীর কথায়, প্রয়োজনে রাজ্যের বাইরে থেকে বিদ্যুৎ কিনতে চাইলেও পাওয়া যাচ্ছে না। রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমকে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে এক ঘণ্টার জায়গায় দু’ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এই ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আশু কোনও সমাধান সূত্রও রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের হাতে নেই। রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের কর্তা নীলাদ্রি শেখর চক্রবর্তীকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিকদের সামনে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন বিদ্যুৎমন্ত্রী। গ্রীষ্মের তাপমাত্রা বাড়লে বিদ্যুতের চাহিদা আরও বাড়বে। বাড়বে লোডশেডিং-এর পরিমাণও। সে ইঙ্গিতও ছিল বিদ্যুৎ নিগমের কর্তার কথায়। ‘বিদ্যুৎ অপচয় বন্ধ’ করার জন্য গ্রাহকদের অনুরোধ করেছে বিদ্যুৎ নিগম। গ্রাহকদের ‘মিতব্যয়ী’ হওয়ার জন্যও তিনি অনুরোধ করেন।
এ দিকে, বৃষ্টির অভাবে রাজ্যের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির উৎপাদন ঠেকেছে তলানিতে। জলের অভাবে ডম্বুর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্বভাবতই বিদ্যুৎ নিগমকে এখন নির্ভর করতে হচ্ছে রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির উপর। গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে হয়েছে ২২০ মেগাওয়াট। এক-দেড় মাস আগে চাহিদা ছিল ১৯০-২০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎমন্ত্রী জানান, রাজ্যের উৎপাদন এখন গড়ে ৯০ থেকে ৯৫ মেগাওয়াট। চাহিদা অনুযায়ী ঘাটতি ১২০ থেকে ১৩০ মেগাওয়াট। ঘাটতি পূরণের জন্য, বেশি দাম দিয়েও ত্রিপুরাকে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। ৪০ থেকে ৬০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ চাইলেও বাইরে থেকে কেনা যাচ্ছে না। বর্তমানে রাজ্যে ঘাটতির পরিমাণ ৭০ থেকে ৯০ মেগাওয়াট। ভয়াবহ বিদ্যুৎ ঘাটতি থেকে মুক্তি পেতে রাজ্যের বিদ্যুৎ নিগমকে তাই লোডশেডিং-এর পরিমাণ বাড়ানোর পথেই হাঁটতে হয়েছে। এক ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে কোনও কোনও সময়ে তা দ্বিগুণ সময়ের জন্য করতে হচ্ছে। মানিকবাবু বলেন, ‘‘জরুরি ক্ষেত্র ছাড়া ত্রিপুরার গ্রাম-শহর সর্বত্র দেড় থেকে দু’ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ম করে বন্ধ রাখা হচ্ছে।’’ যদিও বাস্তবে তার থেকে বেশি পরিমাণে লোডশেডিং হচ্ছে সারা রাজ্যে। এই পরিস্থিতি আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণ পাল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এই আশার বাণীও বিদ্যুৎমন্ত্রী এ দিন শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, “পালাটানা গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং মনারচক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। এই দু’টি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়ে গেলে রাজ্যে ঘাটতি তো থাকবেই না, বরং উদ্বৃত্ত হবে। আজ সরকারি ছুটির দিন হলেও মন্ত্রীকে আশ্বস্ত করার জন্য পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মনারচক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার সমর বিশ্বাস ছুটে এসেছেন সচিবালয়ে। মন্ত্রীর উপস্থিতিতেই তাঁরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী জুন-জুলাইয়ে উৎপাদন শুরু হবে পালাটানা বিদ্যুৎ প্রকল্পে। আর মনারচক উৎপাদন শুরু করবে অগস্ট-সেপ্টেম্বর নাগাদ। |
|
|
|
|
|