পুরনো বেসরকারি সংস্থার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। নতুন সংস্থাও কাজের বহর কমিয়ে দিয়েছে। তার জেরে কাজ হারিয়েছেন দুর্গাপুরে জাতীয় সড়কের ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে কর্মরত ৩৩ জন ঠিকাকর্মী। কাজ ফিরে পেতে মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। মহকুমাশাসক আয়েষারানী আহমেদ জানান, বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে।
জাতীয় সড়কে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে নিকটবর্তী থানা থেকে পুলিশ আসতে সময় লাগে। দ্রুত দুর্ঘটনাগ্রস্তদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে বিলম্ব হয়। সেক্ষেত্রে জাতীয় সড়কের নিজস্ব ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় ভূতল পরিবহন মন্ত্রকের হিসেবে, ২ নম্বর জাতীয় সড়কের পানাগড় থেকে বরাকর সেতু পর্যন্ত অংশটি দেশের অন্যতম অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসাবে পরিচিত। বছরে গড়ে ২০০টি দুর্ঘটনা ঘটে। এই রাস্তাটুকুর জন্য দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স, দুটি হাইওয়ে পেট্রোল গাড়ি ও দু’টি ক্রেন বরাদ্দ করে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। অ্যাম্বুল্যান্স ও পেট্রোল জাতীয় সড়কে ঘুরে বেড়ায়। দুর্ঘটনার খবর পেলেই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছিয়ে উদ্ধারের কাজ শুরু করেন কর্মীরা। দুর্ঘটনাগ্রস্তদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয় অ্যাম্বুল্যান্স মারফৎ। অন্য দিকে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি সরানোর কাজে লাগে ক্রেন ও হাইওয়ে পেট্রোল গাড়ি। একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে এই পরিষেবা দিয়ে থাকেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। এত দিন সেখানে৩৩ জন ঠিকা কর্মী কাজ করতেন।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরই দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত নানা জটিলতায় নতুন সংস্থা দায়িত্ব নেয়নি। পরিষেবাও বন্ধ ছিল। বাধ্য হয়ে পুরনো সংস্থাকেই মেয়াদ বাড়িয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব দেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। এরপর এলাহাবাদের একটি সংস্থা দায়িত্ব নেয়। অভিযোগ, তার পর থেকেই কাজ হারিয়েছেন আগের ৩৩ জন কর্মী। সরোজ কেশ, অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী’রা বলেন, “আমরা কেউ ৮ বছর, কেউ ১০ বছর ধরে কাজ করছি। আগাম কিছু না জানিয়েই হঠাৎ কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” দ্রুত কাজ ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। আইএনটিটিউসি অনুমোদিত ‘এনএইচএআই ২ ইনসিডেন্টস ডিপার্টমেন্ট কন্ট্রাক্টর ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’ এর কার্যকরী সভাপতি সমীর মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বাইরে থেকে নতুন লোক এনে কাজ করানো হচ্ছে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা অভিজ্ঞ কর্মীরা বসে রয়েছেন।জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থাই বিষয়টি দেখবে।
আইএনটিটিইউসি’র জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, দু’টির জায়গায় একটি করে অ্যাম্বুল্যান্স, পেট্রোল গাড়ি ও ক্রেন কাজ করছে। সেগুলি আসানসোলে দাঁড়িয়ে থাকে। পানাগড়ে কোনও দুর্ঘটনা হলে আসতে অনেকটা সময় লাগবে। বরাকরের দিকে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলেও একই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তাঁর আশঙ্কা। বিষয়টি দেখার আবেদন জানিয়ে মহকুমাশাসককে একটি চিঠি দিয়েছেন। ‘অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র দুর্গাপুর শাখার কর্মকর্তা সমীর বসুর বক্তব্য, “দুর্ঘটনার পরে দুর্ঘটনাগ্রস্তকে যত দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া যায়, তার উপরে অনেকটাই আরোগ্যের সম্ভাবনাও নির্ভর করে। দেরি হলে প্রাণ সংশয়ও হতে পারে। সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে অত্যন্ত জরুরি এই পরিষেবা পূর্ণমাত্রায় বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন তিনি। দুর্গাপুরে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিক বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। মহকুমাশাসকের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ১৫ মার্চ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি এসে না পৌঁছানোয় সমাধানসূত্র বেরোয়নি। শুক্রবার তিনি বলেন, “এপ্রিলের শুরুতেই নতুন করে বৈঠক ডেকে বিষয়টির নিষ্পত্তি করা হবে।” |