খোঁজ নেই অভিযুক্তদের
পকেটে প্রতারকের ভোটার কার্ড, মিলল মৃতের পরিচয়
রাস্তার পাশে পড়ে থাকা মৃতদেহের পকেটে মিলেছিল অন্য এক যুবকের ভোটার কার্ড। সপ্তাহ দুয়েক পরে পরিচয় মিলল মৃত যুবকের। পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবকের নাম অভিজিৎ দে (২৮)। বাড়ি হুগলির জিরাট এলাকায় পোস্ট অফিস পাড়ায়। তাঁকে খুনে অভিযুক্ত যুবক দয়ালদাস মজুমদার ও তার বাড়ির লোকজনের অবশ্য এখনও খোঁজ পায়নি পুলিশ।
গত ১৬ মার্চ পূর্বস্থলীর বিশ্বরম্ভা গ্রামে এসটিকেকে রোডের পাশ থেকে উদ্ধার হয় অভিজিতের দেহ। তখন তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশ জানায়, মুখে খানিকটা বিকৃতি ছাড়া দেহে আর কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। পকেট থেকে যে ভোটার কার্ড মেলে, তার ছবি ছিল অপরিষ্কার। সেখানে দয়ালদাস মজুমদারের নাম লেখা ছিল। ঠিকানা দেখে কাটোয়ার চরপাতাইহাটি গ্রামে দয়ালদাসের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না-তদন্ত চলাকালীন দয়ালদাসের দাদা রুইদাস মজুমদার দেহ নিতে আসায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। কথাবার্তা শুনে সন্দেহ হওয়ায় রুইদাসকে কিছু প্রমাণপত্র আনতে বলে পুলিশ। তার পরে চরপাতাইহাটি গ্রামে গিয়ে কয়েক জন বাসিন্দাকে মৃতদেহের ছবি দেখালে তাঁরা সকলেই জানান, এই যুবক দয়ালদাস নয়।
পুলিশ জানায়, গ্রামবাসীরা জানান, দয়ালদাস গাড়ি চুরি, চাকরি দেওয়ার নামে মোটা টাকা হাতানো-সহ নানা দুষ্কর্মে অভিযুক্ত ও আট মাস এলাকাছাড়া। এর পরেই পুলিশ বাড়ি থেকে রুইদাসকে ডেকে নিয়ে গিয়ে জেরা শুরু করে। পুলিশের দাবি, মৃত যুবক তার ভাই নয় বলে জেরায় সে স্বীকার করে। ষড়যন্ত্র করে খুন ও প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। খুনে জড়িত সন্দেহে দয়ালদাস, তার মা ও এক বিধবা বৌদিকে খোঁজা হচ্ছে বলে পুলিশ জানায়।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাস্তার পাশ থেকে মেলা মৃতদেহের পরিচয় জানা যায়নি। এ ব্যাপারে নানা থানায় খবর পাঠানো হয়েছিল। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পূর্বস্থলী থানায় কর্মরত এক পুলিশকর্মীর বাড়ি জিরাটে। নিজের এলাকায় এক যুবকের নিখোঁজ রয়েছে শুনে বিশ্বরম্ভা থেকে উদ্ধার মৃত যুবকের ছবি এলাকাবাসীকে দেখান তিনি। তা দেখেই পোস্টঅফিস পাড়ার বাসিন্দারা অভিজিৎকে চিনতে পারেন। বৃহস্পতিবার অভিজিতের স্ত্রী জ্যোৎস্নাদেবী বর্ধমান মেডিক্যালে গিয়ে দেহ শনাক্ত করেন। গত ১৫ মার্চ থেকে তাঁর স্বামী নিখোঁজ ছিলেন বলে পুলিশকে জানান তিনি।
অভিজিতের প্রতিবেশীরা জানান, গরিব পরিবারের ছেলে অভিজিৎ পাইকারি বাজার থেকে জুতোর মালপত্র দোকানে পৌঁছনো-সহ নানা রকম কাজ করে সংসার চালাতেন। তাঁর স্ত্রী পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁদের একটি বছর তিনেকের ছেলে ও দু’বছরের মেয়ে রয়েছে। প্রতিবেশীদের দাবি, ১৫ মার্চ অভিজিৎ যেখানে জুতো পৌঁছনোর কথা ছিল, তা পৌঁছে দেয়। তার পরে আর বাড়ি ফেরেনি। এ ব্যাপারে বলাগড় থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরিও করে পরিবার।
পোস্টঅফিস পাড়ার বাসিন্দারা পুলিশকে জানিয়েছেন, যে দয়ালদাসের খোঁজ চলছে, গত জুলাই থেকে সে বাড়ির লোকজনকে নিয়ে অভিজিতের জ্যাঠামশাই অজিত দে-র জমিতে অস্থায়ী বাসস্থান গড়ে থাকছিল। ওই এলাকায় দয়ালদাস নিজেকে শেয়ার বাজারের ব্রোকার বলে পরিচয় দিত। অভিজিৎ নিখোঁজ হওয়ার পরেই সে বেপাত্তা হয়ে যায়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, নানা অভিযোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য আইনের চোখে নিজেকে মৃত প্রমাণ করতে খুন করে অভিজিতের পকেটে নিজের ভোটার কার্ড রেখে ফেলে রেখে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে দয়ালদাসই। কালনা মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিক শুক্রবার বলেন, “দয়াল-সহ তিন অভিযুক্ত ধরা পড়লেই কী ভাবে এই যুবকের মৃত্যু হয়েছে, তা পরিষ্কার হবে বলে মনে করা হচ্ছে। শীঘ্র তাদের ধরা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.