বাম জমানাতেও যে কায়দায় পূর্বস্থলীতে নিজের রাজনৈতিক জমি শক্ত করেছিলেন, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে গোটা বর্ধমানের দখল পেতে সেই মডেলই কাজে লাগাতে চাইছেন স্বপন দেবনাথ।
পূর্বস্থলীতে স্বপনবাবুর ধারাবাহিক সাফল্যই তাঁকে ধীরে-ধীরে ক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে তুলে নিয়ে গিয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত জেতা দিয়ে যিনি শুরু করেছিলেন, তিনিই আজ রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী। তৃণমূলের বর্ধমান গ্রামীণ এলাকার জেলা সভাপতির পদেও তাঁকে বসানো হয়েছে। যে বর্ধমানে কিছু দিন আগেও সিপিএমই শেষ কথা ছিল, এখনও জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে বেশির ভাগ পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েত অন্তত খাতায়-কলমে বামেদের দখলে, সেখানে জোড়াফুল ফোটানোর দায়িত্ব অনেকটা তাঁরই কাঁধে।
এই যুদ্ধ জিততে স্বপনবাবু তাঁর এত দিনের চেনা পথেই হাঁটতে চাইছেন। তাঁর কথায়, “সিপিএমের আমলেই আমরা দলের সংগঠন মজবুত করেছিলাম। বর্ধমান জেলা পরিষদ দখলের জন্য সেই পদ্ধতিই অনুসরণ করব।” স্বপনবাবুর নিজের বিধানসভা কেন্দ্র পূর্বস্থলী (দক্ষিণ) এলাকার পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতি ১৯৯৮ সাল থেকেই তৃণমূলের দখলে রয়েছে। “সমস্ত বিধায়ক ও শাখা সংগঠনগুলির প্রধানদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যার যেখানে দায়িত্ব, তাকে সেখানেই কাজ করতে হবে। তার বাইরে কিছু করতে গেলে দল ব্যবস্থা নেবে” বলেন স্বপনবাবু।
কী করে ভোট করতে হয়, সে ব্যাপারে স্বপনবাবুর অভিজ্ঞতা দীর্ঘ। ১৯৯৩ সালে তাঁরই নেতৃত্বে পূর্বস্থলীর শ্রীরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে জয় পেয়েছিল কংগ্রেস। ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আলাদা দল গড়লে তিনিও তাঁর অনুগামী হন। সে বছরই তাঁর নেতৃত্বে পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতি দখল করে তৃণমূল। বাম জমানাতেও পরপর তিনবার ওই পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতা ধরে রাখে তারা। ২০০৬ সালে তৎকালীন নাদনঘাট কেন্দ্র থেকে স্বপনবাবু প্রথম বার বিধানসভায় জেতেন। গত বিধানসভা ভোটে আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে নাদনঘাট আসনটি বিলুপ্ত হয়ে পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্র হয়। তাতে অবশ্য স্বপনবাবুর আসন টলেনি। তিনি ফের জেতেন।
কাজেই এ বারে শাসকদলের নেতা হিসেবে মাঠে-ময়দানে মর্যাদার লড়াই লড়তে নেমে এত দিনের শিক্ষা কাজে লাগাচ্ছেন প্রবীণ বিধায়ক। তৃণমূল সূত্রের খবর, ভোট পরিচালনা ও নির্বাচন সংক্রান্ত প্রচারের জন্য দু’টি পৃথক কমিটি গড়া হয়েছে। দলের বিধায়ক ও শাখা সংগঠনের নেতাদের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বপনবাবু বলেন, “যেখানে আমাদের বিধায়ক নেই, সেই সব এলাকায় পাশের বিধানসভা কেন্দ্রের আমাদের যে সব বিধায়ক আছেন, তাঁদের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।” ছাত্র-যুব-যুবা নেতাদেরও বাড়তি দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে। বর্ধমান গ্রামীণ এলাকায় জেলা পরিষদের যে ৬৭টি আসন রয়েছে, তা জিততে গ্রামে-গ্রামে গিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে ওই তিন গণসংগঠনের নেতাদের।
তৃণমূল সূত্রের খবর, জেলা পরিষদের সব আসনেই প্রার্থীর নাম রাজ্যস্তর থেকে ঠিক করা হবে। পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী কারা হবে, তা নির্ধারণ করতে জেলার সর্বত্র দলীয় বৈঠক করতে বলা হয়েছে। স্বপনবাবু মনে করেন, “দলের কর্মীরা নেতৃত্বের নির্দেশ মানলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, “কেউ নির্দেশ মানতে অস্বীকার করলে, তাঁর বিরুদ্ধে দলের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বামেরা অবশ্য স্বপনবাবু বা তাঁর দলকে আমল দিতে রাজি নয়, অন্তত প্রকাশ্যে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার বরং দাবি করেন, “সন্ত্রাসমুক্ত ভোট হলে আমরাই ফের জেলা পরিষদ দখল করব।” |