সমর্থন রেখেও মুলায়ম বলছেন, এ বছরই ভোট
ক’দিন আগেই ইউপিএ থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেছে ডিএমকে। এ বার কি মুলায়ম সিংহ যাদবের পালা? গত কাল এই প্রশ্নের মুখে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ জানিয়েছেন, সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে একই সঙ্গে তাঁর দাবি, সরকার তার মেয়াদ পূর্ণ করবে।
দু’টি প্রশ্নেই আজ উল্টো সুর মুলায়মের মুখে। আজ একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন এখনই সমর্থন প্রত্যাহার করছেন না তাঁরা। এমনকী সে কথা ভাবছেনও না আপাতত। কিন্তু সিবিআই-এর অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে এ দিনই কংগ্রেসকে এক দফা আক্রমণ করে মুলায়মের মন্তব্য, লোকসভার ভোট হবে এ বছরই। যার অর্থ এই সরকার পুরো মেয়াদ টিকবে না।
স্পষ্টতই কংগ্রেস ও ইউপিএ সরকারকে চাপে রাখার কৌশল নিয়ে চলছেন মুলায়ম। আপাতত সমর্থন না তুললেও যাতে সিবিআই তদন্তের নামে যাতে তাঁদের কোণঠাসা করার চেষ্টা না হয়, ভবিষ্যতে সুযোগ-সুবিধা আদায়ে দর কষাকষি করা যায়। এবং ক্রমাগত সমালোচনা চালিয়ে গিয়ে যাতে লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের থেকে দূরত্ব তৈরি করা যায়।
কেন্দ্রে সরকার টিকিয়ে রাখার স্বার্থে শরিক ও সমর্থকদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তাদের ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হচ্ছে কংগ্রেসকেও। কখনও বলতে হচ্ছে বিহারের জন্য প্যাকেজের কথা, কখনও আশ্বস্ত করতে হচ্ছে উত্তরপ্রদেশের দলগুলিকে। আজই লখনউয়ে এক অনুষ্ঠানে মুলায়ম-পুত্র অখিলেশ যাদবকে পাশে নিয়ে তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর টিম এবং নেতাজিকে (মুলায়ম) আশ্বস্ত করে বলছি, কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ জন্য দিল্লি থেকে সাহায্যের অভাব হবে না।” সমাজবাদী পার্টির তরফে সমর্থন প্রত্যাহারের সম্ভাবনা খারিজ করা হয় তার পরেই।
তবে লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব তৈরিরও রাজনৈতিক দায় রয়েছে মুলায়মদের। যে কারণে সরকারের পাশে থেকেও নিরন্তর কংগ্রেসের সমালোচনাও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। মুলায়ম আজও বলেছেন, “শরিকদের সঙ্গে কখনওই ভাল ব্যবহার করে না কংগ্রেস। বরং সিবিআইয়ের জুজু দেখিয়ে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করে সর্বক্ষণ। শুধু সপা-র সঙ্গে নয়, ডিএমকে নেতা করুণানিধির সঙ্গেও তা করেছে কংগ্রেস।”
অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব।
লখনউয়ের একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। শুক্রবার।
নিরন্তর আক্রমণ সমালোচনার মধ্যেও সরকার পুরো মেয়াদ টিকবে বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেতারা। দলের এক শীর্ষ নেতার বিশ্লেষণ এই রকম: আসলে বাম, বিএসপি বা ডিএমকে কেউই এই মুহূর্তে ভোট চায় না। ফলে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব এলে এরা যে সরকারকে পড়তে দেবে না, সেটা মুলায়মের কাছে স্পষ্ট। বিজেপি-ও ভোটের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। বিজেপি নেতৃত্বও জানেন, মুলায়ম যতই সুর চড়ান, সরকারের বিপদে ঠিক পাশে থাকবেন। তবে মুলায়মের তৃতীয় মোর্চার উদ্যোগ কপালে ভাঁজ ফেলছে বিজেপি-র। কারণ, কংগ্রেস-বিরোধিতার রাশ আর কারও হাতে যাক বা অন্য কেউ তাতে ভাগ বসাক, সেটা চায় না বিজেপি।
কর্নাটকে আসন্ন বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের কাছে পরাস্ত হওয়ার আশঙ্কায় বিজেপিও তড়িঘড়ি লোকসভা নির্বাচনের পক্ষপাতী নয়। বরং তারা চাইছে, নভেম্বরে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগড়ে বিধানসভা নির্বাচনে জিতে তার পর লোকসভা ভোটে যেতে। আর সেই কারণেই মুলায়মও বলছেন, নভেম্বরের পরেই লোকসভা ভোটের হাওয়া উঠবে। কংগ্রেসের ওই কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, “নভেম্বরে কী পরিস্থিতি হবে তখন দেখা যাবে। তাই স্থায়িত্বের প্রশ্নটি নিয়ে এখন থেকেই উদ্বেগের প্রহর কাটাতে চাইছে না কংগ্রেস।”
তবে কংগ্রেস নেতারা এ-ও বুঝতে পারছেন সরকার টিকে থাকলেও আগামী দিনগুলি মোটেই সহজ নয়। বরং তাঁদের আশঙ্কা, সংসদে খাদ্য নিরাপত্তা, লোকপাল, জমি বিল ও অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি পাশ করাতে এ বার তাঁদের যথেষ্টই বেগ পেতে হবে। কেন না বিজেপি তো বটেই মুলায়মও চাইবেন না যে এই সব বিল পাশ করিয়ে কংগ্রেস লোকসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক কৃতিত্ব নেওয়ার সুযোগ পাক। একই ভাবে বিরোধিতা আসতে পারে তৃণমূল-সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের থেকে। ঘরোয়া আলোচনায় এই প্রসঙ্গে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “এই অবস্থায় কিছুটা হলেও কংগ্রেসের লোকসভার ভোট-প্রস্তুতি মার খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যেমন উত্তরপ্রদেশে আইনশৃঙ্খলার যা অবনতি হচ্ছে তার নিরিখে এখনই সেখানে সপা-বিরোধী প্রচারে নামার প্রয়োজন ছিল। তা একটু একটু করে শুরুও করছিলেন রাজ্য নেতারা। কিন্তু চিদম্বরম আজ যে ভাবে অখিলেশের প্রশংসা করলেন তা সেই প্রচারকে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক করে দিল।”

ছবি: পিটিআই


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.