ধৃতদের ৮ জনই নাবালক, মন্ত্রীর আত্মীয় ২
ভিটে-স্কুল হারিয়েও
লড়ছে মেঘালয়ের নির্ভয়া
রাতের অন্ধকারে ১৬ বছরের মেয়েটিকে একে একে ১৭ জন মিলে ধর্ষণ করেছিল। পথের পাশেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিল সে। হাসপাতালে চিকিৎসার পরে শরীর সুস্থ হলেও, ‘অসুস্থ’ সমাজের অমানবিক ব্যবহার তাঁকে স্বাভাবিক জীবন থেকে আরও দূরে ঠেলে দিচ্ছে। পড়শিদের আপত্তিতে ইতিমধ্যেই ছাড়তে হয়েছে পাড়া। পড়াও ছাড়ার উপক্রম হয়েছিল কোনও স্কুল ভর্তি নিতে না চাওয়ায়।
মেঘালয়ে পূর্ব গারো হিল জেলার উইলিয়ামনগরে গত ১৩ ডিসেম্বর ঘটেছিল ওই গণধর্ষণ। দেশ জুড়ে শোরগোল হয়নি এ নিয়ে। দিল্লি কাণ্ডের জেরে, কেন্দ্রীয় সরকার নির্ভয়া নামে একটি প্রকল্প চালুর কথা ঘোষণা করেছে বাজেটে। কিন্তু নিজের রাজ্যের মেয়েটির কথাই মনে রাখেনি মাতৃতান্ত্রিক মেঘালয়। ওই গণধর্ষণের ঘটনা কোনও ছাপ ফেলেনি পরের নির্বাচনে। যে নির্বাচনে প্রথম বার চার জন মহিলা বিধায়ক, তিন মহিলা মন্ত্রী, প্রথম মহিলা উপমুখ্যমন্ত্রী পেয়েছে রাজ্য। রাজ্যের প্রথম প্রধান বিচারপতিও হয়েছেন এক মহিলা। এহেন মেঘালয়ে আর এক নির্ভয়া সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে চেয়ে ক্রমশই কোণঠাসা হচ্ছে। সে ভাবে পাশে পাচ্ছে না সমাজ বা সরকারকে।
স্থানীয় উৎসব দেখে রাতে বাড়ি ফিরছিল নবম শ্রেণির ওই ছাত্রী। পথে একা পেয়ে মাথায় পাথর ছুড়ে বেহুঁশ করে দেয় দুষ্কৃতীরা। এর পর, অজ্ঞান অবস্থায় এবং হুঁশ ফেরার পরেও মেয়েটিকে ১৭ জন মিলে ধর্ষণ করে। সঙ্গে চলে মারধর। পর দিন পথের ধারে পড়ে থাকা রক্তাক্ত মেয়েটিকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেন গ্রামবাসীরা। দিল্লিতে নির্ভয়ার লড়াই থেমে গিয়েছিল ১৩ দিনে। শুরু হয়েছিল তরুণ প্রজন্মের অন্য এক লড়াই। মেঘালয়ের মেয়েটি মৃত্যুর সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে বেঁচে ফিরেছে। কিন্তু এ বার তার লড়াই শুরু হয়েছে, বিকৃতকাম এক দল তরুণের বিরুদ্ধে। তার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার হয়েছে ১৭ জনই। এদের মধ্যে ৮ জন নাবালক। দু’জন মন্ত্রীর আত্মীয় এবং এক জন আত্মসমর্পণ করা জঙ্গি নেতা। তাই, দোষীদের সকলের শাস্তি হবে, সেই ভরসা করতে পারছে না মেয়েটির পরিবার।
বাড়ি ফেরার পর থেকে মেয়েটি ও তার পরিবারকে দু’দিক থেকে চাপে ফেলা হয়। এক তো পাড়ার লোক গণধর্ষিতা মেয়েকে প্রতিবেশী হিসাবে মেনে নিতে তৈরি ছিলেন না, তার উপর ধৃতদের তরফে হুমকি আসতে থাকে মামলা তুলে নেওয়া ও সাক্ষ্য বদলের জন্য। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিভিল সোসাইটি ওমেন্স অরগানাইজেশনের সাহায্য নিয়ে ধর্ষিতার পরিবার বাস উঠিয়ে অন্যত্র চলে আসতে বাধ্য হন।
সংস্থাটির সভাপতি অ্যাগনেস বললেন, “আমাদের সমাজ নামেই মাতৃতান্ত্রিক। মেয়েরা এখানে প্রতি দিন নানা ভাবে অত্যাচারিতা হন। শিশুকন্যার উপরে যৌন নির্যাতনের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে ধর্ষণ। কিন্তু, বাকি দেশ এ সবে আমলই দেয় না। রাজ্যও মেয়েদের নিরাপত্তা রক্ষায় তৎপর নয়।” তিনিও জানান, এক অভিযুক্তের হয়ে এক মন্ত্রীর পরিবার থেকে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি আসছিল। পুলিশ মেয়েটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেয়নি। মেয়েটি বাড়ি থেকে বেরোলে পড়শি যুবকরা তাঁর ছবি তুলত, কুপ্রস্তাব দিত। এই অবস্থায়, মেয়েটি ও তার পরিবারকে মহিলা সংগঠনের সদস্যরা অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নিতে বাধ্য হন।
ধর্ষণের জেরে একটি শিক্ষাবর্ষ নষ্ট হওয়ার পরে, ফের মেয়েটি স্কুলে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু, আগের স্কুলে তার ঠাঁই হয়নি। নতুন জায়গাতেও একটি স্কুল, ‘এমন’ মেয়েকে ভর্তি করাতে রাজি না হওয়ায় ভেঙে পড়ে মেয়েটি। রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্য গামচি টিমরে আর মারাক জানান, মেয়েটিকে আপাতত তাঁদের আশ্রয়ে, একটি হোস্টেলে রাখা হয়েছে। অন্য একটি স্কুলে তার ভর্তির ব্যবস্থাও হয়েছে। কিন্তু, মহিলা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলির বক্তব্য এই ভাবে ছাত্রীজীবন কোনও মতে কাটালেও, পরে চাকরি জীবনে, পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়া মেয়েটিকে হেনস্থা থেকে কে বাঁচাবে? অ্যাগনেসদের ক্ষোভ, দিল্লিতে নিগৃহীত-নিহত মেয়েটির জন্য যে ভাবে গোটা দেশ সরব হয়েছিল, মেঘালয়ের মেয়েটির সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে তেমন ভাবে কেন পাশে পাওয়া যাচ্ছে না কাউকে? কোনও নেতা, অভিনেতা, বুদ্ধিজীবীর টুইটে মেয়েটির উল্লেখ নেই। জাতীয় সংবাদমাধ্যমও ঝাঁপায়নি উত্তরপূব প্রান্তের এই মেয়েটির জন্য। এই সব নিয়ে তীব্র ক্ষোভে এক মানবাধিকার কর্মী ছুড়ে দিলেন প্রশ্ন, “মেঘালয়ের মেয়ে কী তবে ভারতমাতার অংশ নয়?”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.